মাগুরা মহম্মদপুর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নে রাড়ীখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় গত বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহ জোহান পার্ক শিক্ষা সফরে গিয়ে কয়েকজন ছাত্ররা শিক্ষকদের আদেশ না শুনে কথা কাটাকাটি করে। সোমবার ১৩ ফেব্রুয়ারী দুপুর ২ টার সময় রাড়ীখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবু জাফর বিশ্বাসের সাথে শিক্ষা সফর বিষয় নিয়ে কথা হলে। তিনি জানান কিছু ছাত্ররা কুষ্টিয়ার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর শিলাইদহ পিকনিক কর্ণারে যাওয়ার জন্য জেদ করে ছিলো। কিছু ছাত্ররা ঝিনাইদহ জোহান পার্কে ৪ টারও বেশি সময় ধরে ঘুরা ফেরা করায় আমরা কুষ্টিয়ার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করি।
১৫০ জন লোকজন নিয়ে কুষ্টিয়া যেতে রাত হবে বিধায় আমরা শিক্ষক ও সভাপতি মিলে সিদ্ধান্ত নেই কুষ্টিয়া যাওয়া যাবে না। এই কথা শুনে কিছু উশৃংখল স্বভাবের ছাত্ররা শিক্ষকদের অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে এবং তাদের কথা না শুনে পার্কের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তখন আমরা শিক্ষকরা সবাই একসাথে সভাপতি আব্দুস সালাম কে বলা হয় ছাত্ররা আমাদের কথা শুনছে না আপনি বিষয়টি দেখেন।
তিনি আরও জানান শিক্ষা সফরের সুযোগকে কেন্দ্র করে একটি উস্কানীমূলক মহল গতকাল বহিষ্কার প্রধান শিক্ষককে আইনকে অবমাননা করে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা জোর করে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।
ঘটনার এবিষয়ে দশম শ্রেণির ছাত্র প্রান্ত বলে আমাদেরকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ নিয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু আমাদের ঝিনাইদহ পার্কে দুপুরের খাবার দেওয়ার পর আমরা কয়েকজন পার্কের ভিতর আসতে দেরি হয়েছে বলে। আমাদেরকে অনেক মানুষের সামনে সভাপতি অপমান করেছে বাঁশ দিয়ে পিটিয়েছে ও বাঁশ নিয়ে দাবড়িয়েছে। এরপর গাড়ির মধ্যে নিয়ে সবাইকে চড় মারে। তবে এইসব ছাত্রদের মধ্যে তেমন কোন মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত শারীরিক জখম পরিলক্ষিত হয়নি বা দেখতে পাওয়া যায় নাই।
গতকাল স্কুলের চেয়ারের প্রসঙ্গে কথা হলে সাময়িক অব্যাহতি প্রধান শিক্ষক জানান স্কুলে যায়নি আমি, সভাপতি তো আমাকে প্রতি মাসে বেতন দিচ্ছে। আমি ডিসি আশরাফুল আলম এর কাছে ১২ অক্টোবর ২০২২ তারিখে স্মারক ৩১৯(৬) অভিযোগ দিয়ে ছিলাম। ডিসি সরেজমিনে তদন্ত করে টিএনও, জেলা শিক্ষা অফিসার সরেজমিনে তদন্ত দাখিল করে ডিসি রিপোর্ট করেছে। প্রবিধান লংঘন করে প্রবিধান লংঘিত হয়েছে অতএব কমিটি বিলুপ্ত করার জন্য বোর্ডকে অবহিত করেছেন।
সভাপতি আব্দুস সালাম জানান আসলে বিষয়টা তেমন একটা কিছু না এইটারে ঘোলাচ্ছে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মত কাজ করতেছে বহিস্কৃত হেড মাস্টার আজাদ। আমরা স্কুল থেকে পিকনিকে গিয়েছি ঝিনাইদহ জোহান পার্ক কয়েকজন ছাত্রদের দাবি ছিলো আমরা আরোও একটু দূরে যাবো। সেই ক্ষেত্রে আমরা বলেছি যদি সময় থাকে তাহলে কুষ্টিয়ার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ী যাব এজন্য তাদের ৩-৪ টার সময় গাড়িতে আসতে বলি কিন্তু ছাত্ররা পার্কের ভিতর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকে এবং শিক্ষক ও কমিটির সদস্যরা তাদের খুজতে বের হলে তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসে আমাকে বললো তাদের কথা কেউ শুনছে না, আপনি সভাপতি গিয়ে নিয়ে আসেন। তখন আমি তাদের কথা মতো ছাত্রদের নিয়ে আসতে গেলে তারা আমার উপস্থিতি টের পেয়ে দৌড়ে সবাই পালিয়ে যায়। প্রায় ২ ঘন্টা পর তাদেরকে গাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসি।
এরপর রাত অনুমান ৮ সময় আমাদের গ্রাম রাড়ীখালী ঈদগাহের ময়দানে গাড়ি পৌছালে গাড়ি থেকে নামার পর বহিস্কৃত প্রধান শিক্ষকের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীর দল ওঁৎ পেতে থেকে আমাদের উপর হামলা চালায়। তার পরদিন শুক্রবার আমরা সামাজিক ভাবে বিষয়টি নিয়ে আপোষ করি। শিক্ষা সফরে ৫০০ টাকা চাঁদায় গাড়ি ভাড়া, সকালে নাস্তা, পার্কের প্রবেশ ফি, দুপুরের খাবার ইত্যাদি সব খরচ আমরা হিসাব করবো ইতিমধ্যে মাস্টারদের সেই শেখানো বা তাদের ছাত্রদের দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উস্কায়ে দিয়ে সভাপতির পদত্যাগ চাই এবং সভাপতি মানি না মানবো না শ্লোগান দিতে থাকে। ঐ সময়ে আমার মোটরসাইকেলটি স্কুলের অফিসের সামনে থাকায় ছাত্ররা ভাঙ্চুর করে।
এই ভাঙচুরের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলো এসএসসি পরীক্ষার্থী মনির, মোজাহিদ, শাহজালাল, সুজন, দশম শ্রেণির ছাত্র প্রান্ত, তাসিম, শাফায়েত, নবম শ্রেণির ছাত্র হাসিব, রিফাত, রমজান। সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন ঝিনাইদহ জোহান পার্ক থেকে তাদেরকে শিক্ষকদের ও কমিটির সদস্যদের কথা না শুনা এবং আমাকে ২ ঘন্টা হয়রানির জন্য বাঁশ দিয়ে তাদেরকে ভয় দেখিয়ে ছিলাম গাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য কোন গুরুতর শারীরিক জখম বা আঘাত করি নাই।
তিনি বলেন তারা তো আমার স্কুলের ছাত্র এবং আমার সন্তান সমতূল্য। তিনি আরও বলেন এই সামান্য ঘটনা জটিলতার জাল পাকাচ্ছে বহিস্কৃত প্রধান শিক্ষক আজাদ। তাকে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে স্মারক নং- রা, মা, বি ৬/২০২২ চাকরি বিধিমালা ১৯৭৯ ধারা-১১ এমপিও নীতিমালা ১৮.১ এর (গ) ধারা অনুযায়ী অপরাধ করেছেন। ১৯৭৯ ধারা ১৩(২) মোতাবেক সুবিধাবী পাবেন। এজন্য আবু জাফর বিশ্বাসকে প্রধান শিক্ষক দেওয়া হয়। ১৬ মার্চ ২০২০ তারিখে স্মারক ১৫৭ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক আজাদ এর বিরুদ্ধে ভুয়া অভিজ্ঞতা দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক হয়। গত ২ মার্চ ২০০০ তারিখে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে ১ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে এমপিও হন। আজাদ এর অভিজ্ঞতার সনদ ও তার ১ম এমপিও শীট পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হতে হলে এমপিও থেকে ১২ বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন কিন্তু সেটা ৯ বছর ৭ মাস।
ঐ সময়ে মাগুরা জেলা শিক্ষা অফিসার ছিলেন রণজিৎ কুমার মজুমদার। কারন দর্শানোর প্রেরণ হয় আজাদের বিরুদ্ধে ১৫ কর্ম দিবস যেখানে লেখা ছিলো অভিজ্ঞতা বিহীন ভাবে নিয়োগ ও মিথ্যা তথ্য প্রদান করে এমপিও ভুক্ত হওয়ায় ১৮.১ এর (গ) স্মারক- ৩২২ তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১ সহকারী পরিচালক মাধ্যমিক-২ দূর্গা রানী সিকদার। মাউশির ৮ জুন ২০২২ তারিখে স্মারক নং- ৪জি.৭১.ম/০৯/৭৯০ কারণ দর্শানো জবাব প্রেরণ সংক্রান্ত ১৫ কর্মদিবস। এমতাবস্থায় মাউশির স্মারক নং- ৪জি-৭১-ম/০৯/৩২২ তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১ মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ ৫ কর্মদিবসে ধার্য করেন। কারণ দর্শানো প্রসঙ্গে ৩২১ স্মারক ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোর এর বিদ্যালয় পরিদর্শক মোঃ সিরাজুল ইসলাম ভিজিট করেন।
এছাড়াও গোপন সূত্র থেকে জানা যায় শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য বিবরনী (প্যাটার্ন ভিত্তিক) সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) মোঃ কামরুল ইসলাম ২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবরে যোগদান করেছেন। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নামের তালিকায় ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারী তারিখে কামরুল ইসলাম সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) ও বিউটি সাহা সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) পদে দেখা যায়। একই ব্যাক্তি ২ পদে কিভাবে চাকরি করে এবিষয় সম্পর্কে সভাপতি আব্দুস সালাম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আপনারা সাংবাদিক বিষয়টি পত্রিকায় ও মিডিয়ায় প্রকাশ করেন।
প্রিন্ট