ঢাকা , শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo তানোরে বিজ্ঞান শিক্ষার নাজুক অবস্থা Logo ৫আগস্ট গণঅভ্যুত্থান না হলে স্বাধীনভাবে কথা বলতে সভাসমাবেশ করতে পারতাম না -দুলু Logo ২৯ বছরের অবদান ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেঃ -প্রফেসর ড. সন্দীপক মল্লিক Logo খোকসায় মুক্তিযোদ্ধা দিয়ানত আলী মাস্টার ইন্তেকাল, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন Logo গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলায় স্বামী গ্রেপ্তার Logo ফরিদপুরে আইডিইবির উদ্যোগে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত ‌ Logo এম এ আজিজ গোল্ড কাপ ফুটবলের ‌ ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত Logo ফ্যাসিবাদের পতন হলেও দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়নি — হারুন অর রশীদ Logo বেনাপোলে বেগম খালেদা জিয়া ও রকিবুল ইসলাম বকুলের সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল Logo হাতিয়ায় শহীদ রিজভীর কবর জিয়ারত করলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

আইএমএফ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ পেল বাংলাদেশ

-ছবিঃ সংগৃহীত।

দীর্ঘ আলোচনা ও বোঝাপড়ার পর অবশেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাড়ে চার বিলিয়ন বা ৪৫০ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৪৭ হাজার ২০৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৫ টাকা হিসাবে) ঋণ পেল বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফ কার্যালয়ে স্থানীয় সময় সোমবার অনুষ্ঠিত নির্বাহী বোর্ডের সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রস্তাবটি অনুমোদনের বিষয়টি আইএমএফ ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এই অনুমোদনের ফলে সাত কিস্তির ঋণের প্রথমটি ফেব্রুয়ারিতেই পেতে পারে বাংলাদেশ।ঋণ অনুমোদনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা অবশ্যই আইএমএফের প্রতি এই ঋণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিশেষ করে আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ, মিশনপ্রধান রাহুল আনন্দসহ যে দলটি এই ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ সফর করেছিল, তাদের প্রতি জানাই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যাঁরা এই ঋণ প্রগ্রাম নিয়ে কাজ করেছেন, তাঁদের প্রতিও রইল আমার কৃতজ্ঞতা।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেছিলেন যে আইএমএফ হয়তো বা আমাদের এই ঋণ দেবে না। তাঁরা ভেবেছিলেন, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাগুলো দুর্বল, তাই আইএমএফ এ ঋণ প্রদান থেকে বিরত থাকবে। এ ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে এটাও প্রমাণিত হলো যে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাগুলো শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এবং অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো।’৪২ মাসের চুক্তিতে সরকারের নেওয়া ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচিতে’ সহায়তা হিসেবে আইএমএফের এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) এবং এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি থেকে ৩২০ কোটি ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় পাবে বাকি ১৩০ কোটি ডলার। প্রাথমিক সমঝোতা অনুযায়ী শেষ কিস্তি বাংলাদেশ হাতে পাবে ২০২৬ সালে। সুদের হার হবে ২.২ শতাংশ।আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ তাঁর ঢাকা সফরের সময় ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেদিন তাঁদের মধ্যে ঋণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে গত নভেম্বরে ঢাকায় কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকে প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছে আইএমএফ। সেই ঋণচুক্তির শর্তসহ খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ার মধ্যেই বাংলাদেশ সফর করেন আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক। সে সময় এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ঢাকার আলোচনায় এই ঋণ কর্মসূচির মূল বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিয়েছেন তাঁরা।

তিনি বলেন, রাজস্ব আহরণ বাড়ানো, আরো দক্ষ একটি আর্থিক খাত গড়ে তোলার মতো দীর্ঘদিনের চালেঞ্জগুলো আলোচনায় এসেছে। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ ও রপ্তানি বহুমুখীকরণে উৎসাহ দিলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো সহনশীল করে তুলতে এবং দীর্ঘমেয়াদি, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই পবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করবে।তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের পরিকল্পনা নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি, যা সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। জলবায়ু বিনিয়োগে বাংলাদেশের চাহিদা পূরণে সাশ্রয়ী ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পাশাপাশি আমদানিনির্ভর জলবায়ু বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোও আইএমএফের আরএসএফের (রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি) লক্ষ্য।’কভিড মহামারির ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বড় ধরনের চাপে পড়েছে; ডলারের বিপরীতে মান হারিয়ে চলছে টাকা, মূল্যস্ফীতিও পৌঁছেছে উদ্বেগজনক পর্যায়ে। রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানিতে লাগাম টানায় অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে; জ্বালানিসংকটের মুখে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের মতো দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিও বাংলাদেশের সামনে রয়েছে।এমন পরিস্থিতিতে গত জুলাই মাসে আইএমএফের কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গত ২৬ অক্টোবর ঢাকায় আসে। দুই সপ্তাহ সরকারে বিভিন্ন দপ্তর, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পর ঋণের বিষয়ে প্রাথমিক সমঝোতার কথা জানানো হয় সরকারের তরফ থেকে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ৯ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইএমএফ সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি। এই অর্থ বাংলাদেশ পাবে সাত কিস্তিতে। সব ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারিতেই প্রথম কিস্তির ৩৫২.৩৫ মিলিয়ন ডলার তারা ছাড়তে পারে।

বাংলাদেশ যে এবারই প্রথম আইএমএফ থেকে ঋণ নিচ্ছে তা নয়। ছোট-বড় আকার মিলিয়ে সংস্থাটি থেকে মোট ১০ বার ঋণ নিয়েছে আগে। প্রথমবার নেয় ১৯৭৪ সালে। এরপর ১৯৮০-৯০ সময়ে ঋণ নেওয়া হয় পাঁচবার। ১৯৯০ সালে নেওয়া ঋণের বিপরীতে আইএমএফের শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) চালু করা। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান তা সফলভাবেই কার্যকর করেছিলেন। বাণিজ্য উদারীকরণসহ ব্যাংক খাতের সংস্কারের শর্তও ছিল তখন। এর ফলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়তে থাকে এবং আসতে থাকে বিদেশি বিনিয়োগ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানিও বাড়তে থাকে।

আইএমএফের ঋণ পাওয়ার অপেক্ষায় আছে সংকটে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার আরো দুই দেশ শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। বৈশ্বিক সংস্থাটির ঋণ পেতে দেশ দুটি সব শর্ত মেনে নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া আইএমএফের প্রস্তাবিত ঋণ প্যাকেজের পরিমাণ ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার। পরিমাণে এটি ভারতের দেওয়া সহায়তার চেয়ে অনেক কম। তবে আইএমএফের এই ঋণ পাওয়া শ্রীলঙ্কার জন্য প্রতীকীভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আইএমএফ যদি শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেয়, তাহলে সারা বিশ্বের কাছে বার্তা যাবে যে আইএমএফের ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা শ্রীলঙ্কার আছে। তখন বিশ্ব শ্রীলঙ্কার পাশে আরো জোরালোভাবে দাঁড়ানোর এবং সহযোগিতা করার সাহস পাবে।

ভঙ্গুর অর্থনীতি সচল করতে বিপুল ঋণ প্রয়োজন পাকিস্তানেরও। আর এই ঋণ পেতে আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু ঋণের জন্য কঠিন সব শর্ত দিয়েছিল আন্তর্জাতিক এই সংস্থা। প্রথমে সেগুলো মেনে নিতে গড়িমসি করলেও এখন সব শর্ত মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শর্ত মেনে নেওয়ার অংশ হিসেবে দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্র মিলিয়ে নতুন ২০০ বিলিয়ন ডলার কর আরোপ করা হবে, যার মধ্যে থাকবে বন্যা করও। এ নিয়ে ১০০ বিলিয়ন ডলারের দুটি অধ্যাদেশের খসড়াও তৈরি করেছে দেশটি।ডন আরো জানিয়েছে, আইএমএফের চাহিদা অনুযায়ী সরকার বিদ্যুতের ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া রপ্তানিজাত কাঁচামালের ওপর কর, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং গ্যাসের ওপর শুল্ক আরোপের চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে। আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল আজ মঙ্গলবার পাকিস্তানে আসার কথা। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ শর্ত মেনে সেগুলো বাস্তবায়ন করার নিশ্চয়তা দেওয়ার পরই প্রতিনিধি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি।

প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

তানোরে বিজ্ঞান শিক্ষার নাজুক অবস্থা

error: Content is protected !!

আইএমএফ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ পেল বাংলাদেশ

আপডেট টাইম : ০৭:০২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৩
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা ডেস্ক :
দীর্ঘ আলোচনা ও বোঝাপড়ার পর অবশেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাড়ে চার বিলিয়ন বা ৪৫০ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৪৭ হাজার ২০৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৫ টাকা হিসাবে) ঋণ পেল বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফ কার্যালয়ে স্থানীয় সময় সোমবার অনুষ্ঠিত নির্বাহী বোর্ডের সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রস্তাবটি অনুমোদনের বিষয়টি আইএমএফ ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এই অনুমোদনের ফলে সাত কিস্তির ঋণের প্রথমটি ফেব্রুয়ারিতেই পেতে পারে বাংলাদেশ।ঋণ অনুমোদনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা অবশ্যই আইএমএফের প্রতি এই ঋণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিশেষ করে আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ, মিশনপ্রধান রাহুল আনন্দসহ যে দলটি এই ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ সফর করেছিল, তাদের প্রতি জানাই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যাঁরা এই ঋণ প্রগ্রাম নিয়ে কাজ করেছেন, তাঁদের প্রতিও রইল আমার কৃতজ্ঞতা।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেছিলেন যে আইএমএফ হয়তো বা আমাদের এই ঋণ দেবে না। তাঁরা ভেবেছিলেন, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাগুলো দুর্বল, তাই আইএমএফ এ ঋণ প্রদান থেকে বিরত থাকবে। এ ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে এটাও প্রমাণিত হলো যে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাগুলো শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এবং অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো।’৪২ মাসের চুক্তিতে সরকারের নেওয়া ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচিতে’ সহায়তা হিসেবে আইএমএফের এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) এবং এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি থেকে ৩২০ কোটি ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় পাবে বাকি ১৩০ কোটি ডলার। প্রাথমিক সমঝোতা অনুযায়ী শেষ কিস্তি বাংলাদেশ হাতে পাবে ২০২৬ সালে। সুদের হার হবে ২.২ শতাংশ।আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ তাঁর ঢাকা সফরের সময় ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেদিন তাঁদের মধ্যে ঋণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে গত নভেম্বরে ঢাকায় কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকে প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছে আইএমএফ। সেই ঋণচুক্তির শর্তসহ খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ার মধ্যেই বাংলাদেশ সফর করেন আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক। সে সময় এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ঢাকার আলোচনায় এই ঋণ কর্মসূচির মূল বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিয়েছেন তাঁরা।

তিনি বলেন, রাজস্ব আহরণ বাড়ানো, আরো দক্ষ একটি আর্থিক খাত গড়ে তোলার মতো দীর্ঘদিনের চালেঞ্জগুলো আলোচনায় এসেছে। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ ও রপ্তানি বহুমুখীকরণে উৎসাহ দিলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো সহনশীল করে তুলতে এবং দীর্ঘমেয়াদি, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই পবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করবে।তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের পরিকল্পনা নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি, যা সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। জলবায়ু বিনিয়োগে বাংলাদেশের চাহিদা পূরণে সাশ্রয়ী ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পাশাপাশি আমদানিনির্ভর জলবায়ু বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোও আইএমএফের আরএসএফের (রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি) লক্ষ্য।’কভিড মহামারির ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বড় ধরনের চাপে পড়েছে; ডলারের বিপরীতে মান হারিয়ে চলছে টাকা, মূল্যস্ফীতিও পৌঁছেছে উদ্বেগজনক পর্যায়ে। রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানিতে লাগাম টানায় অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে; জ্বালানিসংকটের মুখে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের মতো দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিও বাংলাদেশের সামনে রয়েছে।এমন পরিস্থিতিতে গত জুলাই মাসে আইএমএফের কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গত ২৬ অক্টোবর ঢাকায় আসে। দুই সপ্তাহ সরকারে বিভিন্ন দপ্তর, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পর ঋণের বিষয়ে প্রাথমিক সমঝোতার কথা জানানো হয় সরকারের তরফ থেকে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ৯ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইএমএফ সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি। এই অর্থ বাংলাদেশ পাবে সাত কিস্তিতে। সব ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারিতেই প্রথম কিস্তির ৩৫২.৩৫ মিলিয়ন ডলার তারা ছাড়তে পারে।

বাংলাদেশ যে এবারই প্রথম আইএমএফ থেকে ঋণ নিচ্ছে তা নয়। ছোট-বড় আকার মিলিয়ে সংস্থাটি থেকে মোট ১০ বার ঋণ নিয়েছে আগে। প্রথমবার নেয় ১৯৭৪ সালে। এরপর ১৯৮০-৯০ সময়ে ঋণ নেওয়া হয় পাঁচবার। ১৯৯০ সালে নেওয়া ঋণের বিপরীতে আইএমএফের শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) চালু করা। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান তা সফলভাবেই কার্যকর করেছিলেন। বাণিজ্য উদারীকরণসহ ব্যাংক খাতের সংস্কারের শর্তও ছিল তখন। এর ফলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়তে থাকে এবং আসতে থাকে বিদেশি বিনিয়োগ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানিও বাড়তে থাকে।

আইএমএফের ঋণ পাওয়ার অপেক্ষায় আছে সংকটে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার আরো দুই দেশ শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। বৈশ্বিক সংস্থাটির ঋণ পেতে দেশ দুটি সব শর্ত মেনে নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া আইএমএফের প্রস্তাবিত ঋণ প্যাকেজের পরিমাণ ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার। পরিমাণে এটি ভারতের দেওয়া সহায়তার চেয়ে অনেক কম। তবে আইএমএফের এই ঋণ পাওয়া শ্রীলঙ্কার জন্য প্রতীকীভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আইএমএফ যদি শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেয়, তাহলে সারা বিশ্বের কাছে বার্তা যাবে যে আইএমএফের ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা শ্রীলঙ্কার আছে। তখন বিশ্ব শ্রীলঙ্কার পাশে আরো জোরালোভাবে দাঁড়ানোর এবং সহযোগিতা করার সাহস পাবে।

ভঙ্গুর অর্থনীতি সচল করতে বিপুল ঋণ প্রয়োজন পাকিস্তানেরও। আর এই ঋণ পেতে আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু ঋণের জন্য কঠিন সব শর্ত দিয়েছিল আন্তর্জাতিক এই সংস্থা। প্রথমে সেগুলো মেনে নিতে গড়িমসি করলেও এখন সব শর্ত মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শর্ত মেনে নেওয়ার অংশ হিসেবে দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্র মিলিয়ে নতুন ২০০ বিলিয়ন ডলার কর আরোপ করা হবে, যার মধ্যে থাকবে বন্যা করও। এ নিয়ে ১০০ বিলিয়ন ডলারের দুটি অধ্যাদেশের খসড়াও তৈরি করেছে দেশটি।ডন আরো জানিয়েছে, আইএমএফের চাহিদা অনুযায়ী সরকার বিদ্যুতের ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া রপ্তানিজাত কাঁচামালের ওপর কর, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং গ্যাসের ওপর শুল্ক আরোপের চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে। আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল আজ মঙ্গলবার পাকিস্তানে আসার কথা। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ শর্ত মেনে সেগুলো বাস্তবায়ন করার নিশ্চয়তা দেওয়ার পরই প্রতিনিধি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি।

প্রিন্ট