মাগুরা জেলা কারাগারে গত ১ বছরে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্নরুপ ধারণ করেছে। বন্দিদের শিষ্টাচার, মার্জিত, সুন্দর ও মানবিক জীবনে ফেরাতে মাগুরা জেলা কারাগার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত চিত্র পরিস্ফুটিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালে এই কারাগারটি জেলা কারাগারে রুপান্তরিত হয়। ২০০১ সালে মাগুরা শহর থেকে ৩ কি.মি. পশ্চিমে মাগুরা-ঝিনাইদহ জাতীয় মহাসড়ক সংলগ্ন রাস্তার উত্তরপার্শ্বে ৬.৩৯৪ একর জমির ওপর নির্মিত হয়। কারাগারটি সাবজেল থেকে জেলা কারাগারে রুপান্তরিত হয়েছে।
মাগুরা জেলা কারাগারের জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধা জানান, মাগুরা জেলা কারাগারে ২৫ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল রয়েছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী আছে। এর ফলে তাৎক্ষণিক ভাবে বন্দীদের জরুরি ভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
কারা অভ্যান্তরে মাদক সেবনের বিষয়ে জানতে চাইলে জেল ফেরত কয়েদিরা জানান, মাদকের বিষয়ে জেলার অনেক কঠোর। তিনি প্রায়ই কারারক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে মাদক অভিযান চালান এবং মাদক সেবনের কুফল তুলে ধরে বক্তব্য দেন। সেই সাথে মাদকাসক্ত বন্দীদেরকে মোটিভেশনাল ট্রেনিং দেওয়া হয়।
অন্যদিকে কারা অভ্যন্তরে পরিপাটি পরিবেশ, সুন্দর সুন্দর দেয়াল লিখন, বিভিন্ন সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কাজের দৃশ্য এবং শিক্ষণীয় নানা আলপনা, বন্দিদের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় পানির সুব্যবস্থা, শিশুপার্ক, রান্নাঘর, ক্যান্টিন, পতাকা মঞ্চসহ সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত চমৎকার এবং সন্তোষজনক। এক কথায় একটি মানবিক কারাগারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
মাগুরা জেলা কারাগারের বিশেষ একটি আকর্ষণ হচ্ছে মহিলা বন্দিদের সঙ্গে থাকা শিশুদের জন্য দোলনাসহ বিভিন্ন রকমের খেলনা সামগ্রী যা মহিলা বন্দিদের সঙ্গে থাকা শিশুদের জন্য শুধু বিনোদনই নয়; এটি প্রতিটি নিরপরাধ শিশুকে মুক্ত জীবনের ছোঁয়া পেতে সহায়তা করে। বন্দিদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের আচরণগত বিষয়ে জানতে চাইলে জেলার জানান, বন্দিদের সঙ্গে তিনি প্রতিদিন অন্তত দুইবার কথা বলেন। তাদের অপরাধ প্রবণতা কমাতে নিয়মিত ধর্মীয় দীক্ষাসহ সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকার্যের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বন্দিদের তিনি এটা বোঝাতে চেষ্টা করেন; কারাগার কখনও আপন নিবাস নয়; এটি সংশোধনের একটি রাস্তা মাত্র।
মাগুরা জেলা কারাগারের জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধা জানান, কারাগারের চারদিকে বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে আম, কাঁঠাল, মাল্টা, পেয়ারা, লেবু, বরই, উন্নত জাতের পেঁপে গাছ। বাগানে উৎপন্ন মৌসুমি ফল আম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি তিনি নিজে উপস্থিত থেকে বন্দিদের (পুরুষ ও মহিলা) মাঝে সমহারে বণ্টন করেন।
এছাড়াও কারাগারের শোভাবর্ধনের উন্নয়ন মূলক কাজ, দীর্ঘ দিন বিশেষ করে গত ৬ মাসে সম্পূর্ণ মাদকমুক্ত, কারা অধিদপ্তর থেকে আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উন্নয়ন মূলক কাজ, বন্দীদের খাবারের মান উন্নয়ন, বন্দীদেরকে নিয়মিত ধর্মীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া, বন্দীদেরকে শীতকালীন খেলাধূলার ব্যবস্থা করা, বন্দীদের সবজি চাষের উদ্বুদ্ধকরণ করা হয়েছে এবং সেই চাষের সবজি বন্দীদের মাঝে বিতরণ করা।
গত ১ বছরে মাগুরা জেলা কারাগারে কোন বন্দীর মৃত্যু হয়নি, প্রেষণামূলক ও প্রণোদনামূলক কাজের সাথে সম্পৃক্ততা করা, কারাগারে অনিয়ম ও দূর্নীতি মুক্ত, বন্দীদের স্বজনরা চাইলে যে কোন তথ্য ওয়েব পোর্টালে দেখে নেওয়া, বন্দীদের সাথে স্বজনদের সরাসরি সাক্ষাৎ করে কথা বলা। জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধা আরও বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ কারা মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক অত্যন্ত ভালো একজন দায়িত্বশীল ও প্রশংসনীয় ব্যক্তি।
প্রিন্ট