ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo শালিখায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে হাইব্রিড ধানের বীজ বিতরণ Logo বাইসাইকেল নিয়ে সেতুর উপরে ঘুরতে গিয়ে প্রাণ গেলাে শুভ’র Logo রাজশাহী-১ আসনে বিএনপি’র গোছানো মাঠ নষ্টের চেষ্টা Logo রাজশাহীতে আনসার ও ভিডিপি’র মতবিনিময় সভা Logo ফরিদপুরে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ৬ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত Logo শ্যামনগরে নারীদের এবং স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিয়ে সংবেদনশীল কর্মশালা Logo বাঘায় আনিসুরকে গলা কেটে হত্যার দায় স্বীকার রায়হানের Logo কালুখালীতে বিএনপি’র প্রতিবাদ সমাবেশ Logo জুলাই গণঅভুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে বাগাতিপাড়ায় স্মরণ সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত Logo গোয়ালন্দে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে ফুটবল প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

মাগুরা জেলা ভাটা সমিতির সাধারণ সম্পাদকের ই. টি. এ বিরিক্স ইট ভাটায় প্রকাশ্যে জ্বালানি হিসেবে পুড়ানো হচ্ছে গাছের কাঠ

মাগুরায় যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ইটের ভাটা, মাগুরা জেলার জগদল ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামে সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে চলছে ভাটা সমিতির সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম এর ইট ভাটা।

অধিকাংশ ভাটা পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে ও ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশ। আইন অমান্য করে দিনের পর দিন ইট ভাটার সংখ্যা বাড়লেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরজমিনে ইট ভাটাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অবৈধভাবে ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা এসব ইট ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষি জমির মাটি। ফলে একদিকে নির্বিচারে উজাড় হচ্ছে বন, অন্যদিকে উর্বরতা হারিয়ে চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে জমি। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, আকারভেদে একটি ইট ভাটা গড়তে কমপক্ষে পাঁচ একর (৫০০ শতাংশ) জমি প্রয়োজন।

তবে ক্ষেত্রবিশেষে ৪০ থেকে ৪৫ একর জমিরও প্রয়োজন হয়। আর এসব ইট ভাটা গড়ে ওঠার কারণে  শতাধিক একর ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইট ভাটার ম্যানেজার জানালেন, সাধারণত মধ্যম সারির একটি ভাটায় বছরে ৪০ থেকে ৫০ লাখ ইট পোড়ানো হয়। আর প্রতি আট হাজার ইটের জন্য কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার হয় এক হাজার ঘনফুট মাটি। সেই মাটির জোগান আসে কৃষি জমি থেকে।

এজন্য প্রতিটি ভাটায় বছরে পাঁচ থেকে ছয় একর জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭-এর ৭ ধারা অনুযায়ী কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।এ আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রথমবার সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে ১ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও সাজার বিধান রাখা হয়েছে। তৃতীয়বার এ অপরাধের পুনরাবৃত্তিতে ভাটার নিবন্ধন বাতিল ও ভাটা বাজেয়াপ্ত করারও বিধান রাখা হয়েছে।

মাধবপুর গ্রামের  একজন সচেতন কৃষক লোক সমাজকে  বলেন  ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষেতের পাশে ইট ভাটা গড়ে ওঠায় আগের তুলনায় উৎপাদন কমে গেছে। সরকার ফসলি জমির ওপর ইট ভাটা স্থাপন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পাঁচ বছরের মধ্যে এসব জমির উৎপাদন শূন্যে নেমে আসবে।স্থানীয়রা আরও বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের মধ্যে শ্বসনতন্ত্রের রোগব্যধিতে আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে অসুস্থতা বাড়ছে।

ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যদি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়, তাহলে এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্টসহ শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিকারকর্মী গবেষক শ্রী ইন্দ্র নীল বলেন, আমরা দেখেছি— প্রতিটি ভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কৃষি জমি এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতেও গড়ে ওঠা অনেক ভাটায় স্বল্প উচ্চতার তৈরি চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এতে ফসলসহ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এরকম চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এই এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।

ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে অধিকাংশ ভাটার মালিক বলেন, চাহিদার তুলনায় কয়লার সরবরাহ কম। দামও বেশি। তাই কয়লা দিয়ে ইট পোড়ালে তাদের লভ্যাংশ কমে যায়। ফলে লাভ বাড়াতেই তারা কাঠ পুড়িয়ে থাকেন। সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণ কয়লা আমদানির মাধ্যমে সাশ্রয়ী দামে সরবরাহ করতে পারলে তবেই ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানো বন্ধ করা যাবে বলে মনে করছেন তারা।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

শালিখায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে হাইব্রিড ধানের বীজ বিতরণ

error: Content is protected !!

মাগুরা জেলা ভাটা সমিতির সাধারণ সম্পাদকের ই. টি. এ বিরিক্স ইট ভাটায় প্রকাশ্যে জ্বালানি হিসেবে পুড়ানো হচ্ছে গাছের কাঠ

আপডেট টাইম : ০৮:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ নভেম্বর ২০২২
ফারুক আহমেদ, স্টাফ রিপোর্টার, মাগুরাঃ :

মাগুরায় যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ইটের ভাটা, মাগুরা জেলার জগদল ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামে সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে চলছে ভাটা সমিতির সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম এর ইট ভাটা।

অধিকাংশ ভাটা পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে ও ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশ। আইন অমান্য করে দিনের পর দিন ইট ভাটার সংখ্যা বাড়লেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরজমিনে ইট ভাটাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অবৈধভাবে ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা এসব ইট ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষি জমির মাটি। ফলে একদিকে নির্বিচারে উজাড় হচ্ছে বন, অন্যদিকে উর্বরতা হারিয়ে চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে জমি। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, আকারভেদে একটি ইট ভাটা গড়তে কমপক্ষে পাঁচ একর (৫০০ শতাংশ) জমি প্রয়োজন।

তবে ক্ষেত্রবিশেষে ৪০ থেকে ৪৫ একর জমিরও প্রয়োজন হয়। আর এসব ইট ভাটা গড়ে ওঠার কারণে  শতাধিক একর ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইট ভাটার ম্যানেজার জানালেন, সাধারণত মধ্যম সারির একটি ভাটায় বছরে ৪০ থেকে ৫০ লাখ ইট পোড়ানো হয়। আর প্রতি আট হাজার ইটের জন্য কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার হয় এক হাজার ঘনফুট মাটি। সেই মাটির জোগান আসে কৃষি জমি থেকে।

এজন্য প্রতিটি ভাটায় বছরে পাঁচ থেকে ছয় একর জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭-এর ৭ ধারা অনুযায়ী কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।এ আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রথমবার সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে ১ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও সাজার বিধান রাখা হয়েছে। তৃতীয়বার এ অপরাধের পুনরাবৃত্তিতে ভাটার নিবন্ধন বাতিল ও ভাটা বাজেয়াপ্ত করারও বিধান রাখা হয়েছে।

মাধবপুর গ্রামের  একজন সচেতন কৃষক লোক সমাজকে  বলেন  ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষেতের পাশে ইট ভাটা গড়ে ওঠায় আগের তুলনায় উৎপাদন কমে গেছে। সরকার ফসলি জমির ওপর ইট ভাটা স্থাপন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পাঁচ বছরের মধ্যে এসব জমির উৎপাদন শূন্যে নেমে আসবে।স্থানীয়রা আরও বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের মধ্যে শ্বসনতন্ত্রের রোগব্যধিতে আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে অসুস্থতা বাড়ছে।

ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যদি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়, তাহলে এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্টসহ শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিকারকর্মী গবেষক শ্রী ইন্দ্র নীল বলেন, আমরা দেখেছি— প্রতিটি ভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কৃষি জমি এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতেও গড়ে ওঠা অনেক ভাটায় স্বল্প উচ্চতার তৈরি চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এতে ফসলসহ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এরকম চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এই এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।

ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে অধিকাংশ ভাটার মালিক বলেন, চাহিদার তুলনায় কয়লার সরবরাহ কম। দামও বেশি। তাই কয়লা দিয়ে ইট পোড়ালে তাদের লভ্যাংশ কমে যায়। ফলে লাভ বাড়াতেই তারা কাঠ পুড়িয়ে থাকেন। সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণ কয়লা আমদানির মাধ্যমে সাশ্রয়ী দামে সরবরাহ করতে পারলে তবেই ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানো বন্ধ করা যাবে বলে মনে করছেন তারা।


প্রিন্ট