আনসারের চাকরি ছেড়ে মোটরসাইকেল চুরি, সহযোগীসহ গ্রেফতার মো. লিটন হোসেন (৩৫) । একসময় আনসার বাহিনীর সদস্য হিসেবে রাজধানীতে
কর্মরত ছিলেন।
২০২০ সালে এলাকায় একটি হত্যাকান্ড সংঘটিত হলে তিনি ওই মামলার আসামি হন। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে কয়েক মাস হাজতবাসও করেন তিনি। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর আনসার বাহিনীর চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে গ্রামে ফিরে এসে জমিতে শুরু করেন সবজি চাষ।
কিন্তু সবজি চাষ করে খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না লিটন। সেজন্য সবজি চাষ বাদ দিয়ে চোরাই মোটরসাইকেল ক্রয়-বিক্রয়কে পেশা হিসেবে বেছে নেন। কিছু দিনের মধ্যেই হয়ে ওঠেন আন্তঃজেলা মোটর সাইকেল ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের অন্যতম গডফাদার। মাত্র দুই বছরের মধ্যে লিটন হোসেন কতগুলো চোরাই মোটরসাইকেল ক্রয়-বিক্রয় করছেন তার সঠিক হিসেব বের করা মুশকিল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।
কুষ্টিয়া পুলিশের বিশেষ অভিযানে এক সদস্যসহ লিটনকে পাকড়াও করা হয়েছে। দুজনের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে চোরাই ৫টি মোটরসাইকেল। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনসের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেলার পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম এসব তথ্য জানান।
গ্রেফতার লিটন হোসেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সদকী চরপাড়া গ্রামের প্রয়াত সামছুদ্দিনের ছেলে। লিটনের আরেক সহযোগী জুলফিকার আলী (২৭) মালয়েশিয়ায় ছিলেন। কিন্তু সেখানে ৬ মাসের বেশি টিকে থাকতে পারেননি। দেশে ফিরে এসে লিটনের মতো প্রথমে সবজি চাষ শুরু করেন। এরপর তিনিও লিটনের সহযোগী হিসেবে চোরাই মোটরসাইকেল ক্রয়-বিক্রয় পেশা হিসেবে বেছে নেন। জুলফিকার কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানাধীন মাঝিলা গ্রামের সফি উদ্দিনের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৩০ অক্টোবর বিকেল ৫টায় উপজেলার বাটিকামারা এলাকার একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজের কাছে চোরাই মোটরসাইকেল ক্রয়-বিক্রয়ের সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চোর চক্রের ৫-৬ জন সদস্য দৌঁড়ে পালিয়ে গেলেও পুলিশ লিটন হোসেনকে আটক করে। এসময় লিটনের কাছ থেকে চোরাইকরা দুটি ডিসকভারি এবং একটি এ্যাপাচি আরটিআর মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লিটন পুলিশকে জানায়, তিনি আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল ক্রয়-বিক্রয় চক্রের একজন অন্যতম সদস্য। চোরাই মোটরসাইকেল ক্রয়-বিক্রয় করায় তার একমাত্র পেশা।
গত দুই বছরে লিটন যে কতগুলো চোরাই মোটরসাইকেল ক্রয়-বিক্রয় করেছে তার কোনো ইয়াত্তা নেই। তিনি আরও জানান, তার দলে অন্তত ১০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। তারা মোটরসাইকেল চুরি করে এনে এবং চোরাই মোটরসাইকেল সংগ্রহ করে তা বিক্রি করার জন্য লিটনের কাছে রাখতেন। লিটন সেগুলো দেশের বিভিন্ন এলাকার ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতেন। লিটনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ গত ৩১ অক্টোবর তার অন্যতম সহযোগী জুলফিকার আলীকে নিজ গ্রাম কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্বিবদ্যালয় থানাধীন মাঝিলা গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে এবং তার বাসা থেকে একটি ১০০ সিসির চোরাই ডিসকভারি মোটরসাইকেল জব্দ করে।
পরে লিটনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী বিক্রয়ের জন্য কুষ্টিয়ার একটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার উদ্দেশ্যে পাঠানো ১২৫ সিসির একটি ডিসকভারি মোটরসাইকেল ফেরত আনা হয়। লিটনের অন্য সহযোগীদেরও গ্রেফতারের জন্য পুলিশ এরই মধ্যেই কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এ ব্যাপারে গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কুমারখালী থানায় শুক্রবার একটি মামলা করা হয়েছে।
প্রিন্ট