ইসমাইল হোসেন বাবুঃ
কুষ্টিয়ার শীর্ষ চরমপন্থি মুকুল মেম্বার গ্রেফতার। সে শতাধিক হত্যা মামলার আসামি ও চরমপন্থি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন জাসদ গণবাহিনীর প্রধান কালুর সেকেন্ড ইন কমান্ড লিপটনের সহযোগী মুকুল মেম্বারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার বিকেলে তাকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর বাজার থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
শীর্ষ চরমপন্থি মুকুল মেম্বার নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন, চাঁদাবাজি, দখলদারি, ডাকাতি, অস্ত্র-মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে থানায় ৫টি মামলা রয়েছে। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আন্দোলনকারী সবুজ হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
চরমপন্থি সংগঠনের আঞ্চলিক শীর্ষ সন্ত্রাসী মুকুল মেম্বার কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের ৬ নাম্বার ওয়ার্ডের পুরাতন কুষ্টিয়া এলাকার মুসলিম বিশ্বাসের ছেলে। বিদেশে পলাতক কুষ্টিয়ার আব্দালপুর ইউনিয়নের আলী রেজা সিদ্দিকী ওরফে কালুর নির্দেশে মুকুল বিভিন্ন সন্ত্রাসী অপকর্ম চালিয়ে আসছিলেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন বলেন, বুধবার দুপুরের দিকে ডিবি পুলিশ ও থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে মুকুল মেম্বারকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৫টি মামলা রয়েছে। সবুজ হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এছাড়াও চাঁদাবাজি, দখলদারি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী যুবলীগ সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন কুষ্টিয়া শহর যুবদল কর্মী সবুজ আহমেদ। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী রেশমা খাতুন বাদী হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলার আসামি মুকুল মেম্বার।
জানা গেছে, জাসদ গণবাহিনীর আদলে নিজ নামে সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ অঞ্চলে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়া ইবি থানার আব্দালপুর গ্রামের আলী রেজা সিদ্দিকী ওরফে কালু। তার বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে একের পর এক হত্যা, হাট-ঘাট দখল এবং অবৈধ অস্ত্র ও দলে নতুন নতুন ক্যাডার ভিড়িয়ে গড়ে তুলেছে নিজস্ব সাম্রাজ্য।
কালুর সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন জাহাঙ্গীর কবির ওরফে লিপটন। বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও তিন সহযোগীসহ লিপটনকে কিছুদিন আগে গ্রেফতার করে সেনাবাহিনী। পরে মুকুল মেম্বারের মাধ্যমে পদ্মা নদী ও গড়াই নদী পথসহ বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন কালু।
কুষ্টিয়া জেলাসহ ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, রাজবাড়ী, পাবনা, নাটোর এলাকার অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী এই কালু। কালু একাধিক নাম ব্যবহার করেন। বড় কালু ওরফে আলী রেজা ওরফে বুলবুল ওরফে কমল দা। কালু একাধিক মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তিনি বেশির ভাগ সময় দেশের বাইরে পলাতক থেকে লিপটন, রাজু, মুকুল মেম্বারসহ তার বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতাদের দিয়ে চাঁদাবাজি, দখলদারি, ডাকাতি, অস্ত্র-মাদক ব্যবসা, হাট-ঘাট, বালু মহল, পদ্মা ও গড়াই নদীর চর দখল এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করছেন। কেউ কোনোভাবে বিরোধিতা করলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়ে হত্যার দায় স্বীকারোক্তি দিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দেন চরমপন্থি সন্ত্রাসী কালু বাহিনীর লোকজন।
৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতাদের আনুকল্য নিয়ে তারা এ অঞ্চলে অপরাধের রাজত্ব কায়েম করেছেন। গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার ত্রিবেনী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর শ্মশানঘাট এলাকায় তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পরপরই হত্যার দায় স্বীকারোক্তি দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাঠায় কালু বাহিনী।
২১ বছর আগে (২০০৩ সালের ৪ ডিসেম্বর) আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বের জের ধরে একই এলাকায় চরমপন্থি পাঁচ নেতাকে হত্যা করে কালু বাহিনী। এ মামলায় কালুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ২০০৯ সালের ৮ আগস্ট তিনজনকে হত্যা করে কুষ্টিয়া গণপূর্ত কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ব্যাগের ভেতর তিনটি মাথা ঝুলিয়ে রেখে যান কালু। ৯০ দশক থেকেই তিনি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জাসদ গণবাহিনীর সামরিক প্রধান ছিলেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় শতাধিক খুনের মামলা রয়েছে।
প্রিন্ট