ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo নারী দালাল হেলেনা আক্তার কে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয় ‌জনতা Logo দৌলতপুরে জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে ভাইয়ের হাতে ভাই গুরুতর জখম Logo বাঘায় শয়নকক্ষ থেকে গৃহবধুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার Logo সদরপুরে সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, জনমনে স্বস্তি Logo নাটোরে খ্রিস্টান ধর্মপল্লীগুলোতে ইস্টার সানডে পালিত Logo রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভায় মহিলা লীগ নেত্রী, দিলেন বক্তব্যও Logo মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রোগী কর্তৃক অগ্নিসংযোগ ও অফিসের আসবাবপত্র ভাংচুর Logo সদরপুরে হেরোইনসহ যুবক আটক Logo নাটোরের বড়াইগ্রামে শয়নকক্ষ থেকে যুবদল নেতার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার Logo মধুখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সেই ভ্যানের দুই যাত্রীর মৃত্যু
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

নড়াইলে একই মাঠে মসজিদ-মন্দির

নড়াইলে একই মাঠে মসজিদ-মন্দির

নড়াইলে মাঠের একপাশে মসজিদ অন্যপাশে মন্দির। সময় হলে কেউ যাচ্ছেন নামাজে, আর কেউ যাচ্ছেন দেবী দর্শনে। স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম পালন করছেন সবাই, রক্ষা করে চলছেন স্ম্প্রীতি।
ধর্মীয় সম্প্রীতির এমন উজ্জ্বল নিদর্শন রয়েছে চিত্রার নদীর পাড়ে নড়াইল পৌরসভার মহিষখোলায়। প্রায় চার দশক ধরে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ পরষ্পরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাদের ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করছেন। ঐহিত্য মেনে সেই উৎসবে সামিলও হচ্ছেন সবাই।
এলাকাবাসী জানান, এক সময় নড়াইলের পুরান সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়টি মহিষখোলায় ছিল। সেই কার্যালয়ের পাশেই ১৯৭৪ সালে মহিষখোলা পুরাতন সাব রেজিস্ট্রি অফিস জামে মসজিদ নামের এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৯২ সালে নতুন করে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
আর ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় মহিষখোলা সার্বজনীয় পূজা মন্দির। নিজস্ব জায়গায় মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার গিয়ে দেখা যায়,চিত্রা নদীর পাড়ে একটি ছোট্ট মাঠে মধ্যে তিনটি স্থাপনা রয়েছে। মাঠের পশ্চিম পাশে মসজিদ, আর উত্তর পাশে রয়েছে মন্দিরটি। মন্দিরটি উত্তর-দক্ষিণমুখী। মন্দির থেকে একটু সামনে এগোলেই রয়েছে শরীফ আব্দুল হাকিম ও নড়াইল এক্সপ্রেস হাসপাতাল। আর মাঠের দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি রাস্তা।
একই মাঠে মসজিদ-মন্দির, পূজা-নামাজ নির্বিঘ্নে হওয়ায় এ প্রসঙ্গে মন্দিরে পূজা দেখতে আসা যশোরের বাঘারপাড়া এলাকার সুবল দাস বলেন, আমি আগেই এখানকার কথা শুনেছিলাম। একই জায়াগায় পাশাপাশি মন্দির ও মসজিদে যে যার ধর্ম পালন করে। এটা দেখে বেশ ভালো লাগলো। সবাই এ রকম মিলেমিশে থাকলে তো ধর্ম নিয়ে কোনো ঝগড়াঝাটি আর থাকত না।
এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা ও বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক হাফিজুর রহমান সাগর খান বলেন, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আমরা হিন্দু-মুসলিম একই পরিবারের সদস্য হিসেবে এলাকায় বসবাস করে আসছি। আমাদের এলাকায় কখনও ধর্ম নিয়ে কোনো বিরোধে আমরা লিপ্ত হইনি।
এই এলাকার মানুষ মনেপ্রাণে অসাম্প্রদায়িক। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধর্ম পালনের পাশাপাশি অন্য ধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল।
মহিষখোলা সার্বজনীন পূজা মন্দির কমিটির সভাপতি সুমন দাস বলেন, এই এলাকায় মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি হলেও কখনোই আমাদের পূজা-অর্চনা করতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হই না। আমরা সবাই মিলেমিশে এখানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছি।
তিনি আরও বলেন, পূজা উদযাপনের সময় সরকারিভাবে ৫০০ কেজি চাউল পাই। নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সহযোগিতা করেন। তবে বেশিরভাগ খরচের ব্যবস্থা আমরা নিজেরাই করে থাকি।
মহিষখোলা পুরাতন সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয় জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন, আমরা মন্দির কমিটিকে আমাদের নামাজের সময়সূচি দিয়েছি। নামাজের সময় মন্দির কমিটি তাদের কার্জক্রম সীমিত রাখেন। নামাজ শেষ হলে স্বাভাবিক নিয়মেই পূজা-অর্চনার কাজ চলে। এ নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত হয়নি। আমরা সবাই মিলেমিশে একসঙ্গেই বসবাস করছি।
স্থানীয় বাসিন্দা হাসিবুর রহমান বলেন, আমরা সবাই মিলেমিশে এখানে বসবাস করি। পূজার সময় এখানে অনেক সুন্দরভাবে আলোকসজ্জা করা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষেরা এখানে দেখতে আসেন।
নড়াইল জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অশোক কুমার কুণ্ডু বলেন, এ বছর জেলার তিনটি উপজেলার ৫৮২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। আশা করছি, প্রতি বছরের মতো এ বছরও নড়াইলে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন হবে।
পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির, পূজা-নামাজ নির্বিঘ্নে চলায় নড়াইল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান ‍নিলু বলেন, আমরা নড়াইলের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করি এবং তা ধারণ করি। নড়াইল পৌরসভার মহিষখোলায় একই আঙ্গিনায় মসজিদ আর মন্দির তারই প্রমাণ। নড়াইলে সম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

নারী দালাল হেলেনা আক্তার কে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয় ‌জনতা

error: Content is protected !!

নড়াইলে একই মাঠে মসজিদ-মন্দির

নড়াইলে একই মাঠে মসজিদ-মন্দির

আপডেট টাইম : ০৮:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ অক্টোবর ২০২২
খন্দকার সাইফুল্লা আল মাহমুদ, নড়াইল প্রতিনিধিঃ :
নড়াইলে মাঠের একপাশে মসজিদ অন্যপাশে মন্দির। সময় হলে কেউ যাচ্ছেন নামাজে, আর কেউ যাচ্ছেন দেবী দর্শনে। স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম পালন করছেন সবাই, রক্ষা করে চলছেন স্ম্প্রীতি।
ধর্মীয় সম্প্রীতির এমন উজ্জ্বল নিদর্শন রয়েছে চিত্রার নদীর পাড়ে নড়াইল পৌরসভার মহিষখোলায়। প্রায় চার দশক ধরে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ পরষ্পরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাদের ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করছেন। ঐহিত্য মেনে সেই উৎসবে সামিলও হচ্ছেন সবাই।
এলাকাবাসী জানান, এক সময় নড়াইলের পুরান সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়টি মহিষখোলায় ছিল। সেই কার্যালয়ের পাশেই ১৯৭৪ সালে মহিষখোলা পুরাতন সাব রেজিস্ট্রি অফিস জামে মসজিদ নামের এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৯২ সালে নতুন করে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
আর ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় মহিষখোলা সার্বজনীয় পূজা মন্দির। নিজস্ব জায়গায় মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার গিয়ে দেখা যায়,চিত্রা নদীর পাড়ে একটি ছোট্ট মাঠে মধ্যে তিনটি স্থাপনা রয়েছে। মাঠের পশ্চিম পাশে মসজিদ, আর উত্তর পাশে রয়েছে মন্দিরটি। মন্দিরটি উত্তর-দক্ষিণমুখী। মন্দির থেকে একটু সামনে এগোলেই রয়েছে শরীফ আব্দুল হাকিম ও নড়াইল এক্সপ্রেস হাসপাতাল। আর মাঠের দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি রাস্তা।
একই মাঠে মসজিদ-মন্দির, পূজা-নামাজ নির্বিঘ্নে হওয়ায় এ প্রসঙ্গে মন্দিরে পূজা দেখতে আসা যশোরের বাঘারপাড়া এলাকার সুবল দাস বলেন, আমি আগেই এখানকার কথা শুনেছিলাম। একই জায়াগায় পাশাপাশি মন্দির ও মসজিদে যে যার ধর্ম পালন করে। এটা দেখে বেশ ভালো লাগলো। সবাই এ রকম মিলেমিশে থাকলে তো ধর্ম নিয়ে কোনো ঝগড়াঝাটি আর থাকত না।
এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা ও বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক হাফিজুর রহমান সাগর খান বলেন, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আমরা হিন্দু-মুসলিম একই পরিবারের সদস্য হিসেবে এলাকায় বসবাস করে আসছি। আমাদের এলাকায় কখনও ধর্ম নিয়ে কোনো বিরোধে আমরা লিপ্ত হইনি।
এই এলাকার মানুষ মনেপ্রাণে অসাম্প্রদায়িক। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধর্ম পালনের পাশাপাশি অন্য ধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল।
মহিষখোলা সার্বজনীন পূজা মন্দির কমিটির সভাপতি সুমন দাস বলেন, এই এলাকায় মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি হলেও কখনোই আমাদের পূজা-অর্চনা করতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হই না। আমরা সবাই মিলেমিশে এখানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছি।
তিনি আরও বলেন, পূজা উদযাপনের সময় সরকারিভাবে ৫০০ কেজি চাউল পাই। নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সহযোগিতা করেন। তবে বেশিরভাগ খরচের ব্যবস্থা আমরা নিজেরাই করে থাকি।
মহিষখোলা পুরাতন সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয় জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন, আমরা মন্দির কমিটিকে আমাদের নামাজের সময়সূচি দিয়েছি। নামাজের সময় মন্দির কমিটি তাদের কার্জক্রম সীমিত রাখেন। নামাজ শেষ হলে স্বাভাবিক নিয়মেই পূজা-অর্চনার কাজ চলে। এ নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত হয়নি। আমরা সবাই মিলেমিশে একসঙ্গেই বসবাস করছি।
স্থানীয় বাসিন্দা হাসিবুর রহমান বলেন, আমরা সবাই মিলেমিশে এখানে বসবাস করি। পূজার সময় এখানে অনেক সুন্দরভাবে আলোকসজ্জা করা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষেরা এখানে দেখতে আসেন।
নড়াইল জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অশোক কুমার কুণ্ডু বলেন, এ বছর জেলার তিনটি উপজেলার ৫৮২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। আশা করছি, প্রতি বছরের মতো এ বছরও নড়াইলে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন হবে।
পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির, পূজা-নামাজ নির্বিঘ্নে চলায় নড়াইল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান ‍নিলু বলেন, আমরা নড়াইলের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করি এবং তা ধারণ করি। নড়াইল পৌরসভার মহিষখোলায় একই আঙ্গিনায় মসজিদ আর মন্দির তারই প্রমাণ। নড়াইলে সম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

প্রিন্ট