কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী স্বপ্না রানী (ছদ্মনাম) এক ছেলে সন্তান কে জন্ম দিয়ে পালিয়ে যান। সেই নবজাতকের দেখভালের দায়িত্ব নিলেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
জন্মের পর থেকেই শিশুটিকে হাসপাতালের নবজাতকদের বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্রের (স্ক্যানু) ৫ নম্বর বেডে রাখা হয়েছে। শিশুটি বর্তমান সুস্থ রয়েছে। তাকে শিশু বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সরা সেবাযতœ করছেন।
বুধবার (০৭ সেপ্টেম্বর) সকালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নবজাতকের খবর প্রকাশিত হলে তার দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসছেন বিভিন্ন জেলা উপজেলার অনেক বিত্তবান মানুষ। শিশু ওয়ার্ডে একটি বক্্র এ প্রায় ২৫ জন দরখাস্ত করেছেন নবজাতক ঐ শিশুকে নিয়ার জন্য।
হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা বলেন, নবজাতক শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি সান্নিধ্য খুবই জরুরি। যে কারণে শিশুটির যাতে কোনো ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা না দেয়, সেজন্য তাকে হাসপাতালের বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করে রাখা হয়েছে। ওই পরিচর্যা কেন্দ্রের যখন যে নার্স ডিউটিতে রয়েছেন তিনিই পরিচর্যাসহ দেখভাল করছেন। শিশুটির ওজন প্রায় তিন পাউন্ড। বর্তমানে সে অনেকটা সুস্থ রয়েছে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে শিশুটির নাম রাখা হয়েছে মোহাম্মদ আলী।
এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এম এ মোমেন বলেন, শুক্রবার (০৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম শিশুটির সার্বিক খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে এসেছিলেন। তিনি শিশুটির চিকিৎসার বিষয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় জেলা প্রশাসনের এনডিসি (নেজারত ডেপুটি কালেক্টর) শাহেদ আরমানসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরো বলেন শিশুটির সার্বিক খোঁজখবর আমরা ও রাখছি। এই নবজাতকের জন্য আমরা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করব এবং আইনানুসারে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। এ পর্যন্ত নবজাতক শিশুর কোনো আত্মীয়-স্বজনও খোঁজ নিতে হাসপাতালে আসেনি।
কুষ্টিয়া সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ মুরাদ হোসেন বলেন, ডিসি স্যার সার্বিকভাবে খোঁজ নিচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুয়ায়ী শিশুটির ডায়াপার, ফিডার, গুঁড়া দুধ, টাওয়েল, জামা-কাপড় থেকে শুরু করে যখন যা প্রয়োজন হচ্ছে আমরা তা সরবরাহ করছি।
কুষ্টিয়া সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ মুরাদ হোসেন আরও বলেন, এরই মধ্যে নবজাতক ওই শিশুটির দায়িত্ব নিতে বেশ কয়েক জন শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীক রাজনীতিক নেতাসহ অনেকেই যোগাযোগ করেছেন। এমনকি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জায়গা থেকে আরও কয়েকজন আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা শিশুটির বিষয়ে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বেস্ট সিকিউরিটি যেটা মনে হয় সেই সিদ্ধান্তই নেব।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুনঃ দেড়মাসে ৭টি পৃথক সংঘর্ষে নিহত ২, আহত শতাধিক
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সাথে ফোনে আজ রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে কথা হলে তিনি জানান, আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। শিশুটি বর্তমানে সুস্থ রয়েছে। তার জন্য যা যা প্রয়োজন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবই করা হবে। আমি নিজে সার্বিকভাবে খোঁজখবর রাখছি।
প্রিন্ট