অশান্ত হয়ে উঠেছে মহম্মদপুরের গ্রামীন জনপদ। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, গ্রাম্য দলাদলি এবং তুচ্ছো ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেড়মাসে ৭টি পৃথক সংঘর্ষের ঘটনায় দুইজন নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট ভাংচুর এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকার। গ্রামীন জনপদের বিভিন্ন স্থানে দেড় মাসের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনায় উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে ধারণা করছেন সাধারন মানুষ ও সচেতন মহল। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ফুটবল খেলা, পারিবারিক কলোহ ও পূর্ববিরোধসহ বিভিন্ন ছোটখাটো ঘটনাকে কেন্দ্র করে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে। খবর পেয়ে এসব সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আনতে চেষ্টা করেছে মহম্মদপুর থানা পুলিশ। সংশ্লিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তিকে ঘনটাস্থল থেকে আটকও করছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও পরিদর্শন করেছেন ঘটনাস্থল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২৩ জুলাই উপজেলার পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের চরঝামা গ্রামে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হয় নবম শ্রেনির মাদ্রাসা ছাত্র হাসিবুল ইসলাম। আহত হয় অনেকে। এ নিয়ে এলাকায় ঘরবাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
২৬ জুলাই পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের কালিশংকরপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নারীসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়। ১৫টি বসত-বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়।
১ সেপ্টেম্বর উপজেলার নহাটা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দুই চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নারীসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়।
৪ সেপ্টেম্বর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের উরুরা গ্রামে পূর্ববিরোধের জের ধরে দু’গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং বসতবাড়িতে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। এর জের ধরে পাশ্ববর্তী কানুটিয়া বাজার থেকে কৃষক আতর লস্কর (৬০) কে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে প্রতিপক্ষের লোকজন। চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পথে মারা যায়।
আরও পড়ুনঃ শালিখায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগঃ আদালতে মামলা
গত ৬ সেপ্টেম্বর উপজেলার বিনোদপুর হাইস্কুল মাঠে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ঘুল্লিয়া ও বিনোদপুর গ্রামবাসীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং উভয় পক্ষকে থানায় ডেকে বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা আর হবে না মর্মে অঙ্গীকারাবদ্ধ করেন। এদিন রাতেই ঘুল্লিয়া গ্রামের লোকজন বিনোদপুর গ্রামের রাজিবকে পিটিয়ে মারাত্বক আহত করে। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বিনোদপুর বাজারে ঘুল্লিয়া গ্রামের ব্যবসায়ীদের দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। এ ঘটনায় ৮জনকে আটক করে ৬ মাসের কারাদন্ড দেন ভ্রাম্যমান আদালত। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজিব ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদিন বিকোলে উপজেলার বাবুখালীতে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার দীঘা ইউনিয়নের জনার্দনপুর গ্রামে পারিবারিক কলোহের জেরে ভাই ও ভাতিজার লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত ওমেদ ও তার স্ত্রী আয়শা দম্পত্তি। এই দম্পত্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। প্রতিটা ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এ সকল মামলায় রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতা, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, গ্রাম্য মাতবর এবং সাধারন মানুষকে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট না থাকা সত্বেও আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতার আতঙ্কে এসব আসামিরা পলাতক রয়েছেন। আজ রবিবার দুপুরে বিনোদপুর বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও ভাংচুরের ঘটনা পরিদর্শন করেন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর। এ সময় প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা উপস্থিতি ছিলেন।
উরুরা গ্রামের মশিউর রহমান বলেন, স্থানীয় আওয়ামীলীগের মধ্যে দু’গ্রুপিং থাকার কারনে সাধারন মানুষের মধ্যে বিভেধ সৃষ্টি হয়েছে।
পলাশবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি এমডি গোলজার রহমান বলেন, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গ্রাম্য মাতবরদের শেল্টার দেওয়ার কারনে বিভিন্ন স্থানে ছোটখাটো বিষয় মারামারিতে রুপ নিচ্ছে।
বালিদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান মিনা বলেন, পুলিশের ভূমিকা কঠোর না হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান
এ বিষয়ে মহম্মদপুর থানার ওসি অসিত কুমার রায় বলেন, আধিপত্য বিস্তারসহ ছোটখাটো বিয়ষ নিয়ে অনাকাঙ্খিত কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ঠদের আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এবং ১৪ জনকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। হত্যা মামলার আসামিদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনে আরো কঠোর হবে পুলিশ।
প্রিন্ট