মাগুরা শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের কাজলী-হোগলডাঙ্গা গ্রামের অসুস্থ (জ্বর) আক্রান্ত মোঃ টগর মোল্লা (৩৯) পিং- মৃত আব্দুর রহমান মোল্লা কে, তার চাচাত ভাই সাবেক বিজিবি সদস্য রাশেদ মোল্লা (৫৫) খুন হওয়ার পরদিন সকালের সময় রাশেদদের বাড়ির দিকে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য রাস্তায় গেলে, সন্দেহ জনক ভাবে পুলিশ প্রশাসনের সদস্যরা গ্রেফতার করে মাগুরা কোর্টে চালান করেছে।
টগর মোল্লার স্ত্রী ফরিদা পারভীন (৩৫) শ্রীপুর উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কোম্পানি প্লাটুন কমান্ডার, এই পদে চাকরিরত আছেন। তিনি বলেন, আমার স্বামী টগর মোল্লার ভিষণ জ্বর, রাশেদ হত্যার সময় আমার স্বামী জ্বররত অবস্থায় বাড়িতে শুয়ে ছিলো। এ বিষয়ে এলাকার প্রতিবেশী মিনা খাতুন, রাসেল মোল্লা, আছমা খাতুন, নাছিমা ও রেহেনা পারভিন ঘটনার সত্যতা প্রকাশ করে বলেন, টগর মোল্লার ৩-৪ দিন পূর্ব থেকেই ভিষণ জ্বরে ভুগছিলো।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা আনসার প্লাটুন কোম্পানি কমান্ডার ফরিদা পারভীন বলেন, তার স্বামী টগর মোল্লার জন্য শ্রীপুর উপজেলার রাধানগর বাজার থেকে ডাঃ আসাদুজ্জামান এর কাছে থেকে ঔষধ নিয়ে এসে ছিলো। তিনি তার নিরীহ স্বামীর মুক্তির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের কাছে দৃষ্টি কামনা করেন। ফরিদা পারভীন দুঃখ ভারাক্রান্ত আক্ষেপ করে বলেন, পুলিশ আমার স্বামীকে সন্দেহ মূলক ধরার সাথে সাথেই খবর শুনে দ্রুত স্পটে ছুটে যায়। সেখানে আমি দায়িত্বরত অনুমান পুলিশের এস আই সদস্যকে পরিচয় দেয় যে, আমি একজন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর শ্রীপুর উপজেলার মহিলা প্লাটুন কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বরত আছি। কিন্তু আনসার প্লাটুন কমান্ডার সদস্যর পরিচয় পাওয়ার পরও ঐ পুলিশের এস আই আমার সাথে দূর্ব্যবহার ও অকথ্য ভাষায় কথা বলে।
শ্রীপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় সাবেক বিডিআর সদস্য নিহত। শ্রীপুরের সব্দালপুর ইউনিয়নের কাজলি-হোগলডাঙ্গা গ্রামে গত মঙ্গলবার ৬ সেপ্টেম্বর অনুমান ৭ টার সময় সন্ধ্যার কিছু সময় পর প্রতিপক্ষের হামলায় সাবেক বিডিআর সদস্য রাশিদুল মোল্যা (৫৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তি হোগলডাঙ্গা গ্রামের মৃত কাওছার মোল্যার ছেলে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, উপজেলার কাজলি গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল হান্নান মোল্যা ও হোগলডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল হাই পবন মল্লিকের সাথে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিলো। এরই সূত্রধরে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার সময় হান্নান ও পবন গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র, ঢাল, সড়কি, টেটা, রামদা, ছ্যানদা ও লাঠি নিয়ে মোল্যা মতিয়ার রহমানের বাড়ির সামনে পাকা রাস্তার উপর এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সংঘর্ষে পবন গ্রুপের রাশিদুল, এনামুল, আতর, হাপান ও উকিল মোল্যাসহ বেশ কয়েকজন মারাত্বক আহত হন।
গুরুতর আহত রাশেদ মোল্লাকে চিকিৎসার জন্য মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। মৃত্যুর সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পবন গ্রুপের লোকজন প্রতিপক্ষ হান্নান গ্রুপের রফিকুল ইসলাম ফেরো, জামির মীর, হারুর মীর ও ফিরোজ মীরের বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়ি-ঘরে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। সংবাদ পেয়ে শ্রীপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহতের স্ত্রী আসমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামী রাশিদুল মোল্যা কাজলি বাজার থেকে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে পথিমধ্যে হান্নান মোল্যা, ফেরো, ঠান্ডু, ওবাইদুল, নান্নু, মোকাম, ইমরোজ, রিপন ও কবিরসহ বেশ কয়েকজন তাকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। আমি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। কাজলী গ্রামে বসবাসরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোপন সূত্রে জানা যায়, রাশেদ মোল্লাকে কুপিয়ে জখম করে, ঠান্ডু মুন্সি (৪৫), নান্নু মুন্সি (৪৮), ইমরুল মুন্সি (২৪) উভয় পিং- নওশের মুন্সি সাং- কাজলী, এছাড়াও পাশ্ববর্তী কাবিলপুর গ্রামের ফের বিশ্বাস (৬৫), ইকাম (৫০), মুকাম (৪৫) ও ওবায়দুল সহ বেশ কিছু লোকজন।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ওসি (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন জানান, এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কেউ এজাহার দাখিল করেননি। এজাহার পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পবন মল্লিক গ্রুপে প্রতিপক্ষ হান্নান মোল্যাসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
প্রিন্ট