মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের উরুরা গ্রামে ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই মেম্বর প্রার্থীর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরধরে প্রতিপক্ষের হামলায় সোমবার ভোরে আতর আলী লস্কর (৬০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি উরুরা গ্রামের মৃত রজব আলী লস্করের ছেলে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। নতুন করে সংঘর্ষ এড়াতে সেখানের বিভিন্নস্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লুট-পাট আতঙ্কে অধিকাংশ মানুষ তাদের গৃহস্থালির মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। পুলিশের হাতে আটকের ভয়ে একপক্ষের লোকজন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন। নিহত আতর আলীর বাড়িতে চলছে কান্নার আহাজারি। স্বামীর মৃত্যুশোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী কোহিনুর বেগম। ছেলে উজ্জল ও মেয়ে মরিয়মের কান্নায় এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।
প্রতিপক্ষের হামলায় কৃষকের নির্মম হত্যাকান্ডে এলকায় চলছে শোকের মাতম। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে মহম্মদপুর থানা পুলিশ সাইফুল মোল্যা ও আল আমিন নামের দুই ব্যক্তিকে আটক করেছেন। সোমবার সকালে সহকারি পুলিশ সুপার কলিমুল্লাহ্ (ক্রাইম এ্যান্ড অপারেশন) এব এডিশনাল এসপি নাজিম উদ্দীন সার্কেল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
আরও পড়ুনঃ কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে রক্তঃ যুবক আটক
ওই এলাকার টুকু মিয়া জানান, গত বছরের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে একই এলাকা থেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মনির মোল্যা এবং বর্তমান মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মনিরুল ইসলাম মেম্বর পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ওই নির্বাচনে মনিরুল ইসলাম বিজয়ী হন এবং মনির মোল্যা পরাজিত হন। সেই থেকে উভয় প্রার্থীর কর্মীরা দু’টি ভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েন এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মাঝে মধ্যেই উভয় নেতার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং বাড়ি-ঘর ভাংচুরের ঘটনা সংঘঠিত হত।
এই ঘটনার জেরধরে গত শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় বেথুলিয়া বাজারের চায়ের দোকানে মনির মোল্যার ভাতিজা রাজা মিয়ার সাথে বর্তমান ইউপি সদস্য মনিরুল মিয়া সমর্থিত লাল মিয়ার ছেলে রেজাউল এবং রকিবুলের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এ খবর এলকায় ছড়িয়ে পড়লে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয়। এর ধারাবাহিকতায় রবিবার দুপুরে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং বসতবাড়িতে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। ফের পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে।
এদিন বিকেলে পাশ্ববর্তী কানুটিয়া হাটে কৃষক আতর লস্কর সাংসারিক নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার করতে গেলে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা মনিরুল মেম্বরের লোকজন দেশীও অস্ত্রদিয়ে শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হয়ে রাস্তায় লুটে পড়েন। এ সময় ঘাতররা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
পরে হাটের লোকজন তাকে উদ্ধার করে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে আনলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর অসস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঢাকা নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর আজ সোমবার ভোরে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। নতুন করে সংঘর্ষ এড়াতে সেখানের বিভিন্নস্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লুট-পাট আতঙ্কে অধিকাংশ মানুষ তাদের গৃহস্থালির মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। পুলিশের হাতে আটকের ভয়ে একপক্ষের লোকজন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন। সোমবার সকালে সহকারি পুলিশ সুপার কলিমুল্লাহ্ (ক্রাইম এ্যান্ড অপারেশন) এব এডিশনাল এসপি নাজিম উদ্দীন সার্কেল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
আরও পড়ুনঃ চরভদ্রাসনে পদ্মায় মোবাইল কোর্টের অভিযানে জাল পুড়িয়ে ধ্বংশ
নিহতের বড়ভাই বিলায়েত লস্কর বলেন, আমার সহজ সরল ভাইটাকে ওরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমি এই ঘটনার সঠিক বিচার চাই। উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি মো. মশিউর রহমান বলেন, আতর লস্কর একজন সাধারন কৃষক ছিলেন। তিনি কখনো ঝামেলায় জড়াতেন না। প্রতিপক্ষের লোকজন এই অসহায় মানুষটাকে এভাবে কেন মেরে ফেললো আমি বুঝতে পারছিনা।
মহম্মদপুর থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অসিত কুমার রায় বলেন, হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাইফুল ও আল আমিন নামের দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।
প্রিন্ট