মাগুরা জেলা কারাগারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বন্দিদের শিষ্টাচার, মার্জিত, সুন্দর ও মানবিক জীবনে ফেরাতে মাগুরা জেলা কারাগার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলা চলে। মাগুরা জেলা কারাগার ২০০১ সালে মাগুরা শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে মাগুরা-ঝিনাইদহ মহাসড়ক সংলগ্ন রাস্তার উত্তরপার্শ্বে ৬.৩৯৪ একর জমির ওপর নির্মিত হয়।
মাগুরা জেলা কারাগারের, জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধা জানান, মাগুরা জেলা কারাগারে ২৫ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল রয়েছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী আছে। মাগুরা জেলা কারাগারের অভ্যন্তরের পরিবেশ নিয়ে তিনি জানান- যে ধরণের অনিয়মের কথা আমরা বাহির থেকে শুনে থাকি। আসলে কারাগারের ভেতরে ঐ ধরনের কোনো অনিয়ম নেই। কারা অভ্যন্তরে মাদক সেবনের বিষয়ে জানতে চাইলে জেল ফেরত কয়েদিরা জানান, মাদকের বিষয়ে জেলার অনেক কঠোর। তিনি প্রায়ই কারারক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে মাদক অভিযান চালান এবং মাদক সেবনের ভয়াবহ কুফল চিত্র গুলোর আলোচনা করেন।
আরও পড়ুনঃ মাগুরা আদর্শ সম্মিলনী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৪ তলা ভবনের শুভ উদ্বোধন করেন এমপি সাইফুজ্জামান শিখর
কারা অভ্যন্তরে পরিপাটি পরিবেশ, সুন্দর সুন্দর দেয়াল লিখন, বিভিন্ন সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কাজের দৃশ্য এবং শিক্ষণীয় নানা আলপনা, বন্দিদের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় পানির সুব্যবস্থা, শিশুপার্ক, রান্নাঘর, কেন্টিন, পতাকা মঞ্চসহ সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত চমৎকার এবং সন্তোষজনক। এক কথায় একটি মানবিক কারাগারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পরিস্ফুটিত চিত্র ভেসে উঠে। মাগুরা জেলা কারাগারের জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাগুরা জেলা কারাগারে ধারণ ক্ষমতা ১৬২ জন (পুরুষ) ১০ জন (মহিলা) মোট ১৭২ জন। কিন্তু কখনও কখনও আরো অনেক বেশি হয়ে যায়। বিধায় তাদেরকে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে।
আলাপের একপর্যায়ে খাবারের মান নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বন্দিদের খাবার সরকারকর্তৃক নির্ধারিত মাত্রার ওপর ভিত্তি করেই দেওয়া হয়। এখানে কমবেশি করার কোনো সুযোগ নেই। টাকার ওপর ভিত্তি করে খাবার দেওয়া হয় না। একজন বন্দি কতটুকু খাবার পাবে তার একটা পরিমাণ কারা অধিদপ্তর কতৃক নির্ধারিত আছে। এই নির্ধারিত পরিমাণের কম বা বেশি করার কোনো সুযোগ নেই কর্তৃপক্ষের। কয়েদীদের ২ দিন খিচুড়ি, ২ দিন সবজি রুটি, ২ দিন হালুয়া রুটি আর ১ দিন অন্য খাবার দেওয়া হয়। মাগুরা জেলা কারাগারের বিশেষ একটি আকর্ষণ হচ্ছে মহিলা বন্দিদের সঙ্গে থাকা শিশুদের জন্য দোলনাসহ বিভিন্ন রকমের খেলনা সমগ্রী যা মহিলা বন্দিদের সঙ্গে থাকা শিশুদের জন্য শুধু বিনোদনই নয়, এটি প্রতিটি নিরপরাধ শিশুকে মুক্ত জীবনের ছোঁয়া পেতে সহায়তা করে।
বন্দিদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের আচরণগত বিষয়ে জানতে চাইলে জেলার জানান, বন্দিদের সঙ্গে তিনি প্রতিদিন অন্তত দুইবার কথা বলেন। তাদের অপরাধ প্রবণতা কমাতে নিয়মিত ধর্মীয় দীক্ষাসহ সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকার্যের ব্যবস্থা আছে। তিনি আরও বলেন, বন্দিদের তিনি এটা বোঝাতে চেষ্টা করেন, কারাগার কখনও আপন নিবাস নয়, এটি সংশোধনের একটি রাস্তা মাত্র। মাগুরা জেলা কারাগারের জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধা জানান, কারাগারের চারদিকে রোপণ করা হয়েছে আম, কাঁঠাল, মাল্টা, পেয়ারা, লেবু, বরই ,উন্নত জাতের পেঁপে গাছ। বাগানে উৎপন্ন মৌসুমি ফল আম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি তিনি নিজে উপস্থিত থেকে বন্দিদের (পুরুষ ও মহিলা) মাঝে সমহারে বণ্টন করেন।
এছাড়াও মাগুরা জেলা কারাগারের নানাবিধ বৈদ্যুতিক সমস্যার সমাধান, বন্দী ব্যারাক (ভবন) উন্নয়ন, বন্দীদের দৈনিক খাদ্যের মান ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণ, অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করন, বন্দীদের শতভাগ করনা টিকা প্রদান নিশ্চিতকরন, বন্দীদের মাদক ও আত্মহত্যার বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ, কারাগারের চারপাশে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা করন, কারা অধিদপ্তর থেকে প্রদত্ত বিভিন্ন কাজের জন্য প্রদত্ত অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করন, বন্দী ব্যারাক আধুনিকায়ন করন, ধুমপান মুক্ত করন, পিঠা উৎসব-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান- বনভোজন এর আয়োজন, কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বন্দী মায়ের সাথে থাকা শিশুদের বিভিন্ন প্রণোদনামূলক ও প্রেষণামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, কারাবন্দীদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন সচেতনতামূলক সেমিনারের আয়োজন করা, কারাগারের ভিতর এবং বাহিরে ফলজ বৃক্ষ রোপণ করা, বাসা-বাড়ির বসবাস বাস স্থানের মেরামত সংস্কার, রং করা ও কারা ব্যারাকের সংস্কার ও সমস্ত ড্রেন মেরামত করে সংস্কার করা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী সমগ্র কারাগারের ভিতরের জমিতে উন্নত বিজ্ঞান ভিত্তিক কৃষি চাষাবাদের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন ও নিয়মিত মশক নিধন করা এবং কারাগারের মডেল মসজিদ উন্নত করন ও বন্দীদের মাঝে ধর্মীয় জ্ঞান ধারণা করা।
প্রিন্ট