ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

শৈলকুপায় পাট নিয়ে বিপাকে পাটচাষিরা, বাজার জমে উঠলেও দামে হতাশ চাষিরা

শনির দশা কাটছে না পাটচাষিদের। ফলন ভালো হলেও খরায় পানির অভাবে পাট জাগ দিতে ভোগান্তির শেষ ছিল না।

এবার দামে হতাশ চাষিরা। বাজারে পাটের চাহিদা থাকলেও আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না তাঁরা। পাট পঁচানো ও ধোয়ার কাজে বেগ পেতে হয়েছে চাষিদের, সেই সঙ্গে বেড়েছে খরচও। আবার পানিস্বল্পতায় ঠিকমতো জাগ দিতে না পারায় পাটের আঁশ কালচে হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে এ বছর বিপাকে পড়েছেন পাটচাষিরা। এ বছর অনেক চাষিকে পাট জাগ দেওয়ার জন্য ১ থেকে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরে যেতে হয়েছে।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নতুন বাজারে সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার সাপ্তাহিক পাটের হাট বসে। গতকাল শনিবার সকালে পাটের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারজুড়ে ক্রেতা-বিক্রেতা আর ব্যাপারীদের ভিড়। কৃষকেরা বাজারে পুরোদমে পাট আনতে শুরু করেছেন। দাম-দর করে কৃষক ও ব্যাপারীরা যানবাহনের ওপর থেকেই পাট কেনাবেঁচা করছেন। বাজার জমে উঠলেও হতাশ চাষিরা।

আরও পড়ুনঃ শৈলকূপায় অসুস্থ গরুর মাংশ বিক্রির অপরাধে ব্যবসায়ীকে জরিমানা

মৌসুমের শুরুতে ৩ হাজার টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হলেও বর্তমান বাজারে প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কালচে ও নিম্নমানের পাট হলে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, মধ্যম মানের পাট ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে, আবার পাটের রং ভালো হলে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরেও বিক্রি হচ্ছে। গড়ে প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা জানান, এবার বিঘাপ্রতি পাট চাষ ও কাটা-ধোয়া করতে ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। প্রতি বিঘায় এবার ফলন হয়েছে ১০ থেকে ১২ মণের বেশি। বাজারে পাটের প্রতি মণ গড় দাম ২ হাজার ৬০০ টাকা, সে হিসাবে প্রতি বিঘায় গড়ে ২৬ হাজার টাকার পাট হয়েছে।

উপজেলার মাঠপাড়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, তিনি এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। তাঁর জমিতে আনুমানিক এক হাজার হাতা পাট হয়েছে। পাট কাটতে ৪ টাকা হাতা করে ৪ হাজার টাকা, টানতে ৪ টাকা হাতা করে ৪ হাজার, ধোয়ায় ৫ টাকা হাতা করে ৫ হাজার ও বাজারে নিতে ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। মোট ১৩ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে, বিক্রি করেছেন ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে ২৫ হাজার টাকায়। বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আ. রহিম বলেন, এবার বৃষ্টি ঠিকমতো না হওয়ায় সেচ দিয়ে অল্প পানিতে পাট জাগ দেওয়ায় পাটের রং কালচে হয়েছে, তাই বাজারে তেমন দাম পাচ্ছেন না।

আরও পড়ুনঃ পাংশায় ড্রেন নির্মাণ কাজে ঠিকাদারের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

সাধুহাটি গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, এবার ঠিকমতো বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুর ও ডোবায় সেচ দিয়ে পাট জাগ দিতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। বাজারে বর্তমানে পাটের যে দাম, খরচ বাদ দিলে কিছুই থাকছে না। আশা ছিল পাটের দাম বাড়বে, কিন্তু আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় তাঁরা হতাশ। খুলনা থেকে আসা পাট ব্যবসায়ী তোজাম শেখ বলেন, এখানের হাটে বেশি পাট ওঠায় তাঁরা প্রতিবছর এখান থেকে পাট কেনেন। বাজারে সোনালি পাটের চাহিদা বেশি, তবে পানির অভাবে কৃষকেরা ঠিকমতো জাগ দিতে না পারায় বাজারে কালচে পাট বেশি দেখা যাচ্ছে। আগের বছরের তুলনায় এবার পাটের মান তুলনামূলক খারাপ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, এবার উপজেলায় মোট ৯ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, উৎপাদিত হয়েছে ৯ হাজার ৫০০ মেট্রিক টনের মতো। অন্যান্য বছরের চেয়ে ফলন তুলনামূলক ভালো হয়েছে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

এবার ২১ দিনের মধ্যে জবাব দিতে আদানিকে সমন পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

error: Content is protected !!

শৈলকুপায় পাট নিয়ে বিপাকে পাটচাষিরা, বাজার জমে উঠলেও দামে হতাশ চাষিরা

আপডেট টাইম : ১২:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ অগাস্ট ২০২২
জাহিদুর রহমান তারেক,ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ :

শনির দশা কাটছে না পাটচাষিদের। ফলন ভালো হলেও খরায় পানির অভাবে পাট জাগ দিতে ভোগান্তির শেষ ছিল না।

এবার দামে হতাশ চাষিরা। বাজারে পাটের চাহিদা থাকলেও আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না তাঁরা। পাট পঁচানো ও ধোয়ার কাজে বেগ পেতে হয়েছে চাষিদের, সেই সঙ্গে বেড়েছে খরচও। আবার পানিস্বল্পতায় ঠিকমতো জাগ দিতে না পারায় পাটের আঁশ কালচে হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে এ বছর বিপাকে পড়েছেন পাটচাষিরা। এ বছর অনেক চাষিকে পাট জাগ দেওয়ার জন্য ১ থেকে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরে যেতে হয়েছে।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নতুন বাজারে সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার সাপ্তাহিক পাটের হাট বসে। গতকাল শনিবার সকালে পাটের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারজুড়ে ক্রেতা-বিক্রেতা আর ব্যাপারীদের ভিড়। কৃষকেরা বাজারে পুরোদমে পাট আনতে শুরু করেছেন। দাম-দর করে কৃষক ও ব্যাপারীরা যানবাহনের ওপর থেকেই পাট কেনাবেঁচা করছেন। বাজার জমে উঠলেও হতাশ চাষিরা।

আরও পড়ুনঃ শৈলকূপায় অসুস্থ গরুর মাংশ বিক্রির অপরাধে ব্যবসায়ীকে জরিমানা

মৌসুমের শুরুতে ৩ হাজার টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হলেও বর্তমান বাজারে প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কালচে ও নিম্নমানের পাট হলে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, মধ্যম মানের পাট ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে, আবার পাটের রং ভালো হলে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরেও বিক্রি হচ্ছে। গড়ে প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা জানান, এবার বিঘাপ্রতি পাট চাষ ও কাটা-ধোয়া করতে ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। প্রতি বিঘায় এবার ফলন হয়েছে ১০ থেকে ১২ মণের বেশি। বাজারে পাটের প্রতি মণ গড় দাম ২ হাজার ৬০০ টাকা, সে হিসাবে প্রতি বিঘায় গড়ে ২৬ হাজার টাকার পাট হয়েছে।

উপজেলার মাঠপাড়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, তিনি এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। তাঁর জমিতে আনুমানিক এক হাজার হাতা পাট হয়েছে। পাট কাটতে ৪ টাকা হাতা করে ৪ হাজার টাকা, টানতে ৪ টাকা হাতা করে ৪ হাজার, ধোয়ায় ৫ টাকা হাতা করে ৫ হাজার ও বাজারে নিতে ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। মোট ১৩ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে, বিক্রি করেছেন ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে ২৫ হাজার টাকায়। বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আ. রহিম বলেন, এবার বৃষ্টি ঠিকমতো না হওয়ায় সেচ দিয়ে অল্প পানিতে পাট জাগ দেওয়ায় পাটের রং কালচে হয়েছে, তাই বাজারে তেমন দাম পাচ্ছেন না।

আরও পড়ুনঃ পাংশায় ড্রেন নির্মাণ কাজে ঠিকাদারের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

সাধুহাটি গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, এবার ঠিকমতো বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুর ও ডোবায় সেচ দিয়ে পাট জাগ দিতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। বাজারে বর্তমানে পাটের যে দাম, খরচ বাদ দিলে কিছুই থাকছে না। আশা ছিল পাটের দাম বাড়বে, কিন্তু আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় তাঁরা হতাশ। খুলনা থেকে আসা পাট ব্যবসায়ী তোজাম শেখ বলেন, এখানের হাটে বেশি পাট ওঠায় তাঁরা প্রতিবছর এখান থেকে পাট কেনেন। বাজারে সোনালি পাটের চাহিদা বেশি, তবে পানির অভাবে কৃষকেরা ঠিকমতো জাগ দিতে না পারায় বাজারে কালচে পাট বেশি দেখা যাচ্ছে। আগের বছরের তুলনায় এবার পাটের মান তুলনামূলক খারাপ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, এবার উপজেলায় মোট ৯ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, উৎপাদিত হয়েছে ৯ হাজার ৫০০ মেট্রিক টনের মতো। অন্যান্য বছরের চেয়ে ফলন তুলনামূলক ভালো হয়েছে।


প্রিন্ট