বাংলাদেশ একাডেমির ভবন নির্মাণের কাজ ৬ বছরেও শেষ হয়নি। কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির অবকাঠামো সুবিধা যুগোপযোগী না হওয়ায় এই প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রাজশাহী মহানগরীতে গত ২০১৬ সালের ২৫ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির ভবন নির্মাণের কাজ। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ কাল ধরা হয়েছিল ৩ বছর। সেই চুক্তমতে ২০১৯ সালে কাজের সমাপ্তি হওয়ার কথা ছিল।
অনুসন্ধানী তথ্যমতে দেশের একমাত্র কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি ৬ বছরে প্রকল্পের মেয়াদ উত্তীণ হয়েছে ৪বার। যার কারনে স্থায়ী ভবনসহ আধুনিকায়ন প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রশিক্ষণ একাডেমির ৯৫ শতাংশ কাজের পর থমকে গেছে বাস্তবায়ন। প্রকল্প পরিকল্পনায় পরিবর্তন, অনুমোদনের অপেক্ষাসহ নানান জটিলতায় শুরু হলেও শেষ হচ্ছে না- দেশের একমাত্র এই কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির কাজ। নির্মাণ কাজ থেমে থাকায় প্রকল্পের পরিবর্তিত নতুন প্রস্তাবনায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় বাড়ছে। অবশিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ করতে আরও প্রায় ২০ কোটি টাকা চেয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। আর প্রকল্পটির কাজ শেষের জন্য চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। যদিও প্রস্তাবটি এখনও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিভিন্ন জটিলতায় নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। আর কেন্দ্রীয় কারাগারের ঠিক পাশেই দেশের একমাত্র কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি গড়ে তোলা হচ্ছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০১৫ সালে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৩ কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। ৪র্থবারে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক (পিডি) রয়েছেন- ড. সঞ্জয় চক্রবর্তী গনমাধ্যমকে বলেন, প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ। প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে। ইতোমধ্যে মধ্যে ৪৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। নতুন কিছু বিষয় যুক্ত হচ্ছে আগের পরিকল্পনায়। ভবনে এসি, লিফট ও ফ্লোরের সংখ্যা আরও বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষের জন্য আরও সময় লাগবে। ব্যয়ও বাড়বে প্রায় ২৫ শতাংশ। হাতে থাকা অবশিষ্ট ৩০ কোটি টাকায় আসবাবপত্র এবং এসি কেনা এবং সাজসজ্জার কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। এজন্য আরও অন্তত ৫০ কোটি টাকা দরকার। তাই আরও কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেটি পরিকল্পনা কমিশনে ঘুরে অনুমদোন হয়ে আসলে অর্থ বরাদ্দ হবে। তখন কাজও শুরু হবে।
আরও পড়ুনঃ ছাগল বাঁধাকে কেন্দ্র করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতিপক্ষের হাতে নিহত ১
রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির জন্য মোট ১০০ একর জমিতে প্রকল্পের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন মহলের বিরোধিতায় শেষ পর্যন্ত রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রায় ৬৬ একর জমির মধ্যে ২৪ একর জমিতে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর পরিকল্পনায় তিনতলা এমআই বিল্ডিং, পুরুষ ও নারীদের জন্য ট্রেইনি ব্যারাক, প্যারেড গ্রাউন্ড, কোয়ার্টার ও ৫ হাজার ৯৯২ বর্গফুটের একাডেমিক অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ভবনের সঙ্গে নতুন করে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং, এমআই ভবনে নতুন করে দুইটি ফ্লোর, ডাইনিং কাম কিচেনসহ এসি ও লিফটের প্রস্তাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন অন্তত ছয়জন কর্মকর্তা।
কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ জানান, ভূমি উন্নয়নসহ বিভিন্ন জটিলতায় কাজটি এমনিতে শুরু হয়েছিল দেরিতে। এছাড়া দেশের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় বৃদ্ধি ও পরিকল্পনা পরিবর্তনসহ নানান কারণে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সময় লাগছে।
প্রিন্ট