দেশের ২য় বৃহত্তম রেলওয়ে এলসি স্টেশন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দর স্থাপনে প্রধান অন্তরায় অবৈধ দখলদারদের অপতৎপরতা সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে। রহনপুর রেলস্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দরে পরিনত করার দাবিতে এলাকাবাসীর আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন অবৈধ দখলদার চক্র নানা অপতৎপরতা শুরু করেছে। তারা অবৈধ দখলদার রক্ষা কমিটি তৈরি করে রেলবন্দর বিরোধী নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। তারা বিভিন্ন স্থানে গোপন বৈঠকসহ সভা-সমাবেশ করার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
রহনপুর রেলবন্দর বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক নাজমুল হুদা খান রুবেল জানান, প্রায় ৩০ বছর পূর্বে শুরু হওয়া রহনপুর-সিঙ্গাবাদ রেলরুট দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত-নেপালের সীমান্ত বানিজ্য এখনো চালু রয়েছে। এ রেলরুট টিকে ত্রি-দেশীয় বানিজ্যের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে গন্য করা হলেও রহনপুর রেলবন্দর এলাকায় অবৈধ দখলদারিত্বের কারণে একে পূর্ণতা দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ের জায়গা অবৈধদখলে থাকার কারনে রেলকতৃপক্ষ এখানে রেলবন্দরের পূর্নাঙ্গ অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারেনি। একারণে এখানে আমদানিকারকরা ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা চাইলেও তা পাচ্ছে না।
রেলকর্মকর্তারা জানান, এ রেলরুটকে ঘিরে রেলওয়ের নানা পরিকল্পনা রয়েছে। ভারতের সিঙ্গাবাদ রেল রুট দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত নেপালকে ট্রানজিট দেওয়ার পর থেকে ত্রিদেশীয় বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এ লক্ষ্যে গত বছর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেপালের সঙ্গে থাকা ট্রানজিট চুক্তি সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে যাকে নিয়ে এতো কিছু, সেই রহনপুর রেলস্টেশনের অবকাঠামোগত কোন উন্নয়ন হয়নি। বরং দিন দিন রেলের জমিগুলো চলে যাচ্ছে দখলদারদের হাতে। দখলদারদের অপতৎপরতায় দখলমুক্ত হচ্ছেনা রেলওয়ের কয়েকশ একর জমি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তা দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলেও অদৃশ্য শক্তির কারণে তা হয়ে উঠছে না।
এ প্রসঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ি ও চেম্বার নেতা আবদুল ওয়াহেদ জানান, গত ২০০৮ সালে তৎকালীন সরকার এ রেলওয়ে এলসি স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দরে পরিনত করতে উদ্যোগ গ্রহন করলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে এখন এ রেলওয়ে এলসি স্টেশনের গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখন এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পশ্চিম রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রহনপুর রেলস্টেশনের আশেপাশসহ হয়ে ভারত সীমান্তের জিরোপয়েন্ট শিবরামপুর পর্যন্ত রেলওয়ের মোট ৩৭৮.৮৮ একর সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে ১৪৭.৮৪ একর জায়গা রেলের দখলে রয়েছে। এছাড়া, রেল কর্তৃপক্ষ কৃষি জমি হিসেবে ৮১.২৪ একর, জলাশয় হিসাবে ১২.০১ একর, বিএডিসির সার গুদামের জন্য ৫.০৩ একর, ০.৪৫ একর জায়গা বানিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য লীজ দিয়েছে। আর পতিত রয়েছে ৫৪.১৪ একর জমি। এর বাইরেও রেলের প্রায় ৭৮.১৬ একর (২৩৪ বিঘা) জমি অবৈধ দখলদারদের হাতে রয়েছে। যে জমির ওপর রেল কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। রহনপুর রেলস্টশনের পশ্চিম দিকের আম বাজার ও পূর্ব দিকের রেলের জায়গা দখল করে দৈনিক বাজার বসিয়ে রহনপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করছে। বিষয়টি নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ পৌরসভাকে আইনি নোটিশও দিয়েছিল কিন্তু এর কোন সুরাহা হয়নি।
এদিকে লীজ নেয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাদের নির্ধারিত লীজ নেওয়া জায়গার কয়েকগুণ বেশি জায়গা অবৈধ দখলে নিয়ে বাড়ি, মার্কেট নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে। এতে করে রেলওয়ে বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে।
এ বিষয়ে পশ্চিম রেলওয়ের পাকশী ডিভিশনের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুরুজ্জামান জানান, রেলওয়ের জায়গা দখলমুক্ত করতে গেলে স্থানীয় দখলদারদের প্ররোচনায় কিছু লোকজন বাধা সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া যারা লীজ নিচ্ছেন তাদের এক বছরের জন্য লীজ দেয়া হয়। যা প্রতি বছর নবায়ন করার কথা থাকলেও তা না করে বছরের পর বছর অবৈধ দখল করে ব্যবহার করছেন। তবে রেলওয়ের জায়গা দখলমুক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের গত বছরের ৮ ডিসেম্বর নোটিশ দেয়া হয়েছে। এরপরও রেলওয়ের জায়গা দখলমুক্ত না হলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ কাজে এলাকাবাসি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা কামনা করেন তিনি।
এদিকে, রহনপুর রেলবন্দর বাস্তবায়নে রেলওয়ের জায়গা দখলমুক্ত করা হলে রহনপুর রেল স্টেশন এলাকায় রেলওয়ের তত্ত্বাবধায়নে পরিকল্পিতভাবে মার্কেট নির্মাণ করে ব্যবসায়ীদের ব্যবহারের সুবিধা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ব্যবসায়ি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তারা রেলওয়ের জায়গা দখলমুক্ত করে রহনপুরকে পুর্ণাঙ্গ রেলবন্দরে পরিণত করার দাবিও জানিয়েছেন।
প্রিন্ট