রাজবাড়ী জেলার পাংশায় গত শুক্রবার ১ জানুয়ারী দুপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত স্কুল শিক্ষিকা নাসিমা খাতুন (৪৮) শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
এরআগে শুক্রবার দুপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত আব্দুল মালেক (৭০) পাংশা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। স্কুল শিক্ষিকা নাসিমা খাতুন ও বৃদ্ধ আব্দুল মালেকের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া মেনে আসে। রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাংশার মৈশালা বাসস্ট্যান্ডের অদূরে মত্তিডাঙ্গী মোড় নামক স্থানে শুক্রবার দুপুর পৌণে দুইটার দিকে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
জানা যায়, পাংশা বাজার থেকে ব্যাটারীচালিত অটোবাইকটি যাত্রী নিয়ে মৈশালা বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার পথে মত্তিডাঙ্গী মোড়ে হাইরোডে উঠার সময় রংপুর থেকে বরিশালগামী বিআরটিসি পরিবহনের ধাক্কা লেগে অটোবাইকটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। বিআরটিসি বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৫৪৯৩) ধাক্কায় অটোবাইকের যাত্রী গুরুতর আহত আব্দুল মালেক (৭০) শুক্রবার দুপুরে পাংশা হাসপাতালে এবং যশাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা খাতুন শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
নাসিমা খাতুনের বাড়ী পাংশা পৌরসভার মৈশালা গ্রামে। তিনি পাংশা উপজেলার যশাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ে বই বিতরণ করে বাড়ী ফিরছিলেন তিনি। সড়ক দুর্ঘটনায় অপর নিহত বৃদ্ধ আব্দুল মালেকের বাড়ী কালুখালী উপজেলার বিশই সাওরাইল গ্রামে।
দুর্ঘটনায় অপর আহতরা হলেন, কালুখালীর বিশই সাওরাইল গ্রামের ইমান আলীর ছেলে অটোবাইক চালক মিজানুর রহমান (৫০), একই গ্রামের ঝন্টু মন্ডলের স্ত্রী শাবানা (৩৫) ও শৈলকুপা থানার মালিথিয়া গ্রামের চিত্ত রঞ্জন বিশ্বাসের ছেলে বিপুল কুমার বিশ্বাস (৩০)। হতাহতরা সবাই অটোবাইকে ছিলেন। অটোবাইক চালক মিজানুর রহমান বর্তমানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যরা পাংশা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ী ফিরেছেন বলে পাংশা হাসপাতাল সূত্র জানায়।
এদিকে, শনিবার আছর নামাজের পর পাংশার মৈশালা দাখিল মাদরাসায় স্কুল শিক্ষিকা মরহুমা নাসিমা খাতুনের জানাজার নামাজ শেষে মাদরাসা সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজার নামাজের আগে মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে পাংশার নবাগত ইউএনও মোহাম্মদ আলী, পাংশা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ.কে.এম শরিফুল হুদা সাগর, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল হক ও মরহুমার একমাত্র পুত্র সন্তান পাংশা সরকারী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র আল জুবায়ের রিসান বক্তব্য রাখেন। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন মরহুমার আপন মামাতো-ফুফাতো ভাই মোঃ আবু তালহা। দাফনের পর দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন পাংশা সরকারী জর্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আব্দুস শুকুর।
জানাজার নামাজে পাংশা উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, মরহুমার পিতা মোঃ ইয়ার আলী প্রামানিক, কোলানগর একাডেমীর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ মাস্টার, মোহাম্মদ আলী একাডেমীর প্রধান শিক্ষক রেজাউল করীম, সাংবাদিক মোঃ মোক্তার হোসেন, পাংশা ডাকবাংলোর তত্ত¡াবধায়ক রফিকুল ইসলাম খান (পলাশ), প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষকবৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করেন।
জানা যায়, মরহুমা নাসিমা খাতুনের স্বামী স্কুল শিক্ষক কামাল হোসেন কয়েক বছর আগে স্ট্রোক করে মারা যান। বর্তমানে পরিবারে রয়েছে দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান। কলেজ পড়–য়া কিশোর সন্তান আল জুবায়ের রিসান পিতা-মাতার বিদেহী আত্মার মাগফিরাতের জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেছেন।
প্রিন্ট