ফরিদপুরে আলফাডাঙ্গা উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের দলীয় পদ দেওয়া হয়েছে পাক বাহিনীর সহযোগি (শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান) এর পুত্রকে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বেশ আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
স্বাধীনতা বিরোধীর পুত্রকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদ দেওয়ায় বিষয়টি তুলে ধরে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধ এই অভিযোগে স্বাক্ষর করেছেন। এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ্য করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সুতিকাগার আলফাডাঙ্গা উপজেলায় পাক বাহিনীর সহযোগী হিসেবে কামারগ্রামের আবদুর রহমান মোল্যার নাম সরকারের গেজেটে রাজাকার হিসেবে আছে। আবার পুলিশের বিশেষ শাখার গোপন প্রতিবেদনেও মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর সহযোগী শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন আবদুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ায় বঙ্গবন্ধু সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে এবং ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন তিনি।
আলফাডাঙ্গার আলোচিত (শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান) আবদুর রহমান মোল্যার ছেলে হারিচুর রহমান সোহানকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সম্পাদকের পদ দিয়েছেন সংগঠনের উপজেলা শাখা। পদ পাওয়া সোহানের বড় ভাই নুরুল ইসলাম লিটন স্থানীয়ভাবে বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং এক সময় উপজেলা যুবদলের সভাপতিও ছিলেন।
উক্ত অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগে পদ পাওয়া হারিচুর রহমান সোহান ছাত্রজীবনে কোনোদিন ছাত্রলীগের রাজনীতি করেননি। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কোনো সভা-সমাবেশেও অতীতে দেখা যায়নি তাকে। বরং ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এখন হঠাৎ করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনে দায়িত্ব পাওয়ায় অবাক হয়েছেন দলের নেতাকর্মীরাও।
এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শওকত আলী জাহিদ বলেন, ‘উপজেলা কমিটি আগে থেকে আমাদের কিছু জানায়নি। আমরাও হারিচুর রহমান সোহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেছেন যে, তার বাবা একাত্তরে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।’
জাহিদ বলেন, ‘জেলা কমিটির অনুমোদন ছাড়া উপজেলায় কাউকে পদ-পদবী দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ আমরা কোনো অনুমোদন দিইনি। বঙ্গবন্ধু ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগে কোনো রাজাকারপুত্রের ঠাঁই নেই, এটা দৃঢ়চিত্তে বলতে পারি।’
আলফাডাঙ্গা উপজেলা কমিটি অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ উল্লেখ করে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রবিন বলেন,‘করোনার কারণে এখন কাউন্সিল করতে পারছি না। তা না হলে অনেক আগেই কাউন্সিল করে নতুন কমিটি করা হতো।’
রবিন বলেন, ‘কোনো স্বাধীনতা বিরোধীরপুত্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের আসতে পারবে না। আমরা তদন্ত করব। আমিও অভিযোগ পেয়েছি। এখন তদন্ত করে দেখব। সত্যতা পেলে যারা এ কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত ৫ ডিসেম্বর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আলফাডাঙ্গা উপজেলা শাখা দপ্তর সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে, হারিচুর রহমান সোহানকে সংগঠনের উপজেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক লীগে সভাপতি এনায়েত হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলোনা। তবে যেহেতু কথা উঠেছে, সেক্ষেত্রে বিষয়টি তদন্ত করে জেলা ও কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রিন্ট