ঢাকা , শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo আগামীকালের পর থেকে যদি কারো ঘরে দেশীয় অস্ত্র পাওয়া যায়, তার অবস্থা হবে ভয়াবহঃ -সহকারী পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান শাকিল Logo ফরিদপুর সদর উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় একজন নিহত, আহত ৫ Logo সমাজসেবার বিশেষ অবদানে সম্মাননা স্মারক পেলেন দৌলতদিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান রহমান মন্ডল Logo তানোরে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীর সমাপনী Logo খোকসায় প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে এমপি আব্দুর রউফ Logo লালপুরে প্রেমিককে কুপিয়ে জখম, প্রেমিকা আটক Logo গোপালগঞ্জে যাত্রীবাহী মাহেন্দ্র ও ট্রলির সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ৪ Logo নগরকান্দায় প্রবীণ গ্রাম্য ডাক্তারকে পিটিয়ে আহত করলো কথিত সাংবাদিক Logo চরভদ্রাসনে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী মেলা Logo তানোরে সার্বজনীন পেনশন স্কিম গ্রহণে ব্যাপক সাড়া
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

ফরিদপুর জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজ : নবসৃষ্টির আলোকবর্তিকা

  • ফরিদপুর অফিসঃ
  • আপডেট টাইম : ১২:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২২
  • ১৫৫ বার পঠিত

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গুনগত মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাত্র দু’বছরের মধ্যেই স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজ।

এবছর স্কুলটিতে ভর্তি হতে ব্যাপক আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি স্কুলের চেয়ে এখানে ভর্তি হতে পারাটাই তাদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি সুষ্ঠ ও সময়োপযোগী ব্যবস্থাপনার মধ্যে গড়ে তোলা স্কুলটিতে শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে আধুনিক ও উন্নত মান বজায় রাখার কারনেই স্বল্প সময়ের মধ্যে এই আগ্রহের সঞ্চার হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যেন সারাদেশে অনন্য রোল মডেল হয়ে উঠছে।

ফরিদপুরে আধুনিক শিক্ষা ও মানবিক গুন সম্পন্ন শিক্ষার্থী তথা মানুষ গড়ে তোলার জন্য বিদ্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসম‚হের মানোন্নয়নের পাশাপাশি আরো একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সৃজনের লক্ষ্যে শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন ফরিদপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। এরই অংশ হিসেবে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি শহরের গুরুত্বপূর্ণ ঝিলটুলী মহল্লায় ৬৪ শতাংশ জমির উপর তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজ।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কাশেম জানান, শহরের কেন্দ্রস্থলে গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকাটি ছিমছাম এবং পরিপাটি। ফরিদপুরের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজেন্দ্র কলেজ ও সারদা সুন্দরী কলেজের মধ্যবর্তী এই স্কুল এন্ড কলেজের ক্যাম্পাসের সামনে রয়েছে প্রশস্ত সড়ক। এছাড়া অদুরেই ফরিদপুর স্টেডিয়ামের পাশে এই প্রতিষ্ঠানের ‘কলেজ ক্যাম্পাস’ নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। এটা জেলার শিক্ষা বিস্তারের জন্য অবশ্যই মাইল ফলক। এই প্রতিষ্ঠানটি জেলাবাসির ছেলে-মেয়েদের যুগোপযুগি করে তোলার সহায়তা করবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা এবং সুনাগরিক হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটিতে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। এছাড়া মেন্টর এন্ড মনিটরিং চীফ হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ সাইফুল কবির, মনিটরিং অফিসার অফিসার হিসেবে আছেন সহকারী কমিশনার (শিক্ষা ও কল্যাণ) তারেক হাসান। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী প্রতিষ্ঠানটিরপ্রতি অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ।

এর বাইরেও দেশের খ্যাতনামা কলেজের শিক্ষা বিষয়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রফেসরদের সমন্বয়ে রয়েছে একটি উপদেষ্টা পরিষদ; যাদের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে শিক্ষার গুনগতমান তদারকি করা হয়। বিশেষত, শিক্ষাদানের প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বশেষ প্রযুক্তি ও জ্ঞানের সন্নিবেশ ঘটানো হয়ে থাকে।মেধাবী যে কোনো শিক্ষার্থীকেই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়।

যে কারণে জেলা প্রশাসন স্কুল:
জাতিসংঘ গৃহিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এর চতুর্থ ধাপেই রয়েছে মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতকরণ। এই অভিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়ন এবং ফরিদপুরকে শিক্ষানগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষে’ ফরিদপুর জেলা প্রশাসন ‘আমার গ্রাম, আমার শহর, ফরিদপুর হবে শিক্ষানগর’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ফরিদপুর জেলায় মানসম্মত ও গুনগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

ফরিদপুর জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শারমীন সুলতানা জানান, এই জেলা শহরে এর আগে স্কুলগামীদের প্রথম পছন্দের তালিকায় ছিল ছেলেদের জিলা স্কুল ও মেয়েদের সরকারি স্কুল। এ দুটি স্কুলে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের প্রায়শই একটা অসুস্থ্য প্রতিযোগীতায় অবতীর্ণ হতে হত। আমরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওই অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা থেকে বের করে আনার লক্ষ্যেই জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

তিনি দাবি করে বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে প্রাসঙ্গিক, কার্যকর, সমতাভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলত গুনগত শিক্ষা নিশ্চিত করার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এই বিদ্যাপীঠ।

প্রতিষ্ঠানটির মেন্টর এন্ড মনিটরিং চীফ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ সাইফুল কবির বলেন, আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত পাঠদান কৌশল, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিবিড় তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে জেলার আকাঙ্খিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যা শুধু জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবেই নয়; সারাদেশের মধ্যে অনুকরণীয় হয়ে উঠবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড হতে পাঠদানের অনুমোদন সাপেক্ষে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে এখানে নার্সারি হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ১৫ জন প্রতিভাবান শিক্ষক এবং প্রায় সাত শতাধিক শিক্ষার্থীর স্কুলটিতে ভর্তি হতে এবছর ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেককে ভর্তি করা সম্ভব হয়নি। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির কার্যক্রম ও এ বছর থেকেই শুরু হচ্ছে।

বিশেষত্ব:
জেলার শহরের বুকে বিস্তৃত পরিসরের ক্যাম্পাস জুড়ে গড়ে ওঠা স্কুলটিতে দক্ষ শিক্ষক মন্ডলীদের পাশাপাশি এখানে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ শহরের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় সিনিয়র শিক্ষকও নিয়মিতভাবে পাঠ প্রদান কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত থাকেন। উন্নত বাংলাদেশের দক্ষ নাগরিক হিসেবে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে ইংরেজি ভার্সনে শিক্ষা প্রদান শুরু হয়েছে। শিক্ষকদের সুযোগসুবিধা ক্রমান্বয়ে উন্নত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে যাতে তারা শ্রেণিকক্ষেই ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান সম্পন্ন করতে পারেন।

এখানকার ছাত্রছাত্রীদের অতিরিক্ত টিউটর রেখে বাড়িতে পড়াশুনার চাপ সহ্য করতে হবেনা। জেলা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হওয়ায় এখানকার ছাত্রছাত্রীরা তাদের মনস্তাত্বিক বিকাশের বিশেষ সুযোগ পাবে। বিশ্বব্যাপী তথ্য ও প্রযুক্তির উন্নতির প্রেক্ষিতে ডিজিটাল বাংলাদেশে শিক্ষাই হবে সর্বোত্তম সম্পদ। আর এ ক্ষেত্রে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এক্ষেত্রে আলোকবর্তিকা হয়ে উঠবে এমন প্রত্যাশা সকলের।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ফরিদপুরকে শিক্ষানগরী হিসেবে এগিয়ে নেয়ার কাজ ইতোমধ্যে বেশ অনেকদ‚র এগিয়েছে। করোনার মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে ‘ফরিদপুর ভার্চুয়াল স্কুল’ প্রবর্তন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ডিজিটাল প্লাটফর্মে শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে এই ভার্চুয়াল স্কুল ওয়েবসাইট, ইউটিউব ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সিলেবাস অনুযায়ী সরাসরি অনলাইনে পাঠদান করা হয়। এছাড়াও স্থানীয় ক্যাবল টিভিতেও ধারণকৃত পাঠদানের প্রচার করা হয়। জেলাকে শিক্ষা নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষা কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশনের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে ফরিদপুরের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন স্কুল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের উদ্ভাবনী চিন্তাধারায় ‘আট আনায় জীবনের আলো কেনা’ শ্লোগানকে ধারণ করে ছাত্রছাত্রীদের হতে প্রতিমাসে আট আনা (৫০ পয়সা) সঞ্চয় করে গড়ে তোলা হয় জ্ঞানের আলো ট্রাস্ট। এই ট্রাস্টের উদ্যোগে বছরের শুরুতে বইমেলার আয়োজন করা হয় যার স্বত্ত্বাধিকার এই ছাত্রছাত্রীরাই। বইয়ের সাথে শিক্ষার্থীদের নিবিড় বন্ধন গড়ে তোলাই এর লক্ষ্য।

শিক্ষার গুনগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের সাথে শিক্ষার্থীদের ‘মিট দ্য ডিসি’ শীর্ষক উদ্ভাবনী কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। মেধায়, মননে, পোষাকে, আচরণে, শৃঙ্খলায়, নেতৃত্বে, সাধারণ জ্ঞানে, বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিতি ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ভিত্তিতে সেরা ১০ জন শিক্ষার্থীর সাথে মাসে একবার জেলা প্রশাসকের সাক্ষাত ও মতবিনিময়ের প্লাটফরম এই মিট দ্য ডিসি। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক শিক্ষার্থীদের তার স্বাক্ষরিত কার্ড প্রদান করেন এবং স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেদের সমস্যা নিরোধ ও সম্ভাবনা সৃষ্টির কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। এর ধারাবাহিকতায় উপজেলা পর্যায়ে ‘মিট দ্য ইউএনও’ চালু করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের এসব উদ্যোগ ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, নারী শিক্ষা প্রসার, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ, শিক্ষাকে মানসম্মত, সর্বব্যাপী ও ফলপ্রস‚ করে তুলতে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও নাগরিক মঞ্চের সদস্য কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী এই প্রতিষ্ঠান প্রসঙ্গে বলেন, এ ধরেন একটি ভাল মানের স্কুলের দাবি ছিলো জেলাবাসির। আমরা প্রত্যাশা করি জেলা স্কুল কিংবা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে শিশু কিশোরদের ভর্তি যুদ্ধে না নিয়ে জেলা প্রশাসন স্কুল ও কলেজের প্রতি অভিভাবকরা তাদের আস্থার স্থল হবে।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

আগামীকালের পর থেকে যদি কারো ঘরে দেশীয় অস্ত্র পাওয়া যায়, তার অবস্থা হবে ভয়াবহঃ -সহকারী পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান শাকিল

error: Content is protected !!

ফরিদপুর জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজ : নবসৃষ্টির আলোকবর্তিকা

আপডেট টাইম : ১২:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২২

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গুনগত মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাত্র দু’বছরের মধ্যেই স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজ।

এবছর স্কুলটিতে ভর্তি হতে ব্যাপক আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি স্কুলের চেয়ে এখানে ভর্তি হতে পারাটাই তাদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি সুষ্ঠ ও সময়োপযোগী ব্যবস্থাপনার মধ্যে গড়ে তোলা স্কুলটিতে শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে আধুনিক ও উন্নত মান বজায় রাখার কারনেই স্বল্প সময়ের মধ্যে এই আগ্রহের সঞ্চার হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যেন সারাদেশে অনন্য রোল মডেল হয়ে উঠছে।

ফরিদপুরে আধুনিক শিক্ষা ও মানবিক গুন সম্পন্ন শিক্ষার্থী তথা মানুষ গড়ে তোলার জন্য বিদ্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসম‚হের মানোন্নয়নের পাশাপাশি আরো একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সৃজনের লক্ষ্যে শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন ফরিদপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। এরই অংশ হিসেবে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি শহরের গুরুত্বপূর্ণ ঝিলটুলী মহল্লায় ৬৪ শতাংশ জমির উপর তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজ।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কাশেম জানান, শহরের কেন্দ্রস্থলে গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকাটি ছিমছাম এবং পরিপাটি। ফরিদপুরের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজেন্দ্র কলেজ ও সারদা সুন্দরী কলেজের মধ্যবর্তী এই স্কুল এন্ড কলেজের ক্যাম্পাসের সামনে রয়েছে প্রশস্ত সড়ক। এছাড়া অদুরেই ফরিদপুর স্টেডিয়ামের পাশে এই প্রতিষ্ঠানের ‘কলেজ ক্যাম্পাস’ নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। এটা জেলার শিক্ষা বিস্তারের জন্য অবশ্যই মাইল ফলক। এই প্রতিষ্ঠানটি জেলাবাসির ছেলে-মেয়েদের যুগোপযুগি করে তোলার সহায়তা করবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা এবং সুনাগরিক হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটিতে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। এছাড়া মেন্টর এন্ড মনিটরিং চীফ হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ সাইফুল কবির, মনিটরিং অফিসার অফিসার হিসেবে আছেন সহকারী কমিশনার (শিক্ষা ও কল্যাণ) তারেক হাসান। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী প্রতিষ্ঠানটিরপ্রতি অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ।

এর বাইরেও দেশের খ্যাতনামা কলেজের শিক্ষা বিষয়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রফেসরদের সমন্বয়ে রয়েছে একটি উপদেষ্টা পরিষদ; যাদের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে শিক্ষার গুনগতমান তদারকি করা হয়। বিশেষত, শিক্ষাদানের প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বশেষ প্রযুক্তি ও জ্ঞানের সন্নিবেশ ঘটানো হয়ে থাকে।মেধাবী যে কোনো শিক্ষার্থীকেই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়।

যে কারণে জেলা প্রশাসন স্কুল:
জাতিসংঘ গৃহিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এর চতুর্থ ধাপেই রয়েছে মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতকরণ। এই অভিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়ন এবং ফরিদপুরকে শিক্ষানগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষে’ ফরিদপুর জেলা প্রশাসন ‘আমার গ্রাম, আমার শহর, ফরিদপুর হবে শিক্ষানগর’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ফরিদপুর জেলায় মানসম্মত ও গুনগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

ফরিদপুর জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শারমীন সুলতানা জানান, এই জেলা শহরে এর আগে স্কুলগামীদের প্রথম পছন্দের তালিকায় ছিল ছেলেদের জিলা স্কুল ও মেয়েদের সরকারি স্কুল। এ দুটি স্কুলে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের প্রায়শই একটা অসুস্থ্য প্রতিযোগীতায় অবতীর্ণ হতে হত। আমরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওই অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা থেকে বের করে আনার লক্ষ্যেই জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

তিনি দাবি করে বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে প্রাসঙ্গিক, কার্যকর, সমতাভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলত গুনগত শিক্ষা নিশ্চিত করার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এই বিদ্যাপীঠ।

প্রতিষ্ঠানটির মেন্টর এন্ড মনিটরিং চীফ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ সাইফুল কবির বলেন, আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত পাঠদান কৌশল, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিবিড় তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে জেলার আকাঙ্খিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যা শুধু জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবেই নয়; সারাদেশের মধ্যে অনুকরণীয় হয়ে উঠবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড হতে পাঠদানের অনুমোদন সাপেক্ষে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে এখানে নার্সারি হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ১৫ জন প্রতিভাবান শিক্ষক এবং প্রায় সাত শতাধিক শিক্ষার্থীর স্কুলটিতে ভর্তি হতে এবছর ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেককে ভর্তি করা সম্ভব হয়নি। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির কার্যক্রম ও এ বছর থেকেই শুরু হচ্ছে।

বিশেষত্ব:
জেলার শহরের বুকে বিস্তৃত পরিসরের ক্যাম্পাস জুড়ে গড়ে ওঠা স্কুলটিতে দক্ষ শিক্ষক মন্ডলীদের পাশাপাশি এখানে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ শহরের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় সিনিয়র শিক্ষকও নিয়মিতভাবে পাঠ প্রদান কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত থাকেন। উন্নত বাংলাদেশের দক্ষ নাগরিক হিসেবে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে ইংরেজি ভার্সনে শিক্ষা প্রদান শুরু হয়েছে। শিক্ষকদের সুযোগসুবিধা ক্রমান্বয়ে উন্নত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে যাতে তারা শ্রেণিকক্ষেই ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান সম্পন্ন করতে পারেন।

এখানকার ছাত্রছাত্রীদের অতিরিক্ত টিউটর রেখে বাড়িতে পড়াশুনার চাপ সহ্য করতে হবেনা। জেলা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হওয়ায় এখানকার ছাত্রছাত্রীরা তাদের মনস্তাত্বিক বিকাশের বিশেষ সুযোগ পাবে। বিশ্বব্যাপী তথ্য ও প্রযুক্তির উন্নতির প্রেক্ষিতে ডিজিটাল বাংলাদেশে শিক্ষাই হবে সর্বোত্তম সম্পদ। আর এ ক্ষেত্রে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এক্ষেত্রে আলোকবর্তিকা হয়ে উঠবে এমন প্রত্যাশা সকলের।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ফরিদপুরকে শিক্ষানগরী হিসেবে এগিয়ে নেয়ার কাজ ইতোমধ্যে বেশ অনেকদ‚র এগিয়েছে। করোনার মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে ‘ফরিদপুর ভার্চুয়াল স্কুল’ প্রবর্তন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ডিজিটাল প্লাটফর্মে শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে এই ভার্চুয়াল স্কুল ওয়েবসাইট, ইউটিউব ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সিলেবাস অনুযায়ী সরাসরি অনলাইনে পাঠদান করা হয়। এছাড়াও স্থানীয় ক্যাবল টিভিতেও ধারণকৃত পাঠদানের প্রচার করা হয়। জেলাকে শিক্ষা নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষা কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশনের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে ফরিদপুরের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন স্কুল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের উদ্ভাবনী চিন্তাধারায় ‘আট আনায় জীবনের আলো কেনা’ শ্লোগানকে ধারণ করে ছাত্রছাত্রীদের হতে প্রতিমাসে আট আনা (৫০ পয়সা) সঞ্চয় করে গড়ে তোলা হয় জ্ঞানের আলো ট্রাস্ট। এই ট্রাস্টের উদ্যোগে বছরের শুরুতে বইমেলার আয়োজন করা হয় যার স্বত্ত্বাধিকার এই ছাত্রছাত্রীরাই। বইয়ের সাথে শিক্ষার্থীদের নিবিড় বন্ধন গড়ে তোলাই এর লক্ষ্য।

শিক্ষার গুনগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের সাথে শিক্ষার্থীদের ‘মিট দ্য ডিসি’ শীর্ষক উদ্ভাবনী কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। মেধায়, মননে, পোষাকে, আচরণে, শৃঙ্খলায়, নেতৃত্বে, সাধারণ জ্ঞানে, বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিতি ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ভিত্তিতে সেরা ১০ জন শিক্ষার্থীর সাথে মাসে একবার জেলা প্রশাসকের সাক্ষাত ও মতবিনিময়ের প্লাটফরম এই মিট দ্য ডিসি। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক শিক্ষার্থীদের তার স্বাক্ষরিত কার্ড প্রদান করেন এবং স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেদের সমস্যা নিরোধ ও সম্ভাবনা সৃষ্টির কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। এর ধারাবাহিকতায় উপজেলা পর্যায়ে ‘মিট দ্য ইউএনও’ চালু করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের এসব উদ্যোগ ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, নারী শিক্ষা প্রসার, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ, শিক্ষাকে মানসম্মত, সর্বব্যাপী ও ফলপ্রস‚ করে তুলতে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও নাগরিক মঞ্চের সদস্য কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী এই প্রতিষ্ঠান প্রসঙ্গে বলেন, এ ধরেন একটি ভাল মানের স্কুলের দাবি ছিলো জেলাবাসির। আমরা প্রত্যাশা করি জেলা স্কুল কিংবা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে শিশু কিশোরদের ভর্তি যুদ্ধে না নিয়ে জেলা প্রশাসন স্কুল ও কলেজের প্রতি অভিভাবকরা তাদের আস্থার স্থল হবে।