থামছে না ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনা। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে পুরো ব্যাংকিং খাতে এক ভয়াবহ চক্র গড়ে উঠেছে। তারা গ্রাহকদের ভিসা কার্ড, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড বিভিন্ন ভাবে হ্যাক করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। গ্রাহকদের কার্ড নম্বর চুরি করে নতুন কার্ড তৈরি করে কেনাকাটাসহ এটিএম মেশিন থেকে টাকা উত্তোলন করে নিচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের পিন নম্বর জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ব্যাংকেরই কিছু অসাধু কর্মকর্তারও যোগসাজশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে এসব জালিয়াতিতে। এই চক্রটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক হ্যাকারদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে।
কিছু কিছু ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি ঠেকাতে নির্দিষ্ট সময় বন্ধ রাখছে এটিএম মেশিনের কার্যক্রম। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহকরা। বাংলাদেশে বড় ধরনের হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি থাকা সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিক বার সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে ব্যাংকগুলোকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটিএম মেশিন বন্ধ রেখে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি ঠেকানো যাবে না।
আইটি দিয়েই আইটি সমস্যার সমাধান করতে হবে। জানা গেছে, বিভিন্ন সময় ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা আটক হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। তদের বিরুদ্ধে কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ও পাওয়া যায়। এবং জব্দ ও করা হয় অপরাধমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইস।
ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড জালিয়াতির কোনো ঘটনা প্রকাশ পেলে স্বভাবতই তা ব্যাংকের গ্রাহকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দেয়। গত কয়েক বছরে এ ধরনের বেশকিছু জালিয়াতির ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়েছে। সম্প্রতি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করে ঢাকায় আমিনুল নামের এক ব্যবসায়ীর নিকট থেকে ১লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা ও মাগুরায় ইফতেখার নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২লক্ষ দশ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।
এসব কাজে যারা জড়িত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জোরালো তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করতে হবে। এই অপরাধীরা সাধারণ মানুষের ব্যাংক আমানতের টাকা চুরিতে লিপ্ত, কাজেই তাদের সাজা হতে হবে কঠোর। সেই সঙ্গে ব্যাংকের গ্রাহকদেরও সচেতন হতে হবে নিজেদের পিন কোড ব্যবহারে।
তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে ব্যাংকগুলোকে। এটা ঠিক, প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে গত এক-দেড় দশকে দেশের ব্যাংকিং কার্যক্রমে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম , মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদি সেবার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো তাদের ব্যাংকিং সেবাকে গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। তবে দেখা যাচ্ছে, এসব ক্ষেত্রে নানা জালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনাও ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকদের নানাভাবে বিড়ম্বনার শিকারও হতে হচ্ছে। এসব রোধে ব্যাংকগুলোকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। জোরদার করতে হবে নজরদারি কার্যক্রম। কারণ অনেক সময় ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড জালিয়াত চক্রের সঙ্গে ব্যাংকের কর্মচারীদেরও যোগসাজশ থাকে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকে অপরাধ-দুর্নীতির প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেসব ঘটনার সঙ্গে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া গেছে। মোটকথা, ব্যাংকিং সেবা নিতে গিয়ে কেউ যেন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে মূলত সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষকেই। বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনই তৎপর না হলে সম্প্রতি ই-কমার্স খাতে ঘটে যাওয়া অনিয়মের মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে ভূক্তভোগী মহল মনে করেন।
প্রিন্ট