ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কালো চালেই যত ভালো

এই প্রথম পরীক্ষামূলক মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের আদর্শ কৃষক শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ লিটন ‘ব্ল্যাক রাইস’ বা কালো চালের ধান চাষ করে সাড়া ফেলেছেন। কৃষক লিটন ৬৫ শতক জমিতে অত্যন্ত পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত দামি এই ধান চাষ করেছেন। নতুন প্রজাতির এ ধান দেখতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করছে তার জমিতে। কালো ধান চাষাবাদ অন্যান্য আধুনিক ধান চাষের মতোই। দৃষ্টিনন্দন এ ধানের ফলন বেশি। এতে কোনো অতিরিক্ত সার বা পানির প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় না অতিরিক্ত পরিচর্যারও। ব্যতিক্রমী ও দুর্লভ এই ধান চাষে এলাকার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে অনেক দামি ও দুর্লভ এই ধান রোপণ করে কৃষকরাও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারবেন বলে জানিয়েছে মহম্মদপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ। এই ধানের চালের ভাত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে জানিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

জেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, থ্যাইল্যান্ডে কালো জাতের এই ধানের ব্যাপক চাষ হয়। সে দেশের মানুষের প্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে এই ধানের চাল।গতকাল সোমবার সকালে রাজাপুর ইউনিয়নের নাওভাঙ্গা এলাকায় ডায়াবেটিস প্রতিরোধী নতুন কালো ধানের ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবু আব্দুল্লাহেল কাফী, ইউএনও রামানন্দ পাল, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সোবহান, রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বিশ্বাস, উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার, রাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাখারুল ইসলাম প্রমুখ।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দুই মাস আগে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নিজ অর্থায়নে প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাঁচজন আদর্শ কৃষককে ৫ কেজি করে কালো ধানের বীজ দেওয়া হয়। উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় প্রায় আট বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে এই কালো ধানের চাষ করা হয়েছে। সফল চাষ ও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। সফলতার সম্ভাবনা দেখতে পেয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগ এই জাতের ধান চাষে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ ও সচেতনতা বাড়াতে পরিকল্পনা করছে। কৃষি অধিদপ্তরের গবেষকরা এই ধানের ওপর ব্যাপক গবেষণা করে জানিয়েছেন এই ধানের চাল ডায়াবেটিস, ক্যান্সার নিরাময়সহ আ্যান্টিবোডি তৈরীতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কৃষক শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ লিটন বলেন, প্রথমে ইউটিউবে দেখে কালো ধান সম্পর্কে জানতে পেরে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে বীজ সংগ্রহ করেন। শুরু থেকেই কৃষি কর্মকর্তারা ফসলের তদারকিসহ তাকে সব ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। আগামী মৌসুমে বেশি জমিতে এই ধানের চাষ করে তিনি স্বাবলম্বী হতে চান। বিনোদপুর ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের কালো ধান চাষি মাসুদ শেখ জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ৩৩ শতক জমিতে তিনি কালো ধান চাষ করেছেন। ফলনও ভালো পেয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোকছেদুল মোমিন বলেন, এই জাতের ধানের চালে বিভিন্ন ঔষধি গুণ রয়েছে। এই চালের ভাত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণসহ ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।কালো ধানের গুণাগুণ সম্পর্কে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুস সোবহান বলেন, মূলত এ জাতের ধানের রং সোনালি বা কালচে হয়। তবে চাল একেবারে কুচকুচে কালো। কালো চালে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। কালো ধানে ডায়াবেটিস প্রতিরোধক ক্ষমতা রয়েছে। এ চাল অনেক উপকারী। পুষ্টিসমৃদ্ধ এই চাল কৃষি অর্থনীতিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, এই মূল্যবান ধানের জাত খুব দ্রুত দেশের কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামানন্দ পাল বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সহায়তার থ্যাইল্যান্ড থেকে এ ধানের বীজ সংগ্রহ করে কৃষকদের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হচ্ছে। ফলন এবং কার্যকারীতা সঠিক হলে এই ধানের চাষাবাদ বৃদ্ধি করা হবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

কালো চালেই যত ভালো

আপডেট টাইম : ১১:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ অক্টোবর ২০২১
শফিকুল ইসলাম জীবন, মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধিঃ :
এই প্রথম পরীক্ষামূলক মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের আদর্শ কৃষক শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ লিটন ‘ব্ল্যাক রাইস’ বা কালো চালের ধান চাষ করে সাড়া ফেলেছেন। কৃষক লিটন ৬৫ শতক জমিতে অত্যন্ত পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত দামি এই ধান চাষ করেছেন। নতুন প্রজাতির এ ধান দেখতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করছে তার জমিতে। কালো ধান চাষাবাদ অন্যান্য আধুনিক ধান চাষের মতোই। দৃষ্টিনন্দন এ ধানের ফলন বেশি। এতে কোনো অতিরিক্ত সার বা পানির প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় না অতিরিক্ত পরিচর্যারও। ব্যতিক্রমী ও দুর্লভ এই ধান চাষে এলাকার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে অনেক দামি ও দুর্লভ এই ধান রোপণ করে কৃষকরাও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারবেন বলে জানিয়েছে মহম্মদপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ। এই ধানের চালের ভাত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে জানিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

জেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, থ্যাইল্যান্ডে কালো জাতের এই ধানের ব্যাপক চাষ হয়। সে দেশের মানুষের প্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে এই ধানের চাল।গতকাল সোমবার সকালে রাজাপুর ইউনিয়নের নাওভাঙ্গা এলাকায় ডায়াবেটিস প্রতিরোধী নতুন কালো ধানের ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবু আব্দুল্লাহেল কাফী, ইউএনও রামানন্দ পাল, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সোবহান, রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বিশ্বাস, উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার, রাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাখারুল ইসলাম প্রমুখ।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দুই মাস আগে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নিজ অর্থায়নে প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাঁচজন আদর্শ কৃষককে ৫ কেজি করে কালো ধানের বীজ দেওয়া হয়। উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় প্রায় আট বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে এই কালো ধানের চাষ করা হয়েছে। সফল চাষ ও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। সফলতার সম্ভাবনা দেখতে পেয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগ এই জাতের ধান চাষে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ ও সচেতনতা বাড়াতে পরিকল্পনা করছে। কৃষি অধিদপ্তরের গবেষকরা এই ধানের ওপর ব্যাপক গবেষণা করে জানিয়েছেন এই ধানের চাল ডায়াবেটিস, ক্যান্সার নিরাময়সহ আ্যান্টিবোডি তৈরীতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কৃষক শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ লিটন বলেন, প্রথমে ইউটিউবে দেখে কালো ধান সম্পর্কে জানতে পেরে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে বীজ সংগ্রহ করেন। শুরু থেকেই কৃষি কর্মকর্তারা ফসলের তদারকিসহ তাকে সব ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। আগামী মৌসুমে বেশি জমিতে এই ধানের চাষ করে তিনি স্বাবলম্বী হতে চান। বিনোদপুর ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের কালো ধান চাষি মাসুদ শেখ জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ৩৩ শতক জমিতে তিনি কালো ধান চাষ করেছেন। ফলনও ভালো পেয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোকছেদুল মোমিন বলেন, এই জাতের ধানের চালে বিভিন্ন ঔষধি গুণ রয়েছে। এই চালের ভাত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণসহ ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।কালো ধানের গুণাগুণ সম্পর্কে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুস সোবহান বলেন, মূলত এ জাতের ধানের রং সোনালি বা কালচে হয়। তবে চাল একেবারে কুচকুচে কালো। কালো চালে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। কালো ধানে ডায়াবেটিস প্রতিরোধক ক্ষমতা রয়েছে। এ চাল অনেক উপকারী। পুষ্টিসমৃদ্ধ এই চাল কৃষি অর্থনীতিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, এই মূল্যবান ধানের জাত খুব দ্রুত দেশের কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামানন্দ পাল বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সহায়তার থ্যাইল্যান্ড থেকে এ ধানের বীজ সংগ্রহ করে কৃষকদের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হচ্ছে। ফলন এবং কার্যকারীতা সঠিক হলে এই ধানের চাষাবাদ বৃদ্ধি করা হবে।


প্রিন্ট