হামাক সকল জমি প্রায় নদীতি ভাঙ্গি গিছে। এহন বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নাই, কহন জানি বাড়িডাও ভাঙ্গি যাবি। রাত্রির ঘোম হয়না আতংকে দিন কাটাচ্ছি। এমনটি বলেছিলেন ধীরেন গোয়ালী (৬০) নামের একজন বৃদ্ধ।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও মাগুরার মোহাম্মদপুর এ দু’ উপজেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে খরস্রোতা মধুমতী নদী আর এর তীরবর্তী বিশাল এলাকা জুড়ে লাখ মানুষের বসবাস। বর্ষা এলে দু পাড়ের জনগণের নির্ঘুম সময় কাটে। প্রতি বছর নদী ভাঙনের ধরণ পাল্টে বিভিন্ন গ্রাম তার কবল গ্রাসে গিলে খেয়েছেন। তবে এবার বর্ষায় বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের লংকারচর গ্রামের ৯নং ওয়ার্ডের নদী পাড় এলাকার লোকজন প্রতিদিন নদী ভাঙ্গনের আতংকে দিন পার করছে ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদীর পাড়ের ফসলী ও বিভিন্ন প্রকার গাছের বাগানের ৩০ একর জমি এখন নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। এবং ঝুঁকিতে রয়েছে ৩৫০ নদী পাড়ের পরিবার।
এইতো সেদিনের কথা ধীরেন গোয়ালীর গোয়াইল ঘরে ভেতর চারটা গাভী বাঁধা ছিল। সে গরু স্থান পরিবর্তন করতে করতে খরস্রোতা মধুমতী তার গোহাইল ঘর সহ বাঁশ বাগানও গিলে খেয়েছে।
এমনও অনেক পরিবারের জমি নদীতে ভেঙে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ কামিনি গোয়ালি,রাধন গোয়ালি,রুপালী গোয়ালি,ধিরেন গোয়ালি,অচিন্ত মন্ডল,অধির,হরেন মন্ডল,গদাই বৈদ্য,বলাই সরকার ,রনি,বিষ্ণু মন্ডল,শংকর সরকার,অমল গাইন,সুবাস গাইন,নিমাই বিশ্বাস,রগুনাথ মন্ডলসহ আরও অনেকে।
ওই নদী পাড়ের লোকজন এ প্রতিবেদককে বলেন, এ নদী প্রতি বছর হালকা ভেঙে থাকলেও এ বছর বিশাল আকারের ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে এ ভাঙন প্রতিরোধে নেততো দুরে থাক সরকারের পক্ষ থেকেও কোন প্রকার সহযোগিতা এখনও আসেনি।
তারা আরও বলেন, বর্ষাকালিন মধুমতি নদী থেকে প্রতিদিন অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে চলছে এবং বর্ষার পরবর্তী সময়ে ভেকু মেশিন দিয়ে নদীর বালু কেটে শতশত ট্রাক, হেক্কর যোগে অন্য স্থানে বালু নিয়ে বাণিজ্যে নিয়োজিত রয়েছে কিছু প্রভাবশালী মহল। এর ফলে বর্ষা এলেই নদী ভাঙনের তিব্রতা ক্রমাগত বেড়েই চলছে।
স্থানীয় ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ হাকিম খালাসী বলেন, প্রতিদিন নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য হুমকির মুখে আমার ওয়ার্ডসহ হাজার পরিবার। তবে বিশেষ করে লংকারচর হাতেমের ঘাট স্থান থেকে বালু উত্তোলন বেশি হয়। যার জন্য মধুমতি নদী ভাঙনের বিদ্রুপ প্রভাব পরে এ অঞ্চল জুড়ে। তাই সরকারের কাছে একটা দাবী নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করেতে হবে। এবং এ তিব্র আকারে ভাঙন রোধে যথা সময়ে জিও ব্যাগ না ফেললে ভবিষ্যত প্রজন্ম নিরেট অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে সর্বহারা জাতি হিসেবে কলঙ্কময় দিন পার করবে নদী পাড়ের লোকজন।
ঘোষপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এসএম ফারুক হোসেন বলেন, বোয়ালমারী উপজেলায় কেবল আমার ইউনিয়নেই দুটি গ্রাম লংকারচর এবং চরছাতিয়ানি ভাঙ্গন কবলিত। এ দুই গ্রামের অনেক জমি,ঘর-স্থাপনা মধুমতির পেটে চলে গেছে। আমরা চাই সরকারের পক্ষ থেকে নদী ভাঙন প্রতিরোধ করতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, নদী ভাঙনের বিষয় এখনও আমাদের জানা নেই। তবে অবশ্যই ওই একালায় গিয়ে খোঁজ নেয়ার পরে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রিন্ট