ফরিদপুরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের উদ্যোগে এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বিকেলে ফরিদপুর শহরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুর জেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মৌলানা আমজাদ হোসেন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন জেলার সাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুল নাসির।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক। এছাড়া বক্তৃতা দেন দলের প্রধান উপদেষ্টা শায়খুল হাদিস আল্লামা হেলাল উদ্দিন সাহেব, উপদেষ্টা শায়খুল হাদিস আল্লামা আবুল হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমিন, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি শরাফত হুসাইন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা, মাওলানা আবুল হোসেন জালালী, সহ-বায়তুল মাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান, সহ প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা জহিরুল ইসলাম, এবং ফরিদপুর জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি সুবাহান মাহমুদ, সহ-সভাপতি মুফতি মাহমুদ হাসান ফায়েক, সহ-সভাপতি মাওলানা মিজানুর রহমান মোল্লা।
জনসভায় বক্তারা সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ওলামা-মাশায়েখদের বিরুদ্ধে গুম, খুন, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা, এবং জেলবন্দি করা হয়েছে, যা ভুলে যাওয়ার মতো নয়। তারা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে ইসলামের পতাকা চিরতরে নিষিদ্ধ করার জন্য আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগীরা নানা পন্থায় কাজ করে যাচ্ছে। বক্তারা আরও বলেন, গত ৫ই আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের ক্ষমতা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হটিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বক্তারা দাবি জানান, ইসকনকে অবিলম্বে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আবেদন জানান। চট্টগ্রামের একজন আইনজীবীকে হত্যা করার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে। তারা বলেন, “আমরা একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে সকলের মধ্যে সম্প্রীতি থাকবে।”
এছাড়া, বক্তারা ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার পঞ্চপল্লীতে মুসলমান হত্যার সুষ্ঠু বিচার না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন এবং বলেন, “যদি সেই হত্যার বিচার করা হতো, তাহলে চট্টগ্রামের আইনজীবী হত্যার পুনরাবৃত্তি হতো না।” তারা অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা ভারতের সহায়তায় ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছেন এবং দেশের সংবিধান ভঙ্গ করেছেন।
বক্তারা আরও বলেন, “বিগত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছেন, ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করে দিয়েছেন এবং জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়েছেন।” তারা অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস করা, যাতে দেশ আর কখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে।
বক্তারা উল্লেখ করেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগ নতুন করে ক্ষমতায় আসতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগানোর জন্য ষড়যন্ত্র করছে। তারা সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান এবং বলেন, “যদি জনগণ চায়, তবে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, না হলে যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করতে হবে।”
এছাড়া, তারা দাবি করেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক একটি সংবিধান ভিত্তিক হওয়া উচিত, যাতে বাংলাদেশে আর কোনো বহিরাগত আধিপত্য থাকবে না।
আরও পড়ুনঃ কালুখালীতে উদ্ভাবিত লাগসই প্রযুক্তির প্রদর্শনী উদ্বোধন
জনসভায় বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিলের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে যোগ দেন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে দেশ ও মানুষের কল্যাণ কামনায় মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
প্রিন্ট