ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার তিনটি স্থানে মধুমতী নদীর ভাঙ্গন রোধে জিওব্যাগ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক উপসহকারী প্রকৌশলীর যোগসাজশে জিওব্যাগে কম বালুভর্তি করে গত এক মাস ধরে চলছে মধুমতীর বিধ্বংসী ভাঙনরোধের চেষ্টা।
গত সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাচুড়িয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ও দক্ষিণ চরনারানদিয়া এবং পাচুড়িয়া বাঁশতলা গ্রামের নদী তীরবর্তী স্থানে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনে চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
এ অবস্থায় ওই তিনটি ভাঙ্গন কবলিত স্থানে পৃথকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৭ হাজার ৮৯০টি জিওব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেয় সরকার। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি ৫০ মিটার কাজের ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ বলে জানা গেছে। বালুভর্তি প্রতিটি জিওব্যাগের ওজন হতে হবে ১৭৫/১৮০ কেজি। গত ২৭ আগস্ট থেকে ফেলা বালুভর্তি ওইসব জিওব্যাগের ওজন কোনভাবেই ১৫০ কেজির বেশি হবে না বলে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার বাসিন্দারা জানান।
বাঁশতলা নদী ভাঙ্গন পাড়ের বাসিন্দা ষাটোর্ধ মো. সিরাজ মজুমদার বলেন, ‘জিওব্যাগে কম বালুভর্তির বিষয়ে শ্রমিকদের কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম। পরিপূর্ণ বালুভর্তি জিওব্যাগ বেশি ভারি হওয়ায় ভাঙ্গন কবলিত স্থানে ফেলতে তাদের কষ্ট হয়। এ কারণে তারা জিওব্যাগের দুই-তৃতীয়াংশ বালুভর্তি করে নদীতে ফেলছে।’ কম বালুভর্তি জিওব্যাগ নদীতে ফেললেও তদারকির দায়িত্বে থাকা উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ব্যাপারে নির্বিকার।
বালুভর্তি জিওব্যাগ ওজন করার জন্য জিওব্যাগ ভরার স্থানে ওয়েট মেশিন থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সরেজমিনে কোনো ওয়েট মেশিন বা পরিমাপক যন্ত্র পাওয়া যায়নি। পশ্চিম চরনারানদিয়া গ্রামের নদী ভাঙনকবলিত স্থানে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার ঠিকাদারি কাজ পেয়েছেন আলফাডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক তপন মিয়া, দক্ষিণ চরনারানদিয়া গ্রামের নদী ভাঙনকবলিত স্থানে জিওব্যাগ ফেলার ঠিকাদারি কাজ পেয়েছেন সাইফুল ইসলাম এবং পাচুড়িয়া বাঁশতলায় জিওব্যাগ ফেলার ঠিকাদারি কাজ পেয়েছেন মো. তাজু খান।
নদী ভাঙনকবলিত স্থানে জিওব্যাগ ফেলার কাজের তদারকির দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন আহমেদ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যসহকারী মো. এনায়েত হোসেন।
এ ব্যাপারে পাচুড়িয়া বাঁশতলা স্থানে জিওব্যাগ ফেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার মো. তাজু খানের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন। কম বালুভর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে জিওব্যাগের সেলাইম্যান আবুল কালাম বলেন, হাতের পাঁচটা আঙ্গুল সমান হয় না।
কোনো বস্তায় কম আবার কোন বস্তায় বেশি হতে পারে। এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (আলফাডাঙ্গা জোন) মো. রাসেল হোসেন বলেন, জিওব্যাগে বালুভর্তি করে আমরা ওজন করি। এরপর নদীতে ফেলি। জিওব্যাগে কম বালুভর্তি করার কোন সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় প্রকৌশলী সন্তোষ কর্মকার বলেন, প্রতিটি বালুভর্তি জিওব্যাগের ওজন হবে ১৭৫/১৮০ কেজি। জিওব্যাগ পরিমাপের জন্য ওয়েট মেশিন আছে। ওজনে কম দেয়ার সুযোগ নেই।
প্রিন্ট