ঢাকা , মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo লালপুরের পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১, আহত ৫ Logo ফরিদপুরে আ.লীগের ব্যানারে মিছিল দেওয়ার প্রস্তুতিকালে বিএনপি নেতার ছেলেসহ আটক ৮ Logo বহলবাড়ীয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সম্মেলন Logo শ্রমিকদল নেতাদের সহযোগীতায় জোরপূর্বক জমি দখলে শসস্ত্র হামলা Logo ডিপ্লোমা ইন্টার্ন নার্সদের একদফা দাবিতে দেশব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত Logo ছাত্রদল নেতা পারভেজ হত্যার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল Logo সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনা সভা Logo আলফাডাঙ্গায় শিক্ষকদের সংবর্ধনা ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করলেন জেলা প্রশাসক Logo মুকসুদপুর উপজেলা পরিষদের ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ Logo ভূরুঙ্গামারীতে নাশকতা বিরোধী বিশেষ অভিযানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৫ নেতা গ্রেফতার
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কুষ্টিয়ায় ‘ভন্ড পীর’ গ্রেফতার

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের কথিত ‘ভন্ড পীর’ আব্দুর রহমান ওরফে শামীম।

ইসলাম ধর্মের অবমাননা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের কথিত ‘ভন্ড পীর’ আব্দুর রহমান ওরফে শামীমকে (৬৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে উপজেলার পশ্চিম-দক্ষিণ ফিলিপনগর গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে এক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আব্দুর রহমান ওরফে শামীম দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ ফিলিপনগর গ্রামের মৃত জেসের মাস্টারের ছেলে। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়েরের পর তাকে গ্রেফতার করা হয়।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড় আইলচারা গ্রামের মৃত হেলাল উদ্দিনের পুত্র হক্কানী দরবারের পরিচালক খালিদ হাসান সিপাই বাদী হয়ে শামীমকে আসামি করে মামলাটি করেন।

মামলার বাদী খালিদ হাসান সিপাই জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ভন্ড শামীম ও তার অনুসারীরা স্থানীয় সহজ সরল মানুষকে ধর্মের দোহায় দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছিলো। তার ওই সব কর্মকান্ড বন্ধের জন্য আদালতের সহায়তা কামনা করে এ মামলাটি করেছি।

‘ধর্ম নিয়ে কথিত পীরের ভন্ডামি’ শিরোনামে স্থানীয়, জাতীয় ও টিভি চ্যানেল ও একাধিক অনলাইন পত্রিকাতে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

খবর প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। সে সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার সাধারণ মানুষ অবিলম্বে ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড বন্ধের পাশাপাশি ভন্ড শামীমের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলামের কাছে শামীমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন স্থানীয়রা।

চার মাস আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মতো ভিডিও এবং ছবি ভাইরাল হলে এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এরপর ওই এলাকায় নিজেদের লোকজন নিয়ে শোডাউন দেন শামীম।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ভন্ড শামীম আয়েশি ভঙ্গিতে ফুলের মালা গলায় দিয়ে চেয়ারে বসে আছেন। চারদিক থেকে তাকে ঘিরে রেখে নারী-পুরুষরা নেচে-গেয়ে ‘হরে হরে, হরে হরে, হরে শামীম, হরে শামীম’ বলে সবাই চিৎকার করছেন। শামীম একটি বড় গামলায় দুই পা দিয়ে রেখেছেন। আর ভক্তরা দুধ দিয়ে তার পা ধুয়ে দিচ্ছেন, কেউবা চুমু খাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার হামাগুড়ি দিয়ে পায়ে মাথা ঠুকে তাকে সিজদা করছেন।

এর আগে গত ১৬ মে রাতে পশ্চিম-দক্ষিণ ফিলিপনগর গ্রামের মহাসিন আলীর কিশোর ছেলে আঁখি (১৭) ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। মহাসিন আলী ওই গ্রামের কথিত ভন্ড পীর শামীমের অনুসারী হওয়ায় ছেলের মরদেহ তার হাতে তুলে দেন। ওই দিন রাতে শামীম তার অনুসারীদের নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে নেচে-গেয়ে আঁখির মরদেহ দাফন করেন।

পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় আলেম-ঈমাম-মুয়াজ্জিনদের নেতৃত্বে সমাবেশ আহ্বান করা হলেও পুলিশের আশ্বাসে তা থেমে যায়। সংশ্লিষ্ট এলাকার মুসলিম ও ইসলাম ধর্ম প্রসঙ্গে জানাশোনা ভালো এমন ব্যক্তিরা ঘুরছিলেন উপজেলা প্রশাসন আর দৌলতপুর পুলিশের দ্বারে দ্বারে।

অবশেষে হক্কানী দরবারের পরিচালক মো: খালিদ হাসান সিপাই কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা করেন।

স্থানীয়রা জানান, শামীমের ভক্ত-অনুসারীদের বেশির ভাগই অল্প বয়সী তরুণ-তরুণী। শামীম নিজে এবং তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন অনুসারী অশিক্ষিত এবং অল্প শিক্ষিত মানুষজনকে মগজ ধোলাই করে শিষ্যত্ব লাভে বাধ্য করেন। দুই বছর ধরে তার আস্তানায় ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড চললেও মূলত গত ১৬ মার্চ আাঁখি নামে কিশোরের লাশ ঢোল-তবলা বাজিয়ে দাফন করার পর থেকে শামীম সবার আলোচনায় আসেন।

শামীম পশ্চিম-দক্ষিণ ফিলিপনগর গ্রামের ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ১৯৮৪ সালে ফিলিপনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। কুমারখালী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ভেড়ামারা কলেজ থেকে বিকম পাস করে পরবর্তীতে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এম কম পাস করেন।

পড়ালেখা শেষ করে ঢাকার জিনজিরা এলাকায় একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন শামীম। পরবর্তীতে ওই চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জের গোলাম-এ-বাবা কালান্দার জাহাঙ্গীর সুরেশ্বরীর মুরিদ হন এবং খাদেম হিসেবে সেখানে বসবাস শুরু করেন। মুরিদ হওয়ার পর থেকে শামীম পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরিবারের সদস্যরা অনেক খোঁজাখুজি করেও শামীমের সন্ধান লাভে ব্যর্থ হন।

২০০৭ সালে শামীম বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু সে বিয়ে ২-৩ মাসের বেশি টেকেনি। বছর দুয়েক আগে হঠাৎ করেই শামীম নিজ গ্রাম ইসলামপুর ফিরে আসেন এবং তার বাড়িতেই আস্তানা গড়ে তোলেন।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, কয়েক মাস আগে শামীমের ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড জানার পর আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সর্তক করে দিয়েছিলাম।

শামীমের ভাই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফজলুর রহমান (সান্টু মাস্টার) বলেন, যত দ্রæত সম্ভব তাকে বিচারের আওতায় নেওয়া উচিত। তার কর্মকান্ডে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। তাকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ।

কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম সারোয়ার জাহান বাদশা বলেন, আমরা একই গ্রামের মানুষ। প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় শামীম নিখোঁজ ছিল। ইসলামের নামে শামীম আস্তানা বানিয়ে যা করছে তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দৌলতপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম জানান, শামীমের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা ছাড়াও মানুষকে জিম্মি করে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও চাঁদাবাজিসহ মামলার এজাহারে আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন জানান, আস্তানায় অভিযান চালিয়ে শামীমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

লালপুরের পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১, আহত ৫

error: Content is protected !!

কুষ্টিয়ায় ‘ভন্ড পীর’ গ্রেফতার

আপডেট টাইম : ০৪:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
ইসমাইল হোসেন বাবু, কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ :

ইসলাম ধর্মের অবমাননা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের কথিত ‘ভন্ড পীর’ আব্দুর রহমান ওরফে শামীমকে (৬৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে উপজেলার পশ্চিম-দক্ষিণ ফিলিপনগর গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে এক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আব্দুর রহমান ওরফে শামীম দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ ফিলিপনগর গ্রামের মৃত জেসের মাস্টারের ছেলে। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়েরের পর তাকে গ্রেফতার করা হয়।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড় আইলচারা গ্রামের মৃত হেলাল উদ্দিনের পুত্র হক্কানী দরবারের পরিচালক খালিদ হাসান সিপাই বাদী হয়ে শামীমকে আসামি করে মামলাটি করেন।

মামলার বাদী খালিদ হাসান সিপাই জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ভন্ড শামীম ও তার অনুসারীরা স্থানীয় সহজ সরল মানুষকে ধর্মের দোহায় দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছিলো। তার ওই সব কর্মকান্ড বন্ধের জন্য আদালতের সহায়তা কামনা করে এ মামলাটি করেছি।

‘ধর্ম নিয়ে কথিত পীরের ভন্ডামি’ শিরোনামে স্থানীয়, জাতীয় ও টিভি চ্যানেল ও একাধিক অনলাইন পত্রিকাতে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

খবর প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। সে সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার সাধারণ মানুষ অবিলম্বে ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড বন্ধের পাশাপাশি ভন্ড শামীমের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলামের কাছে শামীমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন স্থানীয়রা।

চার মাস আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মতো ভিডিও এবং ছবি ভাইরাল হলে এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এরপর ওই এলাকায় নিজেদের লোকজন নিয়ে শোডাউন দেন শামীম।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ভন্ড শামীম আয়েশি ভঙ্গিতে ফুলের মালা গলায় দিয়ে চেয়ারে বসে আছেন। চারদিক থেকে তাকে ঘিরে রেখে নারী-পুরুষরা নেচে-গেয়ে ‘হরে হরে, হরে হরে, হরে শামীম, হরে শামীম’ বলে সবাই চিৎকার করছেন। শামীম একটি বড় গামলায় দুই পা দিয়ে রেখেছেন। আর ভক্তরা দুধ দিয়ে তার পা ধুয়ে দিচ্ছেন, কেউবা চুমু খাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার হামাগুড়ি দিয়ে পায়ে মাথা ঠুকে তাকে সিজদা করছেন।

এর আগে গত ১৬ মে রাতে পশ্চিম-দক্ষিণ ফিলিপনগর গ্রামের মহাসিন আলীর কিশোর ছেলে আঁখি (১৭) ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। মহাসিন আলী ওই গ্রামের কথিত ভন্ড পীর শামীমের অনুসারী হওয়ায় ছেলের মরদেহ তার হাতে তুলে দেন। ওই দিন রাতে শামীম তার অনুসারীদের নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে নেচে-গেয়ে আঁখির মরদেহ দাফন করেন।

পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় আলেম-ঈমাম-মুয়াজ্জিনদের নেতৃত্বে সমাবেশ আহ্বান করা হলেও পুলিশের আশ্বাসে তা থেমে যায়। সংশ্লিষ্ট এলাকার মুসলিম ও ইসলাম ধর্ম প্রসঙ্গে জানাশোনা ভালো এমন ব্যক্তিরা ঘুরছিলেন উপজেলা প্রশাসন আর দৌলতপুর পুলিশের দ্বারে দ্বারে।

অবশেষে হক্কানী দরবারের পরিচালক মো: খালিদ হাসান সিপাই কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা করেন।

স্থানীয়রা জানান, শামীমের ভক্ত-অনুসারীদের বেশির ভাগই অল্প বয়সী তরুণ-তরুণী। শামীম নিজে এবং তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন অনুসারী অশিক্ষিত এবং অল্প শিক্ষিত মানুষজনকে মগজ ধোলাই করে শিষ্যত্ব লাভে বাধ্য করেন। দুই বছর ধরে তার আস্তানায় ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড চললেও মূলত গত ১৬ মার্চ আাঁখি নামে কিশোরের লাশ ঢোল-তবলা বাজিয়ে দাফন করার পর থেকে শামীম সবার আলোচনায় আসেন।

শামীম পশ্চিম-দক্ষিণ ফিলিপনগর গ্রামের ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ১৯৮৪ সালে ফিলিপনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। কুমারখালী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ভেড়ামারা কলেজ থেকে বিকম পাস করে পরবর্তীতে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এম কম পাস করেন।

পড়ালেখা শেষ করে ঢাকার জিনজিরা এলাকায় একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন শামীম। পরবর্তীতে ওই চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জের গোলাম-এ-বাবা কালান্দার জাহাঙ্গীর সুরেশ্বরীর মুরিদ হন এবং খাদেম হিসেবে সেখানে বসবাস শুরু করেন। মুরিদ হওয়ার পর থেকে শামীম পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরিবারের সদস্যরা অনেক খোঁজাখুজি করেও শামীমের সন্ধান লাভে ব্যর্থ হন।

২০০৭ সালে শামীম বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু সে বিয়ে ২-৩ মাসের বেশি টেকেনি। বছর দুয়েক আগে হঠাৎ করেই শামীম নিজ গ্রাম ইসলামপুর ফিরে আসেন এবং তার বাড়িতেই আস্তানা গড়ে তোলেন।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, কয়েক মাস আগে শামীমের ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড জানার পর আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সর্তক করে দিয়েছিলাম।

শামীমের ভাই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফজলুর রহমান (সান্টু মাস্টার) বলেন, যত দ্রæত সম্ভব তাকে বিচারের আওতায় নেওয়া উচিত। তার কর্মকান্ডে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। তাকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ।

কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম সারোয়ার জাহান বাদশা বলেন, আমরা একই গ্রামের মানুষ। প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় শামীম নিখোঁজ ছিল। ইসলামের নামে শামীম আস্তানা বানিয়ে যা করছে তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দৌলতপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম জানান, শামীমের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা ছাড়াও মানুষকে জিম্মি করে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও চাঁদাবাজিসহ মামলার এজাহারে আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন জানান, আস্তানায় অভিযান চালিয়ে শামীমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


প্রিন্ট