মোঃ আলম মৃধাঃ
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের সায়েদাবাদ (চর) এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় হানিফ মাস্টার গ্রুপ ও এরশাদ গ্রুপ। গত (২১ জুলাই) সোমবার ভোর পাঁচটার দিকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক নারী নিহত হন এবং আহত হন প্রায় ৮-১০ জন। নিহত নারী মোমেনা খাতুন (৫০) বলে জানা যায়।
সংঘর্ষের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তাৎক্ষণিক বিষয়টি নরসিংদী জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপার এবং বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে। পরে বিকেল ৪টায় যৌথবাহিনীর সমন্বয়ে চালানো হয় সাড়াসী অভিযান। অভিযানে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫৬ ইবি, বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের মেজর ইব্রাহিম আব্দুল্লাহ আসাদ।
এই অভিযানে, ‘এরশাদ গ্রুপ’-এর শীর্ষস্থানীয় নেতা ও একাধিক হত্যা-অস্ত্র মামলার পলাতক আসামি মোঃ সোহেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। যৌথবাহিনী জানায়, সোহেলের বিরুদ্ধে ৩টি হত্যা ও ২টি অস্ত্র আইনের মামলা সহ মোট ১১টি মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তারের পর সোহেলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয়:
১টি সিঙ্গেল ব্যারেল দেশীয় বন্দুক
৪টি একনলা দেশীয় বন্দুক
২টি সিলভার রঙের ম্যাগাজিন (N-7110 ও N-011 নম্বর সংবলিত)
৩০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি
৪ রাউন্ড রাইফেলের গুলি
১২টি কার্টিজ
১টি মোটরসাইকেল
৩টি মোবাইল ফোন
এই গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে অংশ নেয়:
৫৬ ইবি বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের ৪৪ জন সেনাসদস্য (নেতৃত্বে: মেজর ইব্রাহিম)
নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল হান্নান এর নির্দেশনায় ৬০ জন পুলিশ সদস্য (নেতৃত্বে: সিনিয়র এএসপি, রায়পুরা সার্কেল)
র্যাব-১১ এর ২৭ সদস্য (নেতৃত্বে: সিনিয়র এএসপি জুয়েল, নরসিংদী ক্যাম্প)
মোঃ মাসুদুর রহমান রুবেল, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, রায়পুরা উপজেলা
আটক সন্ত্রাসী ও উদ্ধারকৃত অস্ত্রসম্ভার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয়রা সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে চরাঞ্চলে রাজনৈতিক পালাবদল ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে ‘গ্রুপ রাজনীতি’ চরমে পৌঁছেছে। একসময় আওয়ামী লীগের অনুসারী থাকলেও, হানিফ ও এরশাদ গ্রুপ বর্তমানে বিএনপির ছায়াতলে গিয়ে ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে।
সেনা-র্যাব-পুলিশের সমন্বিত এই সফল অভিযানে আপাতত শান্তি ফিরে এসেছে রায়পুরা এলাকায়—এমনটাই জানান গ্রামের সাধারণ নিরীহ মানুষ।
প্রিন্ট