মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বাস্তবায়নে একটি গ্রামীণ সড়কের বেশকিছু অংশ গত কয়েক দিনের নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।। উপজেলা সদরের মহম্মদপুর-চরপাচুড়িয়া সড়কের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে ১০০ মিটার ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এ সড়কের আরো প্রায় ২০০ মিটার যে কোন সময় মধুমতী নদীতে বিলীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এলাকাবাসী ও এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চরপাচুড়িয়া ও পাচুড়িয়া গ্রামের অন্তত ৬ হাজার মানুষের যাতায়াতসুবিধার জন্য তাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় এমপি ড. বীরেন শিকদারের সহযোগিতায় উপজেলা শহরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটি পাকাকরণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কের তিন কিলোমিটার অংশে পিচঢালাই করা হয়। চলতি বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মধুমতী নদীর ভাঙনে চরপাচুড়িয়া গ্রামের সবুর মেম্বরের বাড়ির সামনের প্রায় ১০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীণ হওয়ায় উপজেলা শহরের সাথে বিচ্ছন্ন হয়েছে দুই গ্রামের প্রায় ৬ হাজার মানুষের। শহরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটি বিলীন হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে সাধারন মানুষ। রাস্তার কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় জীবনের ঝুকি নিয়ে হাটুপানি ডিঙ্গিয়ে যাতায়াত করছেন এপার ও ওপারের মানুষ।
গতকাল রবিবার সকালে সরজমিন পদির্শনে দেখা যায় রাস্তা পারাপারের করুন চিত্র। কেউ শিশুদের কাঁধে করে, কেউ বৃদ্ধা মাকে কোলে করে কোমর সমান পানিতে ভিজে প্রয়োজনের তাগিদে পারাপার হচ্ছেন। মালামাল পারাপারে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। চরপাচুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মহব্বত মিয়া বলেন, আমাদের এই দুই গ্রামের সাথে উপজেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি। দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সড়কটি এলজিইডি পাকাকরণের উদ্যোগ নিলে এলাকাবাসীর মধ্যে দুর্ভোগ লাঘবের আশার সঞ্চার হয়। কিন্তু সড়কটি নদীতে ভেঙ্গে যাওয়ায় বিকল্প কোন রাস্তা না থাকায় এলাকার ৬ হাজারের বেশী মানুষ বিপাকে পড়েছে। পাচুড়িয়া গ্রামের আমির হোসেন বলেন, কেউ অসুস্থ হলে জরুরিভাবে হাসপাতালে নেওয়ার সুযোগ নেই। মহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) হাবিবুর রহমান বলেন, ভাঙন রোধে দ্রæত পদক্ষেপ না নিলে সম্পূর্ণ সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আমরা কয়েকদিন আগে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানিয়েছি।
মহম্মদপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান রাবেয়া বেগম বলেন, এলাকার মানুষের দুর্ভোগ নিরসনে বিকল্প সড়ক নির্মাণের জন্য এলজিইডি কে অবহিত করা হয়েছে। তবে পানি না শুকানো প্রর্যন্তু বিকল্প সড়কের কাজ শুরু করা সম্ভব না। প্রাথমিকভাবে সড়কের ভাঙনকবলিত অংশে ভাঙন রোধে একটি প্রকল্প গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছি। এলজিইডির মহম্মদপুর উপজেলা কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসেন বলেন, নদীভাঙনের বিষয়ে জররি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য উপজেলা পরিষদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) অবহিত করা হয়েছে।
ইউএনও রামানন্দ পাল বলেন, সড়কের ভাঙন অংশ পরিদর্শন করে জনগনের দুরাবস্থার কথা ভেবে বালুর বস্তা ফেলে প্রাথমিকভাবে বিকল্প সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ব্যবস্থা গ্রহণে পাউবোকে বলা হয়েছে। মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. শ্রী বীরেন শিকদার বলেন, উপজেলা শহরের সাথে দুই গ্রামের মানষের সেতুবন্ধন রচনা করতে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে আমি রাস্তাটি নির্মান করিয়েছিলাম। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে রাস্তাটির কিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। রাস্তাটির অবশিষ্ট অংশ রক্ষার্থে আমি পানি উন্নোয়ন বোর্ড ও এলজিডি কে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছি। সাধারন মানষের চলাচলের কথা ভেবে প্রাথমিকভাবে বিকল্প সড়ক নির্মাণের জন্য আমি ইউএনও ও উপজেলা প্রকৌশলীকে বলেছি।
প্রিন্ট