ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

মোটরসাইকেলে একের পর এক গিরিপথ জয় গৃহবধূর

বাবার সঙ্গে মোটরসাইকেলে চেপে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগত পল্লবী ফৌজদারের (৩৯)। সেই থেকেই মোটরসাইকেল প্রীতি শুরু তার। বিশ্বের অন্যতম সেরা বাইকারদের মধ্যে নাম রয়েছে দিল্লির এই গৃহবধূর।

দুই ছেলের মা পল্লবী জানিয়েছেন স্বামী সেনা কর্মকর্তা পরীক্ষিৎ মিশ্রের সমর্থন না থাকলে একা তার পক্ষে এ কাজ সম্ভব হত না। তিনিই পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি, যিনি মোটরসাইকেল চালিয়ে ভারতের অন্যতম কঠিন গিরিপথ উমলিংলা পাস, সাথাতোলা পাস ও মানা পাস জয় করেছেন। সেই সঙ্গে একটি নতুন গিরিপথও আবিষ্কার করেছেন এই গৃহবধূ। নিজের বাইক ট্রায়াম্ফ বনিভিলের নামে সেই পাসের নাম রেখেছেন বনি লা।

গণমাধ্যমকে পল্লবী জানান, শুরুটা করেছিলেন বেঙ্গালুরু, উধমপুর, লক্ষ্ণৌ, জম্মু, শ্রীনগর ও পঞ্জাব শহরে একা মোটরসাইকেলে করে ঘুরে বেড়ানোর নেশা থেকে। তবে এ কাজ অতটা সহজ ছিল না। বাধা পেয়েছেন বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে।

jagonews

তিনি বলেন, বছর চারেক আগে প্রথম যখন এ কাজ শুরু করেন, তখন এক ছেলের বয়স ছিল ছয়, অন্য জনের নয়। সে সময় ‘সন্তানদের প্রতি দায়িত্ব নেই’ এমন কথাও শুনতে হয়েছে তাকে।

পল্লবী ২০১৫ সালের ৭ জুলাই প্রথম দিল্লি থেকে একা মোটরসাইকেল চালিয়ে ৩ হাজার কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে লাদাখে যান। এরপর একে একে ১৬টি পাস জয় করেছেন। যার মধ্যে আটটিরই উচ্চতা ছিল ৫ হাজার মিটারেরও বেশি।

মাত্র দু’মাস ধরে ওই পথের বিষয়ে গবেষণা করে গোটা এলাকার মানচিত্র নিজ হাতেই আঁকেন পল্লবী। এরপর মাত্র ২০ দিনে প্রথম বারের চেষ্টাতেই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতায় অবস্থিত লাদাখের মোট আটটি পাস জয় করেন । সঙ্গে ছিল জিপিএস ও উচ্চ প্রযুক্তির ক্যামেরা।

পল্লবী ইতোমধ্যেই নাম লিখিয়েছেন লিমকা বুক অব রেকর্ডসে। খারদুং লা, লাচুলং লা, তাগলাং লা, মারসিমিক লা, চাং লা-এই পাঁচটি পাস একই যাত্রাপথে জয় করেছেন বেশ কয়েক জন বাইকার। তবে এ বাদেও পল্লবী সাথাথো লা, কাকসাং লা ও হরি লা জয় করেছেন। এর আগে কোনো নারী তো নয়ই, কোনো পুরুষ বাইকারও জয় করেননি এই গিরিপথ।

jagonews

তিনি যেবার অন্যতম কঠিন ‘মোটরেবল মাউন্টেন পাস’ জয় করেন, সেই একই বছর একই পথে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন। প্রথম নারী হিসেবে ৫ হাজার ৬৩৮ মিটার উচ্চতার মানা পাস জয় করেছেন পল্লবী। একটা ওল্ড কাস্ট আয়রন বুলেট, একটা ট্রায়াম্ফ, একটা ডুকাটি স্ক্র্যাম্বলার আর একটা অ্যাভেঞ্জার- এই নিয়েই সব গিরিপথ জয় করেছেন তিনি।

এজন্য ২০১৭ সালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে পেয়েছেন নারীশক্তি সম্মাননা। উত্তরপ্রদেশ সরকারও তাকে ‘আউটস্ট্যান্ডিং গ্লোবাল উইম্যান’ সম্মানে ভূষিত করেছে।

এতা কিছুর মাঝে পল্লবীর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত ছিল উমলিং লা জয়ের মুহূর্ত। সংবাদ সংসস্থাকে পিটিআইকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

মোটরসাইকেলে একের পর এক গিরিপথ জয় গৃহবধূর

আপডেট টাইম : ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

বাবার সঙ্গে মোটরসাইকেলে চেপে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগত পল্লবী ফৌজদারের (৩৯)। সেই থেকেই মোটরসাইকেল প্রীতি শুরু তার। বিশ্বের অন্যতম সেরা বাইকারদের মধ্যে নাম রয়েছে দিল্লির এই গৃহবধূর।

দুই ছেলের মা পল্লবী জানিয়েছেন স্বামী সেনা কর্মকর্তা পরীক্ষিৎ মিশ্রের সমর্থন না থাকলে একা তার পক্ষে এ কাজ সম্ভব হত না। তিনিই পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি, যিনি মোটরসাইকেল চালিয়ে ভারতের অন্যতম কঠিন গিরিপথ উমলিংলা পাস, সাথাতোলা পাস ও মানা পাস জয় করেছেন। সেই সঙ্গে একটি নতুন গিরিপথও আবিষ্কার করেছেন এই গৃহবধূ। নিজের বাইক ট্রায়াম্ফ বনিভিলের নামে সেই পাসের নাম রেখেছেন বনি লা।

গণমাধ্যমকে পল্লবী জানান, শুরুটা করেছিলেন বেঙ্গালুরু, উধমপুর, লক্ষ্ণৌ, জম্মু, শ্রীনগর ও পঞ্জাব শহরে একা মোটরসাইকেলে করে ঘুরে বেড়ানোর নেশা থেকে। তবে এ কাজ অতটা সহজ ছিল না। বাধা পেয়েছেন বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে।

jagonews

তিনি বলেন, বছর চারেক আগে প্রথম যখন এ কাজ শুরু করেন, তখন এক ছেলের বয়স ছিল ছয়, অন্য জনের নয়। সে সময় ‘সন্তানদের প্রতি দায়িত্ব নেই’ এমন কথাও শুনতে হয়েছে তাকে।

পল্লবী ২০১৫ সালের ৭ জুলাই প্রথম দিল্লি থেকে একা মোটরসাইকেল চালিয়ে ৩ হাজার কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে লাদাখে যান। এরপর একে একে ১৬টি পাস জয় করেছেন। যার মধ্যে আটটিরই উচ্চতা ছিল ৫ হাজার মিটারেরও বেশি।

মাত্র দু’মাস ধরে ওই পথের বিষয়ে গবেষণা করে গোটা এলাকার মানচিত্র নিজ হাতেই আঁকেন পল্লবী। এরপর মাত্র ২০ দিনে প্রথম বারের চেষ্টাতেই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতায় অবস্থিত লাদাখের মোট আটটি পাস জয় করেন । সঙ্গে ছিল জিপিএস ও উচ্চ প্রযুক্তির ক্যামেরা।

পল্লবী ইতোমধ্যেই নাম লিখিয়েছেন লিমকা বুক অব রেকর্ডসে। খারদুং লা, লাচুলং লা, তাগলাং লা, মারসিমিক লা, চাং লা-এই পাঁচটি পাস একই যাত্রাপথে জয় করেছেন বেশ কয়েক জন বাইকার। তবে এ বাদেও পল্লবী সাথাথো লা, কাকসাং লা ও হরি লা জয় করেছেন। এর আগে কোনো নারী তো নয়ই, কোনো পুরুষ বাইকারও জয় করেননি এই গিরিপথ।

jagonews

তিনি যেবার অন্যতম কঠিন ‘মোটরেবল মাউন্টেন পাস’ জয় করেন, সেই একই বছর একই পথে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন। প্রথম নারী হিসেবে ৫ হাজার ৬৩৮ মিটার উচ্চতার মানা পাস জয় করেছেন পল্লবী। একটা ওল্ড কাস্ট আয়রন বুলেট, একটা ট্রায়াম্ফ, একটা ডুকাটি স্ক্র্যাম্বলার আর একটা অ্যাভেঞ্জার- এই নিয়েই সব গিরিপথ জয় করেছেন তিনি।

এজন্য ২০১৭ সালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে পেয়েছেন নারীশক্তি সম্মাননা। উত্তরপ্রদেশ সরকারও তাকে ‘আউটস্ট্যান্ডিং গ্লোবাল উইম্যান’ সম্মানে ভূষিত করেছে।

এতা কিছুর মাঝে পল্লবীর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত ছিল উমলিং লা জয়ের মুহূর্ত। সংবাদ সংসস্থাকে পিটিআইকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।