বাদশাহ মিয়াঃ
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এবং কাশিয়ানী উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গোপালগঞ্জ-১ সংসদীয় আসন। গোপালগঞ্জের এ আসনটি রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর থেকে মুকসুদপুর-কাশিয়ানীতে এককভাবে রাজত্ব করেছে আওয়ামী লীগ।
প্রহসনের নির্বাচনে মাঝে বিএনপির দুই নেতা একবার করে নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর দুটি আসনে একবার করে সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ হয়েছিল জাতীয় পার্টির দুই নেতার। এছাড়া দলীয়ভাবে অন্য কারো জয়ের নজির নেই। আবার শেষ দেড় দশক জনসমর্থন জানানোর অধিকারই ছিল না।২৪এর জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে ফিরেছে উন্মুক্ত ভোটের পরিবেশ। এ দুর্গ দখলে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের নেতারা।
গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পালিয়ে গেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা। বহু নেতাকর্মী গা-ঢাকা দিয়েছেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এই ফাঁকা মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অভ্যুত্থানপন্থী দলগুলোর নেতাকর্মীরা।
গোপালগঞ্জ-১ (মুকসুদপুর-কাশিয়ানী আংশিক) সংসদীয় আসনে ইতোমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াতসহ কয়েকটি দল। আর মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তদবিরে ব্যস্ত বিএনপি নেতারা।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সম্প্রতি শোডাউনের চেষ্টা করলেও এখনো কমিটি দিতে পারেনি। গণঅধিকার পরিষদেরও উল্লেখযোগ্য কোনো তৎপরতা নেই এই আসনে। তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং জামায়াত ইসলামী আলাদা করে প্রার্থী দিয়েছে। মাঠেও তাদের সরব উপস্থিতি আছে। আবার ইসলামপন্থী দলগুলোর জোট করার আলোচনা চলছে। সেটি হলে পাল্টে যেতে পারে প্রার্থী মনোনয়নের চিত্র। পাল্টে যেতে পারে সব হিসাব-নিকাশ।
এই আসনের মুকসুদপুর পৌর এলাকায় বিএনপির অবস্থান আগে থেকেই মজবুত। এটিকে পুঁজি করে দলটির প্রার্থীরা বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। এবার ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ার দৌড়ে প্রতিযোগিতা করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) সেলিমুজ্জামান সেলিম, দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি এফ ই শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর। তারা তিনজনই বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ভোটারদের মন জয়ের পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে।
কাশিয়ানী উপজেলার মাঝিগাতী গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেনের সুযোগ্য সন্তান সেলিমুজ্জামান বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এফ রহমান হলের ছাত্রদলের সভাপতি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ১ম যুগ্ন আহবায়ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ১ম যুগ্ন সম্পাদক , যুবদল কেন্দীয় নির্বাহী কমিটির সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমানে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক। শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শে খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করে গোপালগঞ্জে বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত করতে দীর্ঘ প্রায় দুইযুগ নেতাকর্মীদের বিপদ-আপদে পাশে থেকেছি।
বিতাড়িত স্বৈর শাসকের ১৫ বছরে প্রায় অর্ধ শতধিক মামলা মাথায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ঘোষিত সকল কর্মসূচীতে পুলিশের বাধা সত্ত্বেও মুকসুদপুর – কাশিয়ানীতে প্রোগ্রাম করার চেষ্টা করেছি। একাধিক বার জেল খেটেছি। নিজের পরিবারকে বিপদের সম্মুখীন করেছি বারবার। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও পুলিশের বাধার কারণে ঠিকমত নিজের বাড়িতে একদিনও রাত কাটাতে পারিনি। এমন কি নিজের বাবা-মার কবর ও জিয়ারত করতে পারিনি। জেল – জুলুম, নীপিড়ন – নির্যাতন সহ্য করে নেতা কর্মীদের নিয়ে দলের জন্য সংগ্রাম করেছি।
দলকে সুসংগঠিত করতে কঠোর পরিশ্রম করেছি। বর্তমানে মুকসুদপুর কাশিয়ানীতে বিএনপি একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে আমি যখনই সুযোগ পেয়েছি মুকসুদপুর কাশিয়ানী উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে ঘুরে গরীব মেহনতী মানুষের খোঁজখবর নিয়েছি। প্রতিটি মানুষের সাথে আমি মিশেছি। তাদের সুখে দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। আমার অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য এলাকার ভোটাররা আমাকে কথা দিয়েছেন তারা আমার পাশে থাকবেন এবং আমাকে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আশা করছি বিগত দিনে আমার পরিশ্রমকে মূল্যায়ন করে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে সে প্রত্যাশা। আমি ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে আসন্ন নির্বাচনে জয়ী হবো ইনশাল্লাহ।
গোপালগঞ্জ সদরের শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর মরহুম ফায়েকুজ্জামানের পুত্র। তার চাচা ওয়াহিদুজ্জামান ছিলেন পাকিস্তান আমলের বানিজ্য মন্ত্রী। তাদের আদি নিবাস কাশিয়ানী উপজেলার শীতারামপুর গ্রামে। শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর জানান, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আমাকে জাতীয়তাবাদী দলে সম্পৃক্ত করেন। এরপর থেকে বিএনপিতেই আছি। অনেক চড়াই-উতরাই পার করেছি। একবার গোপালগঞ্জ-১ আসন থেকে এমপিও হয়েছি। এবার গোপালগঞ্জ-১ ও ২ আসন থেকে মনোনয়ন চাইব। দল যেখানে দেবে সেখান থেকেই নির্বাচন করব।
মুকসুদপুর উপজেলার কালিনগর গ্রামের পীর বংশের সন্তান অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ। তার মরহুম পিতা পীর সাহেব সৈয়দ মোকারম হোসেন। সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ জানান, ঢাকায় আইন ব্যবসা করার সুবাদে বিগত স্বৈরসরকারের আমলে বিএনপির লক্ষ লক্ষ নেতা কর্মীদের নামে হাজার হাজার মামলা হয়েছে। এসব মামলা আমি বিনা পারিশ্রমিকে মোকাবিলা করেছি। অনেক অসহায় কর্মীদের আর্থিক শংকটে তাদের সহযোগীতার চেষ্টা করেছি। আমার পূর্ব পুরুষেরা হাজার হাজার মানুষকে সৎপথে থেকে জীবন যাপনের শিক্ষা দিয়েছেন। আমিও সে শিক্ষা নিয়ে পথ চলতে শিখেছি।
‘আমি জনগণের সেবক হতে চাই। কখনো দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্বসহ কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলাম না। আমার বিগত জীবনের কর্মকান্ড বিবেচনা করে দল আমার ওপর আস্থা রাখবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তথ্য অনুযায়ী গোপালগঞ্জ ১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৮ শত ২২, পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৩ শত ৫৩, মহিলা ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪ শত ৬৯ জন, মোট কেন্দ্র সংখ্যা ১৩৮টি।
প্রিন্ট