আলিফ হোসেনঃ
রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির আদর্শিক ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি ইমেজ সম্পন্ন জনপ্রিয় মুল ধারার নেতার হাতেই যাবে ধানের শীষ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি ইমেজ সম্পন্ন প্রার্থীদের প্রাধান্য দেবে বিএনপি। রাজশাহী-১ আসনে পরিচ্ছন্ন ও বিতর্কমুক্ত ব্যক্তি ইমেজ সম্পন্ন নেতৃত্ব হিসেবে আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক সামরিক সচিব ও রাজনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অবঃ) শরিফ উদ্দিন।এছাড়াও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী,সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার মাহাফুজুর রহমান মিলন রয়েছে আলোচনায়। সম্পর্কে তারা মামা-ভাগনে। মনোনয়ন নিয়ে মুলত মামা শরিফ ও ভাগনে মিলন তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিদন্দীতা হবে।স্থানীয়রা এটাকে মামা-ভাগনের মনোনয়ন যুদ্ধ বলে অবিহিত করেছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ মহলের ভাষ্য,পারিবারিক ঐতিহ্যে, সামাজিক মর্যাদা, রাজনৈতিক দুরদর্শিতা, আদর্শিক, বিশস্ততা ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি ইমেজ নিয়ে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন মেজর জেনারেল অবঃ শরিফ উদ্দিন। এবার তার মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত।
রাজশাহী-১ আসনের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই দুই জনকে নিয়েই মুলত নির্বাচনী আলোচনা ঘুরপাঁক খাচ্ছে। তাদের কর্মী-সমর্থকেরা নিজ নিজ প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরে চায়ের কাপে ঝড় তুলছে। গত ১৭ বছর মানুষ যা দেখেছেন তাতে ব্যবসায়ী নেতৃত্বের প্রতি এই জনপদের সাধারণ মানুষের কোনো আস্থা-ভরসা নাই। স্থানীয়রা জানান, রাজশাহী-১ আসনে পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি ইমেজের প্রার্থী হিসেবে যারা আলোচনায় রয়েছেন এদের কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নাই, সবাই পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি ইমেজের অধিকারী। এরা কখানো কোনদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেননি। আদর্শিক ও বিএনপির মুল ধারার সঙ্গে থেকে বিএনপির রাজনীতিতে অবদান রেখে চলেছেন।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য মেজর জেনারেল অবঃ শরিফ উদ্দিন ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের সামরিক সচিব।
অন্যদিকে ব্যারিষ্টার মাহাফুজুর রহমান মিলন একজন আদর্শিক নেতৃত্ব। তিনি তার কর্মজীবন শুরু থেকে এখন পর্যন্ত্য বিএনপির যতো নেতাকর্মীর মামলা-মোকদ্দমার দেখভাল ও আইনি সহযোগীতা করেছেন,তার সংখ্যা কয়েক হাজার। এই দুই নেতৃত্বই নিজ নিজ জায়গায় সফল। ইতমধ্যে বিএনপি মাঠপর্যায়ে আদর্শিক, নিবেদিতপ্রাণ ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি ইমেজ সম্পন্ন প্রার্থীর সন্ধানে মাঠে নেমেছেন।
স্থানীয় সুত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ৩০০ আসনের প্রার্থী বাছাই করছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে একাধিক জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৫ আগস্ট-পুর্ববর্তী ও পরবর্তী নেতাদের ভূমিকা নিয়েও। বিশেষ করে বিগত ১৭ বছর যারা আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘনিষ্ঠ সহচর, আওয়ামী লীগে অর্থের যোগান বা তাদের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যে ঠিক রেখে ফুঁলে-ফেঁপে টাকার কুমির হয়েছেন, মাদক কানেকশন, মামলা বাণিজ্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের পুনর্বাসনের জন্য গোপণে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন এমন নেতাদের তালিকা তৈরি করতে কাজ করছেন দলের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যানের একটি টিম। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যতা বা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নেতারা যতই শক্তিশালী হোক না কেনো, তারা আর কোনোভাবেই কোনো সুযোগ পাচ্ছেন না।
দলীয় নমিনেশন বা সংগঠনে কোনো পর্যায়ে তাদের আর রাখা হচ্ছে না। বিগত ১৭ বছর যারা নানা কৌশলে আওয়ামী লীগে অর্থের যোগান দিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা রেখে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ ও নিজের পাশাপাশি ব্যবসা-বানিজ্য নিরাপদ রেখে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন।কিন্ত্ত গণঅভ্যুত্থানের পর আবার খোলস পাল্টিয়ে রাতারাতি
বিএনপি নেতা সেজে মাঠ নামতে চাইছে বা নেমেছে বা যাদের রাজনৈতিক জীবনটাই পালাবলের এমন নেতারা কোনোভাবেই বিএনপির দলীয মনোনযন পাবেন না বলে তৃণমুল নেতাকর্মীদের মাঝে জোর আলোচনা চলছে।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছে, রাজশাহী-১ আসনের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে এমন আলোচনা বা প্রচারের পর পরই কারো কারো চোখে মুখে হতাশার ছাপ ফুটে উঠেছে। কেউ মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছে, কারো মাঠ ছাড়া এখন সময়ের ব্যাপার বলে মনে করছে তৃণমুল।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের সুবিধা নেয়া, নানা অপকর্মে জড়িত বা বিতর্কিত কোনো ব্যবসায়ী বা আমলা এমন কাউকে কোনোভাবেই মনোনয়ন দেবে না দলটি।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এটা নিয়ে আসনভিত্তিক কাজ শুরু করেছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দল থেকে যাদের চূড়ান্ত প্রার্থী করা হয়েছিল, যারা দলের প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত, বিশেষ করে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর-পরবর্তী আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজধারীদের দিয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকার খসড়া তৈরি করা হবে। আগামী জুলাই-আগস্টের মধ্যে এই খসড়া তালিকা তৈরির কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে। বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু না করলেও গত ফেব্রুয়ারিতে দলের বর্ধিত সভা থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তৃণমূল নেতাদের নির্বাচনের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করবে দলটি বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ভাষ্য, বিএনপির নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে আদর্শিক ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি ইমেজ সম্পন্ন প্রার্থী হিসেবে মেজর জেনারেল অবঃ শরিফ উদ্দিনের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। তবে ব্যারিষ্টার মাহফুজুর রহমান মিলনকে নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।
বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছে, রাজশাহী-১ আসনে অপ্রতিদন্দী নেতৃত্ব প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হক পরিবারের কোনো বিকল্প নাই, সেটা বিএনপি বিরোধীরাও কল্পনা করেন না। এসব বিবেচনায় এই দুজনের মধ্যে থেকে যেকোনো একজনকে মনোনয়ন দেয়া হলে, একদিকে ব্যারিষ্টার আমিনুল হক পরিবার থেকে প্রার্থী দেবার জন দাবি পুরুণ হবে।অন্যদিকে বিএনপির আদর্শিক ও মুল ধারার নেতৃত্বের প্রতিফলন বা বিকাশ ঘটবে। এদিকে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে এখানো কাউকে ‘গ্রীণ সিগন্যাল’ না দিলেও নীতিনির্ধারণী মহল থেকে শরিফ উদ্দিনকে মাঠ গোছানোর ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। কিন্ত্ত বসে নেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা তারাও নানা ভাবে দলের হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। মেজর জেনারেল অবঃ শরিফ উদ্দীন বলেন, ‘‘আমি বরাবরই রাষ্ট্র ও দলের প্রতি আনুগত্য রেখে দায়িত্ব পালন করেছি। বিএনপিকে সংগঠিত করা, তৃণমূলে নেতৃত্ব তৈরি করা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে সক্রিয় হতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, রাজশাহী-১ আসনের জনগণ এক সময় আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে ছিলেন এখন তারা আমার পাশে আছেন ও থাকবেন।
এবিষয়ে ব্যারিষ্টার মাহাফুজুর রহমান মিলন বলেন, তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন, তবে দলীয় সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। এবিষয়ে তানোর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হযরত আলী মাষ্টার বলেন, বিএনপি দেশের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল।
তিনি বলেন, যে কেউ দলের মনোনয়ন চাইতেই পারেন, তবে আমাদের নেতা মেজর জেনারেল (অবঃ) শরিফ উদ্দিন এখানে মনোনয়ন পাবেন এটা প্রায় নিশ্চিত এটা নিয়ে কারো কোনো সন্দেহের অবকাশ নাই। তিনি বলেন, তাদের টার্গেট দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটের ব্যবধানে তাদের নেতার বিজয় নিশ্চিত করা, তাদের নিরঙ্কুশ বিজয় হবে ইনশাল্লাহ।
প্রিন্ট