মোল্লা জসিমউদ্দিনঃ
বছরের পর বছর শুনানির জন্য আর অপেক্ষা নয়, উকিল-মুহুরিদের পেছনে ধারাবাহিক আর্থিক খরচ নয়। এবার মামলার নিস্পত্তি ঘটানোর জন্য সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট।
গত ১ জুলাই থেকে সারাদেশ জুড়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী চলছে নব্বই দিনব্যাপী মিডিয়েশন ক্যাম্পেইন। জাতীয় আইন পরিষেবা কর্তৃপক্ষ এবং সুপ্রিম কোর্টের মিডিয়েশন ও কনসিলিয়েশন প্রজেক্ট কমিটির যৌথ উদ্যোগে চলছে ‘বিশেষ মিডিয়েশন ড্রাইভ, জাতির জন্য মিডিয়েশন’, যা চলবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
বাদী-বিবাদীর আবেদন গ্রহণ থেকে চিহ্নিতকরণ, এরপর মিডিয়েশন সেন্টারে প্রশিক্ষিত মিডিয়েটরদের মাধ্যমে মামলার নিস্পত্তি ঘটিয়ে আগামী ৬ অক্টোবরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হবে সুপ্রিম কোর্টের কাছে।
এখানে বিভিন্ন মামলা যেমন — মীমাংসাযোগ্য ফৌজদারি মামলা, উচ্ছেদ, বণ্টন, বিচ্ছেদ, ভরণপোষণ, জমি অধিগ্রহণ, অর্থ সংক্রান্ত মামলা তথা বিভিন্ন দেওয়ানি মামলা, যা আদালতে বিচারাধীন — তা মিডিয়েশন সেন্টারের মাধ্যমে মীমাংসা করা হবে।
কলকাতা হাইকোর্টের পাশাপাশি রাজ্যের ৭২টি ADR সেন্টার (বিকল্প বিবাদ নিস্পত্তি কেন্দ্র) রয়েছে। ২০০৯ সালে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোহিত শান্তিলাল শাহের সময় মিডিয়েশন এবং কনসিলিয়েশন কমিটি কাজ শুরু করে।
এই মিডিয়েশন প্রক্রিয়ায় বাদী-বিবাদী পক্ষদের কোন খরচ করতে হয় না। বছরের পর বছর শুনানির তারিখের জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষাও করতে হয় না!
কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয় প্রধান বিচারপতি শ্রী টি. এস. শিবজ্ঞ্যনম, বিচারপতি শ্রী সৌমেন সেন এবং মিডিয়েশন কমিটির সভাপতি বিচারপতি শ্রী অরিজিৎ ব্যানার্জি মহাশয়ের নেতৃত্বাধীন মিডিয়েশন এবং কনসিলিয়েশন কমিটি সারা বছর বিচারাধীন মামলাগুলি বা প্রাক-বিচারাধীন বাণিজ্যিক মামলাগুলি দুই পক্ষের সম্মতিতে নিস্পত্তি ঘটাচ্ছে বলে জানা গেছে।
কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শ্রীযুক্ত সুদীপ ব্যানার্জি। তিন মাস সময়সীমার মধ্যে এই মামলাগুলির চূড়ান্ত রিপোর্ট জারি হয়।
কলকাতা হাইকোর্টের অরিজিনাল সাইডের রেজিস্ট্রার (ইনসলভেন্সি) এবং মিডিয়েশন ও কনসিলিয়েশন কমিটির ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক ড. শুভাশিস মুহুরী জানান—
“সারা রাজ্যে ৫০০-এর বেশি প্রশিক্ষিত মিডিয়েটর রয়েছেন। এদের মধ্যে যেমন অ্যাডভোকেট মিডিয়েটর আছেন, ঠিক তেমনি নন-অ্যাডভোকেট মিডিয়েটরদের মধ্যে প্রাক্তন বিচারপতি, প্রাক্তন আইএএস, আইপিএস, চিকিৎসক, মনস্তত্ত্ববিদ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন।”
প্রসঙ্গত, নন-অ্যাডভোকেট মিডিয়েটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ‘কুমুদ সাহিত্য মেলা’ কমিটির সাধারণ সম্পাদক, ‘আইনী সংবাদদাতা’, এবং ‘দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা’-র কলকাতা প্রতিনিধি মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু।
প্রিন্ট