সেলিম সানোয়ার পলাশঃ
ভারতে সীমান্ত ঘেঁষে গড়ে উঠা পদ্মা নদীর তীরে রাজশাহীর এই গোদাগাড়ী উপজেলা। এই উপজেলা বাংলাদেশের মাদক চোরাচালানের অন্যতম রুট। গোদাগাড়ীর সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে প্রতিদিন বসছে ফেনসিডিলের হাট। মানিকচক, কোদালকাটি, আলাতুলি বগচর, হাকিমপুর, সুইজগেট, লস্করহাটি, কামারপাড়া, সুলতানগঞ্জ, হলের মোড়, মহিশালবাড়ি, মাদারপুর, সারাংপুর, ভগবন্তপুর, শ্রীমন্তপুর, মাটিকাটা, ফুলতলা, বিদিরপুর, গোপালপুর, কালিদিঘী, রাজাবাড়ীহাট, আলীপুর, ফরাদপুরসহ বিভিন্ন এলাকাই এখন ফেনসিডিল বিক্রির গোপন হলেও খোলামেলা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত এই এলাকাগুলোতে দেখা যায়, দামি প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল এসে দাঁড়ায় নির্দিষ্ট কিছু স্থানে। কিছুক্ষণের মধ্যে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা গাড়ির কাছে গিয়ে ফেনসিডিলের বোতল হস্তান্তর করে। কখনো কখনো গাড়ির ভেতরেই তরুণ-যুবকরা ফেনসিডিল সেবন করে খালি বোতল ফেলে দ্রুত সরে যায়। খোলামেলা ফেনসিডিল বিক্রি ও সেবন চললেও রহশ্য জনক কারনে প্রশাসন নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে। জনসাধারনের অভিযোগ মাদকের গডফাদারদের সাথে পুলিশ প্রশাসনের সখ্যতা রয়েছে। যার ফলে পুলিশ প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে ২/১ টি চঁদা পুঠি ধরলেও রাঘোব বোয়ালরা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছুয়ার বাইরে।
তথ্য অনুসান্ধে জানা জায়, ভারতে মধ্যে সীমান্ত ঘেঁষে প্রায় ৩৫ টি ফেন্সিডিলের কারখানা গড়ে উঠেছে। কাখানার উৎপাদিত ফেন্সিডিল গুলো ভারতের অভ্যান্তরে না গিয়ে সীমান্ত পথ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
সীমান্তে ভারত কাটাতারের বেড়া দিলেও ফেন্সিডিলের বোতল প্লাস্টিকের হওয়ায় বস্তায় ভিতরে ঢুকিয়ে কাটা তারের বেড়ার উপর দিয়ে চালিয়ে অনাসেই বাংলাদেশে প্রবেশ করানো যায়। এই চোরাচালানের কাজ গুলো করেন ভারত বাংলাদেশ জুড়ে গড়ে উঠা মাদক চোরাচালানের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
একটি মাদক ব্যবসায়ী সূত্র জানিয়েছে, সীমান্তে ২৬টি রুটকে নিরাপদ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে মাদক পাচারের জন্য।
স্থানীয়রা বলছেন, এই রুট দিয়ে প্রতিদিন ফেনসিডিলের বড় চালান সীমান্ত পেরিয়ে প্রবেশ করে। বড় বড় চালান গুলো চলে যায় দেশের অভ্যান্তরে বিভিন্ন রুটে। আর কিছু স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীরা ছোট ছোট চালানে তা বিক্রি করছে। প্রায় প্রকাশ্যেই এই বেচাকেনা হলেও প্রশাসনের কোনো কার্যকর তৎপরতা চোখে পড়ছে না।
এয়াড়াও পদ্মানদী থেকে বালু উত্তোলন হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ বালু বহনের ড্রাম ট্রাক গুলোতে বহন হচ্ছে ফেন্সিডিল।
সুলতানগঞ্জ এলাকার এক দোকানদার বলেন, প্রতিদিন নতুন নতুন গাড়ি আসে। বাইরের লোকজন আসে, শহরের তরুণ ছেলেরা আসে। গাড়ির জানালা দিয়ে বোতল নেয়, অনেকে খেয়ে ফেলে চলে যায়। আমরা কিছু বলতেও পারি না।
স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজের এক শিক্ষক জানান, মাদক এখন এখানকার তরুণ সমাজকে গ্রাস করছে। অনেকে স্কুল-কলেজ ছেড়ে এই নেশার সাথে জড়িয়ে পড়ছে। প্রশাসন চাইলে প্রতিদিন বসা এই ফেনসিডিলের হাট বন্ধ করা সম্ভব।
স্থানীয়রা আরও অভিযোগের শুরে বলেন, কিছু প্রভাবশালী মহলের ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এই মাদক বাণিজ্য চললেও প্রশাসন চুপ করে আছে। রাতের আঁধারেই শুধু নয়, দিনের আলোতেও রাস্তায় রাস্তায় খালি ফেনসিডিলের বোতল ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
মাদকবিরোধী অভিযানের দায়িত্বে থাকা গোদাগাড়ীর এক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। তবে সীমান্ত এলাকা হওয়ায় এই মাদক চোরাচালান পুরোপুরি বন্ধ করা চ্যালেঞ্জিং। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বড় ধরনের অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি চলছে।
তবে স্থানীয়দের দাবি, শুধু অভিযান নয়, সীমান্ত ও স্থানীয় পর্যায়ে মাদকের অবাধ বেচাকেনা বন্ধে প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি ও নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে। চাদা পুঠি বা বহনকারীদের ধরলেই হবে না। মাদকের গডফাদারদেও ধরতে হবে। অন্যথায় ফেনসিডিলের হাট বন্ধ হবে না, আর তরুণ সমাজ এই নেশার জালে দিন দিন আরও বেশি জড়িয়ে পড়বে।
প্রিন্ট