ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ডাবলিনে গ্রেটার মৌলভীবাজার অ্যাসোসিয়েশন অফ আয়ারল্যান্ডের বার্ষিক সভা Logo নোয়াখালী চাটখিলে চাঁদা না পেয়ে প্রবাসীকে হত্যার হুমকি Logo খোকসায় ১ম হওয়া শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান ও সকল এ+ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা Logo সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী’র ৪ শত কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক Logo বেনাপোলে যুবদলের যৌথ কর্মীসভা Logo পাংশা সরকারী কলেজে জুলাই শহিদ দিবস পালিত Logo যশোরের কেশবপুরে সমাজসেবক বদরুন্নাহার রেশমা চিরনিদ্রায় শায়িত Logo ‘জুলাই শহীদ দিবস–২৫’ উপলক্ষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে স্মরণ সভা Logo কৃষি বিজ্ঞানী ড. আলী আফজাল ফুটবল টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে মহম্মদপুর Logo কুষ্টিয়া চাঁদা তোলা নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

মহম্মদপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনে

বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের তীব্রতা, নিঃশ্ব মধুমতি পাড়ের শতশত পরিবার

মুরাদ হোসেনঃ

বালি সোনা হয় গর্তের কোলে, সিকস্তি ছেড়ে চর ডিঙ্গিয়ে। এক তীরের প্রাণ ভ্রোমরায় অন্য তীরের প্রাণ। প্রতি বছর নদী খেপে উঠে তার তৃষ্ণা মিটায়। এভাবেই নদীর দু’ধারের মানুষেরা হাসি কান্নায় দিন পার করে। যে হাসিতে মিশে থাকে নতুন দিনের স্বপ্ন। অন্যদিকের কান্নায় ছাদহীন বুভুক্ষু লোকেরা বেঁচে থাকার সংগ্রামে মুর্ছা যায়। এই পরা বাস্তবতায় জেগে ওঠে নতুন চর।

কিন্তু একদল অসাধু বালু খেকোদের কারণে সেই নতুন চরের স্বপ্ন বোনা হাসি-কান্নায় বেচে থাকা মধুমতি নদী পাড়ের শতশত পরিবার ঘর-বাড়ী, জমি-জাতি, গাছ-পালা হারিয়ে আশ্রয় নেয় খোলা আকাশের নিচে। মধুমতি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কিছু অসাধু বালু ব্যবসায়ী বা অপরাধী চক্র অবাধে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে বিক্রি করে যাচ্ছে দেদারসে! এতে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের তীব্রতা দেখা দেয়। ফলে শতশত একর ফসলি জমি, ঘরবাড়ী আর গাছপালা নিমিষেই নদী গর্ভে হারিয়ে যায়।

রুপকথার গল্পের মতো মনে হলেও, বাস্তবে বলছি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পূর্বপাশ্ব দিয়ে বয়ে চলা মধুমতি নদী ও মধুমতি পাড়ের শতশত অসহায় পরিবারের কথা।

পনেরো কোটি কিলোমিটার দূর থেকে ট্রপোমন্ডল, ¯ট্র্যোটোমন্ডল, মেসোমন্ডল, তাপমন্ডল এবং এক্সোমন্ডল এ ধরনের পাঁচটি স্তর ভেদ করে পৃথিবীতে সূর্যের আলো নেমে আসে! পৃথিবীকে উষ্ণতা এনে দেয়। ফুল, ফসল, জীবজন্তুর বসবাস উপযোগী হয়ে ওঠে আমাদের চিরচেনা পৃথিবী। ধর্মীয় মতে সেগুলো সৃষ্টিকর্তার এক-একটি নগন্য সৃষ্টি। এর থেকে বহুগুণ বড়ো বা আশ্চর্যজনক সৃষ্টি মহামহিমের রয়েছে। যাহা আধুনিক বিজ্ঞান, সাধারণ মানুষকে জানিয়েছে।

সাধারণ মানুষ আইন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সামগ্রিকভাবে ভয় পায়! কোনোক্ষেত্রে মনে করে সূর্যের আলো পৃথিবীতে না পৌঁছালেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ঠিকই পৌঁছে যাবে অপরাধীর দোরগোড়ায়। এজন্য সাধারণ মানুষ অপরাধ বা অপরাধ সংশ্লিষ্ট কোন কিছু করতেও ভয় পায়। সূর্যের মতোই আইনও তার নিজস্ব গতিতে চলতে থাকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, মধুমতি নদী পয়স্তি ও সিকস্তির যে বালু জমা হয় তা উত্তোলন করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিজেদের সম্পত্তি মনে করে বিক্রি করে যাচ্ছে দেদারসে! বাবুখালী থেকে শুরু করে হরেকৃষ্ণপুর,ঝামা ব্যাপী বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ ব্যবসা চলছে এক প্রকার বাঁধাহীন ভাবে।

বিগত দিনে সাবেক উপজেলা কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এই অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযান পরিচালনা করেছিলেন এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের জরিমানাও করেছিলেন। পরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাসুদেব কুমার মালো অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করেছিলেন। কিন্তু এই অবৈধ বালু ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বালু ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়েছেন। তাদের ব্যবসা সাজিয়েছে নতুন উদ্যোমে। যেমন সরকারের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন, তেমনি নদী কূলের মানুষের কান্নার রসদ যুগিয়েছেন এই বালু ব্যবসায়ীরা।

গত ২৩ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনুর আক্তার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাসুদেব কুমার মালো নতুন করে মধুমতি নদীতে ট্রলার যোগে অভিযানে যান। কিন্তু এ অভিযানে কোন পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হননি। ফিরে এসেছেন ব্যর্থ মনোরথে! কোন বালু ব্যবসায়ীকে হাতেনাতে ধরতে পারেননি। তাই জেল-জরিমানার রশিদ রয়েছে শূন্য। জালের ফাঁক গলে পালিয়েছে রাঘব বোয়াল।

এ খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সুধীমহলের জিজ্ঞাসা এর শেষ কোথায়? একদিকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে নদীর কূলের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ব্যাপকভাবে বলে মনে করেন সচেতনমহল।

মধুমতি নদী ভাঙনের ভুক্তভোগী মফিজুর রহমান, রফিকুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, আক্কাচ মোল্যা, শ্রী দিনোবন্ধু ও লিলি বেগমসহ অনেকেই বলেন, এহেন অবৈধ কাজ পুরোপুরি বন্ধ হোক। রক্ষা পাক আমাদের ঘরবাড়ী, গাছপালা। ফিরে আসুক মানুষ তার নৈতিকতায়।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ডাবলিনে গ্রেটার মৌলভীবাজার অ্যাসোসিয়েশন অফ আয়ারল্যান্ডের বার্ষিক সভা

error: Content is protected !!

মহম্মদপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনে

বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের তীব্রতা, নিঃশ্ব মধুমতি পাড়ের শতশত পরিবার

আপডেট টাইম : ০৫:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
মুরাদ হোসেন, মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি :

মুরাদ হোসেনঃ

বালি সোনা হয় গর্তের কোলে, সিকস্তি ছেড়ে চর ডিঙ্গিয়ে। এক তীরের প্রাণ ভ্রোমরায় অন্য তীরের প্রাণ। প্রতি বছর নদী খেপে উঠে তার তৃষ্ণা মিটায়। এভাবেই নদীর দু’ধারের মানুষেরা হাসি কান্নায় দিন পার করে। যে হাসিতে মিশে থাকে নতুন দিনের স্বপ্ন। অন্যদিকের কান্নায় ছাদহীন বুভুক্ষু লোকেরা বেঁচে থাকার সংগ্রামে মুর্ছা যায়। এই পরা বাস্তবতায় জেগে ওঠে নতুন চর।

কিন্তু একদল অসাধু বালু খেকোদের কারণে সেই নতুন চরের স্বপ্ন বোনা হাসি-কান্নায় বেচে থাকা মধুমতি নদী পাড়ের শতশত পরিবার ঘর-বাড়ী, জমি-জাতি, গাছ-পালা হারিয়ে আশ্রয় নেয় খোলা আকাশের নিচে। মধুমতি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কিছু অসাধু বালু ব্যবসায়ী বা অপরাধী চক্র অবাধে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে বিক্রি করে যাচ্ছে দেদারসে! এতে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের তীব্রতা দেখা দেয়। ফলে শতশত একর ফসলি জমি, ঘরবাড়ী আর গাছপালা নিমিষেই নদী গর্ভে হারিয়ে যায়।

রুপকথার গল্পের মতো মনে হলেও, বাস্তবে বলছি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পূর্বপাশ্ব দিয়ে বয়ে চলা মধুমতি নদী ও মধুমতি পাড়ের শতশত অসহায় পরিবারের কথা।

পনেরো কোটি কিলোমিটার দূর থেকে ট্রপোমন্ডল, ¯ট্র্যোটোমন্ডল, মেসোমন্ডল, তাপমন্ডল এবং এক্সোমন্ডল এ ধরনের পাঁচটি স্তর ভেদ করে পৃথিবীতে সূর্যের আলো নেমে আসে! পৃথিবীকে উষ্ণতা এনে দেয়। ফুল, ফসল, জীবজন্তুর বসবাস উপযোগী হয়ে ওঠে আমাদের চিরচেনা পৃথিবী। ধর্মীয় মতে সেগুলো সৃষ্টিকর্তার এক-একটি নগন্য সৃষ্টি। এর থেকে বহুগুণ বড়ো বা আশ্চর্যজনক সৃষ্টি মহামহিমের রয়েছে। যাহা আধুনিক বিজ্ঞান, সাধারণ মানুষকে জানিয়েছে।

সাধারণ মানুষ আইন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সামগ্রিকভাবে ভয় পায়! কোনোক্ষেত্রে মনে করে সূর্যের আলো পৃথিবীতে না পৌঁছালেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ঠিকই পৌঁছে যাবে অপরাধীর দোরগোড়ায়। এজন্য সাধারণ মানুষ অপরাধ বা অপরাধ সংশ্লিষ্ট কোন কিছু করতেও ভয় পায়। সূর্যের মতোই আইনও তার নিজস্ব গতিতে চলতে থাকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, মধুমতি নদী পয়স্তি ও সিকস্তির যে বালু জমা হয় তা উত্তোলন করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিজেদের সম্পত্তি মনে করে বিক্রি করে যাচ্ছে দেদারসে! বাবুখালী থেকে শুরু করে হরেকৃষ্ণপুর,ঝামা ব্যাপী বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ ব্যবসা চলছে এক প্রকার বাঁধাহীন ভাবে।

বিগত দিনে সাবেক উপজেলা কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এই অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযান পরিচালনা করেছিলেন এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের জরিমানাও করেছিলেন। পরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাসুদেব কুমার মালো অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করেছিলেন। কিন্তু এই অবৈধ বালু ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বালু ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়েছেন। তাদের ব্যবসা সাজিয়েছে নতুন উদ্যোমে। যেমন সরকারের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন, তেমনি নদী কূলের মানুষের কান্নার রসদ যুগিয়েছেন এই বালু ব্যবসায়ীরা।

গত ২৩ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনুর আক্তার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাসুদেব কুমার মালো নতুন করে মধুমতি নদীতে ট্রলার যোগে অভিযানে যান। কিন্তু এ অভিযানে কোন পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হননি। ফিরে এসেছেন ব্যর্থ মনোরথে! কোন বালু ব্যবসায়ীকে হাতেনাতে ধরতে পারেননি। তাই জেল-জরিমানার রশিদ রয়েছে শূন্য। জালের ফাঁক গলে পালিয়েছে রাঘব বোয়াল।

এ খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সুধীমহলের জিজ্ঞাসা এর শেষ কোথায়? একদিকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে নদীর কূলের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ব্যাপকভাবে বলে মনে করেন সচেতনমহল।

মধুমতি নদী ভাঙনের ভুক্তভোগী মফিজুর রহমান, রফিকুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, আক্কাচ মোল্যা, শ্রী দিনোবন্ধু ও লিলি বেগমসহ অনেকেই বলেন, এহেন অবৈধ কাজ পুরোপুরি বন্ধ হোক। রক্ষা পাক আমাদের ঘরবাড়ী, গাছপালা। ফিরে আসুক মানুষ তার নৈতিকতায়।


প্রিন্ট