ঢাকা , রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo মুকসুদপুরে সংবাদ সম্মেলন করে দল থেকে পদত্যাগ করলেন আওয়ামী লীগ নেতা Logo বাংলাদেশ জাতীয় নাগরিক পার্টি এন সি পি এর ফরিদপুর জেলার সমন্বয় কমিটির ১নং যুগ্ম সমন্বয়কারী হলেন এস এম জাহিদ। Logo ভূরুঙ্গামারীতে ভিজিএফ চাল বিতরণে অনিয়ম, অবিকৃত রইল সাড়ে ১৮ টন চাল Logo একত্রিশ দফাই দেশের মানুষের মুক্তির সনদঃ-দুলু Logo খোকসায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সেনাবাহিনীর সিভিল কর্মী নিহত, আহত ১ Logo ঈদের লম্বা ছুটিতেও সেবা দিয়েছে কালুখালীর পরিবার পরিকল্পনা দপ্তর Logo তারেক রহমানের হাতেই সৃষ্টি হবে নতুন বাংলাদেশঃ -পুতুল Logo ঝালকাঠিতে হানিফ পরিবহনের বাস-পিকআপ মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত -২ Logo আব্দুর রহমান খোকনের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন Logo দৌলতপুরে বিএনপির প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদ থেকে পদত্যাগ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা ল্যাবের যন্ত্রাংশ চুরি

ইসমাইল হোসেন বাবুঃ

 

কুষ্টিয়ায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে কোভিড। গত সপ্তাহে রাজধানী ঢাকা থেকে আসা দুজন কোভিড পজিটিভ রোগী ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়াও ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এসব উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।

 

এদিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার জন্য প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা একমাত্র পিসিআর ল্যাবের সব যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। মাস খানেক আগে চুরির বিষয়টি টের পায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

 

সূত্র জানায়, প্রায় চার মাস আগে থেকেই ধাপে ধাপে চুরির ঘটনা ঘটলেও তা মাস খানেক আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। ল্যাবের যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

 

হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, ২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল করোনা ভাইরাস শনাক্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে একটি একতলা ছোট ভবনে পিসিআর ল্যাবের যাত্রা শুরু হয়। সে সময় প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে এটি স্থাপন করা হয়। করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর এক বছর আগে ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

 

জানা যায়, ল্যাবের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধীনে। এ দায়িত্বে ছিলেন সংশ্লিষ্ট দুজন কর্মচারী। মাস খানেক আগে চুরির বিষয়টি জানতে পারে কর্তৃপক্ষ।

 

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. হোসেন ইমাম পিসিআর ল্যাবের যন্ত্রাংশ চুরির বিষয়টি স্বীকার করে জানান, “ধারণা করছি গত চার মাস ধরে ধাপে ধাপে চুরির ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক মাস আগে বিষয়টি টের পেয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তারা তাদের রিপোর্টও জমা দিয়েছে।”

 

তিনি আরও বলেন, “ল্যাব বন্ধের পর যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাদের চরম অবহেলা ছিল। করোনা মোকাবেলাসহ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আমরা ওয়ার্ডগুলো প্রস্তুত রেখেছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।”

 

জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, ২০১৯ সাল থেকে কোভিডের বিস্তার শুরু হলেও ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলায় কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৫৫ জন এবং আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রায় চার হাজার রোগী।

 

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় ২০২১ সালের জুলাই মাসে—৩৪২ জন। এরপর আগস্ট থেকে মৃত্যুর হার কমতে থাকে। এর মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও অক্সিজেন সংকটে বহু রোগী হাসপাতালেই মারা যান।

 

বর্তমানে আবারও কোভিডের নতুন সংক্রমণের আভাস দেখা যাচ্ছে। জ্বর, সর্দি ও কাশি নিয়ে জেলা হাসপাতালে রোগী ভর্তি হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি ঘরেই ঠান্ডাজনিত রোগের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।

 

শুক্রবার (১৩ জুন) কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত ২০ জন নারী-পুরুষ জ্বর, সর্দি, কাশিসহ ঠান্ডাজনিত উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নার্সরা তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন।

 

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. হোসেন ইমাম বলেন, “করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ওয়ার্ডগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।”

 

পি‌সিআর ল্যাব চু‌রির বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “পি‌সিআর ল‌্যাবের সব যন্ত্রাংশ চু‌রি হয়ে গেছে। এটা একদিনে হয়নি। ধারণা করছি, গত চার মাস ধরেই এ চু‌রির ঘটনা ঘটে আসছিলো। এক মাস আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়‌টি জানতে পারে।”

 

তিনি বলেন, “এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তারা রিপোর্ট জমা দিয়েছে। ল্যাব বন্ধের পর যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাদের চরম অবহেলা রয়েছে।”


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মুকসুদপুরে সংবাদ সম্মেলন করে দল থেকে পদত্যাগ করলেন আওয়ামী লীগ নেতা

error: Content is protected !!

কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা ল্যাবের যন্ত্রাংশ চুরি

আপডেট টাইম : ১৪ ঘন্টা আগে
ইসমাইল হােসেন বাবু, সিনিয়র ষ্টাফ রিপাের্টার :

ইসমাইল হোসেন বাবুঃ

 

কুষ্টিয়ায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে কোভিড। গত সপ্তাহে রাজধানী ঢাকা থেকে আসা দুজন কোভিড পজিটিভ রোগী ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়াও ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এসব উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।

 

এদিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার জন্য প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা একমাত্র পিসিআর ল্যাবের সব যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। মাস খানেক আগে চুরির বিষয়টি টের পায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

 

সূত্র জানায়, প্রায় চার মাস আগে থেকেই ধাপে ধাপে চুরির ঘটনা ঘটলেও তা মাস খানেক আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। ল্যাবের যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

 

হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, ২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল করোনা ভাইরাস শনাক্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে একটি একতলা ছোট ভবনে পিসিআর ল্যাবের যাত্রা শুরু হয়। সে সময় প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে এটি স্থাপন করা হয়। করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর এক বছর আগে ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

 

জানা যায়, ল্যাবের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধীনে। এ দায়িত্বে ছিলেন সংশ্লিষ্ট দুজন কর্মচারী। মাস খানেক আগে চুরির বিষয়টি জানতে পারে কর্তৃপক্ষ।

 

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. হোসেন ইমাম পিসিআর ল্যাবের যন্ত্রাংশ চুরির বিষয়টি স্বীকার করে জানান, “ধারণা করছি গত চার মাস ধরে ধাপে ধাপে চুরির ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক মাস আগে বিষয়টি টের পেয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তারা তাদের রিপোর্টও জমা দিয়েছে।”

 

তিনি আরও বলেন, “ল্যাব বন্ধের পর যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাদের চরম অবহেলা ছিল। করোনা মোকাবেলাসহ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আমরা ওয়ার্ডগুলো প্রস্তুত রেখেছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।”

 

জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, ২০১৯ সাল থেকে কোভিডের বিস্তার শুরু হলেও ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলায় কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৫৫ জন এবং আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রায় চার হাজার রোগী।

 

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় ২০২১ সালের জুলাই মাসে—৩৪২ জন। এরপর আগস্ট থেকে মৃত্যুর হার কমতে থাকে। এর মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও অক্সিজেন সংকটে বহু রোগী হাসপাতালেই মারা যান।

 

বর্তমানে আবারও কোভিডের নতুন সংক্রমণের আভাস দেখা যাচ্ছে। জ্বর, সর্দি ও কাশি নিয়ে জেলা হাসপাতালে রোগী ভর্তি হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি ঘরেই ঠান্ডাজনিত রোগের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।

 

শুক্রবার (১৩ জুন) কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত ২০ জন নারী-পুরুষ জ্বর, সর্দি, কাশিসহ ঠান্ডাজনিত উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নার্সরা তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন।

 

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. হোসেন ইমাম বলেন, “করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ওয়ার্ডগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।”

 

পি‌সিআর ল্যাব চু‌রির বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “পি‌সিআর ল‌্যাবের সব যন্ত্রাংশ চু‌রি হয়ে গেছে। এটা একদিনে হয়নি। ধারণা করছি, গত চার মাস ধরেই এ চু‌রির ঘটনা ঘটে আসছিলো। এক মাস আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়‌টি জানতে পারে।”

 

তিনি বলেন, “এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তারা রিপোর্ট জমা দিয়েছে। ল্যাব বন্ধের পর যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাদের চরম অবহেলা রয়েছে।”


প্রিন্ট