রাশিদুল ইসলাম রাশেদ:
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক এড. তাইফুল ইসলাম টিপু বলেছেন, “শেখ হাসিনার রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে আমরা গত ১৭ বছর রাজনীতি করেছি। শেখ হাসিনার সাথে লড়াই করার মন-মানসিকতা বিএনপি নেতা-কর্মীদের আছে। বিএনপি’র নেতাকর্মীরা কোন রক্তচক্ষুকে ভয় পায় না।”
তিনি আরও বলেন, “এনসিপি’র ছোট ভাইদের বলতে চাই—ফ্যাসিস্ট যদি আবার বাংলাদেশে ফিরে আসে, তারেক রহমান দেশে রাজনীতি করবে। আমরাও লড়াই সংগ্রাম করে এদেশে রাজনীতি করবো। আপনারা কিন্তু এ দেশে রাজনীতি করতে পারবেন না। যারা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বাজে কথা বলছেন, তারা ভেবে দেখবেন আপনারা সঠিক কথা বলছেন না। নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছেন।”
বিএনপি’র রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়ন ও আগস্ট ২০২৪ স্মরণে শনিবার (২ আগস্ট) বিকালে নাটোরের লালপুরে গোপালপুর রিক্সা স্ট্যান্ডে লালপুর উপজেলা ও গোপালপুর পৌরসভার সর্বস্তরের জনগণের আয়োজনে এবং গোপালপুর পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল ইসলাম রানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বিজয় মিছিলে তিনি এসব কথা বলেন।
টিপু আরও বলেন, “তারেক রহমানের জন্য দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তিনি দেশের গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন। তিনি দেশের ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন। আজ অনেক সংগঠন তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। অনেকে বড় বড় কথা বলছেন। ৫ আগস্টের পর নতুন করে যেসব সংগঠন গড়ে উঠেছে, সেসব সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন অফিস-আদালতে গিয়ে তদবির শুরু করেছে। কিন্তু তারেক রহমান কোথাও কোন তদবির করেননি। তাই বলছি—আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব তারেক রহমানের কাছেই নিরাপদ। তিনি চোরাপথে নয়, জনগণের ভোটেই ক্ষমতায় যেতে চান।”
তিনি বলেন, “আজকের সরকার ক্ষমতায় আসার এক বছর হয়ে গেছে। কিন্তু যারা আহত হয়েছে, তাদের এখনো চিকিৎসা দিতে পারেননি। নিহতদের পরিবারকেও মূল্যায়ন করেননি। অথচ আমাদের নেতা তারেক রহমান সবার খবর রাখছেন। জুলাই অভ্যুত্থানে যারা আহত ও নিহত হয়েছেন, তাদের পুনর্বাসনের দাবি করছি এই সমাবেশ থেকে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “৫ আগস্টের আগে যাদের আন্দোলন সংগ্রামে দেখা যায়নি, তারা আজ বড় বড় কথা বলছেন। লাশ নিয়ে রাজনীতি করছেন। দলীয় নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করছেন, মামলা করাচ্ছেন। কোন ইশারায় লালপুর-বাগাতিপাড়ার নিরীহ বিএনপি নেতা-কর্মীরা জেল খাটছেন? নাটোরের আদালত শুধু লালপুর-বাগাতিপাড়ার নেতাকর্মীদের জেল দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে কিনা, সেটাই এখন প্রশ্ন।”
তিনি বলেন, “নাটোর-১ আসনে আমার মোটরসাইকেলে চড়ে ফজলুর রহমান পটল নির্বাচন শুরু করেছিলেন। তার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত পটল সাহেবের পক্ষে লড়াই করেছি। যারা একসময় তাকে অবাঞ্ছিত বলেছিলেন, তারাই আজ মায়া কান্না করছেন। বিএনপিকে আজ তিন-চার ভাগে ভাগ করে ফেলা হয়েছে। পটল সাহেবের লাশও ভাগ করে ফেলেছেন শুধুমাত্র একজন এমপি হওয়ার জন্য।”
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করতে বিগত ১৭ বছর ধরে মানুষের জন্য কাজ করছি, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি। ঢাকায় পার্টি অফিসে পড়ে থেকেছি। ৪৩ বছর বিএনপির রাজনীতি করছি। দলকে ব্যবহার করে কখনো টাকাও ইনকাম করিনি, অন্যায় করিনি, করবোও না। কাউকে করতেও দেব না।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপি’র রাজনীতি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের রাজনীতি। আমরা কখনো দলের ক্ষতি হোক এমন রাজনীতি করি না।”
সবশেষে তিনি ভেদাভেদ ও দ্বন্দ্ব ভুলে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “মানুষের জন্য কাজ করুন। দল যাকে মূল্যায়ন করবে, সেই নির্বাচন করবে। আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় থাকতো, আমি নিজেকে প্রার্থী হিসেবেই ঘোষণা করতাম না। তারেক রহমান ও খালেদা জিয়া যদি আমাকে মনোনয়ন দেন, ইনশাআল্লাহ নাটোর জেলায় সর্বাধিক ভোটে জয়ী হবো।”
তিনি বলেন, “পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে এমন অবস্থা হবে, ভোট দিবেন লালপুরে, কিন্তু এমপি হবেন মাদারীপুরে!” এ সময় নেতাকর্মীরা “পিআর পদ্ধতি চাই না” বলে তার বক্তব্যকে সমর্থন করেন।
লালপুর উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান সরকার, বাগাতিপাড়া উপজেলা বিএনপি`র সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক শামীম সরকার, বাগাতিপাড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র এ কে এম শরিফুল ইসলাম লেলিন, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম আরিফ, উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই নান্নু, যুগ্ম আহবায়ক নাজির উদ্দিন বাবু, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান, নাটোর জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি এনামুল হক বিদ্যুৎ, লালপুর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মঞ্জু আহমেদ রয়েল সহ বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
প্রিন্ট