ঢাকা , শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo লালপুরে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়ংকর আগাছা পার্থেনিয়াম, প্রয়োজন জরুরি পদক্ষেপ Logo বেনাপোলে স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যা Logo শেখ হাসিনার বাবুর্চির এত ক্ষমতা ! Logo মধুখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মেটাডোর কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি নিহত Logo যশোরে দ্যোতনা সাহিত্য পরিষদের ঈদ পুনর্মিলনীঃ ‘কবিরা সমাজকে অর্থবহ বার্তা দেন’ Logo নড়াইলে সেনা-পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেফতার মাগুরার কুখ্যাত মনিরুল ও তার সহযোগীরা Logo জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি রাজপথে থাকবেঃ -সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম Logo কালাইয়ে লোক সংস্কৃতি পরিষদের উদ্দ্যোগে গুণীজন সন্মাননা প্রদান Logo বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন, মৃত্যু বেড়ে ১৩ Logo রূপগঞ্জে স্কুল ছাত্র জুবায়ের হত্যা মামলার দুই আসামী গ্রেফতার
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কুষ্টিয়ায় নারীকে নির্যাতন, মামলার পর গ্রেফতার আসামি ছিনিয়ে নিতে থানা ঘেরাও

ইসমাইল হােসেন বাবুঃ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মাংস চুরির অভিযোগে এক নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর মাথার চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া নির্যাতনের পর ওই নারীর বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

এ ঘটানয় মঙ্গলবার (১০ জুন) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী। এ মামলায় বুধবার (১১ জুন) সকাল ৯টার দিকে তিন নারী আসামিকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার আসামিদের ছিনিয়ে নিতে সকাল ১১টা থেকে থানা ঘেরাও করে রাখেন শতাধিক গ্রামবাসী। থানা চত্বরে সকাল ১১টা ৩৫ মিনিট থেকে ৫১ মিনিট পর্যন্ত গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) পিকআপে আসামিদের আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।

আসামিরা হলেন- উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন, মোমিনের স্ত্রী পারভিন খাতুন ও বক্করের স্ত্রী লিপি খাতুন।

সরেজমিন থানা চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, থানা চত্বরে উৎসুক জনতার ভিড়। পুলিশ আসামিদের গাড়িতে তুলছেন। আর জনগণ আসামি নিয়ে যেতে বাধা প্রদান করছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে ধস্তাধস্তি হয়।

এসময় মির্জাপুর গ্রামের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রিপন বলেন, ওই নারী আমার বাড়ি থেকে ৪১ হাজার টাকা ও মাংস চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়েছে। পুলিশ চোরের পক্ষ নিয়ে আমার স্ত্রীসহ তিনজনকে ধরে এনেছে। আমরা চোরের শাস্তি ও আটকদের ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।

একই এলাকার আমিরুলসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ওই নারী একজন চোর। এলাকার বিভিন্ন বাড়ি থেকে চুরি করেছে। সেদিন লোকজন ধরে বিচার করেছে। পুলিশ আমাদের লোক ধরে এনেছে। আমরা সঠিক বিচার চাই।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত সোমবার বিকেলে প্রতিবেশীর ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে মাংস নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে ভুক্তভোগী নারীর বিরুদ্ধে। সে সময় প্রতিবেশীর স্ত্রী তাকে ধরে বাড়ির উঠানে পেয়ারা গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করে মাংস কেড়ে নেন। একপর্যায়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান স্বামী।

ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন রাত ৮টার দিকে তাদের বাড়িতে ভাঙচুর করে তাকে তুলে ফের প্রতিবেশীর বাড়ি নিয়ে আসে। সেখানে তাকে মারধর করে মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। রাত ১০টার দিকে স্বজন ও এলাকাবাসী নিয়ে সালিশ বসান স্থানীয় ইউপি সদস্য। এসময় মারধরের শিকার নারীর দুটি গরু, একটি ছাগল ও স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মামলার বাদী বলেন, ষড়যন্ত্র করে চুরির নাটক সাজিয়ে আমার সঙ্গে অন্যায় করেছে গ্রামের লোকজন। আমি বিচারের আশায় থানায় মামলা করেছি। কিন্তু মামলা তোলার জন্য সবাই হুমকি দিচ্ছে।

ঘটনার পর ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় শতাধিক বাসিন্দা নারীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ মাথার কাপড় সরিয়ে দিচ্ছেন। আনন্দ-উল্লাস করছেন। কেউ কেউ এসব দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রশিদ বলেন, শারীরিক নির্যাতন, চুল কর্তন, ভাঙচুর-লুটপাটসহ বিভিন্ন অভিযোগে এক নারী মামলা করেছেন। মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

থানা ঘেরাও করার ঘটনা স্বীকার করে কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলাইমান শেখ বলেন, আসামিদের আদালতে নেওয়ার সময় গ্রামের লোকজন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবুও কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে আসামিদের আদালতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

লালপুরে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়ংকর আগাছা পার্থেনিয়াম, প্রয়োজন জরুরি পদক্ষেপ

error: Content is protected !!

কুষ্টিয়ায় নারীকে নির্যাতন, মামলার পর গ্রেফতার আসামি ছিনিয়ে নিতে থানা ঘেরাও

আপডেট টাইম : ০৩:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫
ইসমাইল হােসেন বাবু, সিনিয়র ষ্টাফ রিপাের্টার :

ইসমাইল হােসেন বাবুঃ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মাংস চুরির অভিযোগে এক নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর মাথার চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া নির্যাতনের পর ওই নারীর বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

এ ঘটানয় মঙ্গলবার (১০ জুন) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী। এ মামলায় বুধবার (১১ জুন) সকাল ৯টার দিকে তিন নারী আসামিকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার আসামিদের ছিনিয়ে নিতে সকাল ১১টা থেকে থানা ঘেরাও করে রাখেন শতাধিক গ্রামবাসী। থানা চত্বরে সকাল ১১টা ৩৫ মিনিট থেকে ৫১ মিনিট পর্যন্ত গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) পিকআপে আসামিদের আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।

আসামিরা হলেন- উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন, মোমিনের স্ত্রী পারভিন খাতুন ও বক্করের স্ত্রী লিপি খাতুন।

সরেজমিন থানা চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, থানা চত্বরে উৎসুক জনতার ভিড়। পুলিশ আসামিদের গাড়িতে তুলছেন। আর জনগণ আসামি নিয়ে যেতে বাধা প্রদান করছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে ধস্তাধস্তি হয়।

এসময় মির্জাপুর গ্রামের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রিপন বলেন, ওই নারী আমার বাড়ি থেকে ৪১ হাজার টাকা ও মাংস চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়েছে। পুলিশ চোরের পক্ষ নিয়ে আমার স্ত্রীসহ তিনজনকে ধরে এনেছে। আমরা চোরের শাস্তি ও আটকদের ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।

একই এলাকার আমিরুলসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ওই নারী একজন চোর। এলাকার বিভিন্ন বাড়ি থেকে চুরি করেছে। সেদিন লোকজন ধরে বিচার করেছে। পুলিশ আমাদের লোক ধরে এনেছে। আমরা সঠিক বিচার চাই।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত সোমবার বিকেলে প্রতিবেশীর ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে মাংস নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে ভুক্তভোগী নারীর বিরুদ্ধে। সে সময় প্রতিবেশীর স্ত্রী তাকে ধরে বাড়ির উঠানে পেয়ারা গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করে মাংস কেড়ে নেন। একপর্যায়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান স্বামী।

ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন রাত ৮টার দিকে তাদের বাড়িতে ভাঙচুর করে তাকে তুলে ফের প্রতিবেশীর বাড়ি নিয়ে আসে। সেখানে তাকে মারধর করে মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। রাত ১০টার দিকে স্বজন ও এলাকাবাসী নিয়ে সালিশ বসান স্থানীয় ইউপি সদস্য। এসময় মারধরের শিকার নারীর দুটি গরু, একটি ছাগল ও স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মামলার বাদী বলেন, ষড়যন্ত্র করে চুরির নাটক সাজিয়ে আমার সঙ্গে অন্যায় করেছে গ্রামের লোকজন। আমি বিচারের আশায় থানায় মামলা করেছি। কিন্তু মামলা তোলার জন্য সবাই হুমকি দিচ্ছে।

ঘটনার পর ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় শতাধিক বাসিন্দা নারীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ মাথার কাপড় সরিয়ে দিচ্ছেন। আনন্দ-উল্লাস করছেন। কেউ কেউ এসব দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রশিদ বলেন, শারীরিক নির্যাতন, চুল কর্তন, ভাঙচুর-লুটপাটসহ বিভিন্ন অভিযোগে এক নারী মামলা করেছেন। মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

থানা ঘেরাও করার ঘটনা স্বীকার করে কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলাইমান শেখ বলেন, আসামিদের আদালতে নেওয়ার সময় গ্রামের লোকজন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবুও কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে আসামিদের আদালতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।


প্রিন্ট