শুভাশীষ ভট্টাচার্য্য তুষারঃ
পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ২ শতাধিক কারখানায় তৈরি হচ্ছে অবৈধ চায়না দুয়ারি জাল।ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে ওঠা এসব কারখানায় অবাধে তৈরি হচ্ছে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল। আর তৈরিকৃত এসব নিষিদ্ধ চয়না দুয়ারি জালের বাজারজাতকরণ শুরু হয় ভোর থেকে।
.
উপজেলা প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও কোন ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না এসব অবৈধ কারখানা। এসব অবৈধ চায়না দুয়ারি জালের কারখানা চললেও তা নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের।
.
কিছু অসাধু ব্যাবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের আশায় গোপনে চালিয়ে যাচ্ছে এসব কারখানা। আর এ এলাকার তৈরিকৃত জাল বিক্রি হচ্ছে চলনবিলাঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এতে করে দেশিয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। দেখা দিচ্ছে দেশিয় মাছের সংকট। জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য চায়না দুয়ারী জাল কারেন্ট জালের চেয়েও ক্ষতিকর। এ জাল সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে মাছ আটকে রাখতে সক্ষম। জালের বুননে এক গিঁঠ থেকে আরেক গিঁঠের দূরত্ব খুব কম হওয়ায় মাছ বা অন্য কোনো ক্ষুদ্র জলজ প্রাণী একবার এ জালের মধ্যে প্রবেশ করলে আর বের হতে পারে না। অন্য জালের চেয়ে কম পরিশ্রমে চায়না দুয়ারী জালে অধিক পরিমাণ মাছ পাওয়া যায় বলে মৎস্য শিকারীরা এ জাল ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় মাছ শিকার করছেন অবাধে।
.
জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় ২৫০টি বড় আকৃতির জাল তৈরির কারখানা রয়েছে। এসব কারখানা থেকে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার জাল তৈরি করে চলনবিলাঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ডেমড়া গ্রামে আব্দুল খালেক, আব্দুল জব্বার, আলাউদ্দিন, বিদ্যুৎ হলদার,পরিতোষ হলদার, নিত্য হলদার, পরি হলদার, দীপ্ত হলদার, দিলীপ হলদার, তালক হলদার, মোয়াজ্জেম, সামাদসহ প্রায় ১৫০টি, রতনপুরে শাহীন, মানিক, সমেশ, আলীম, পলাশ, আমিন, লতা খাতুন, মিজানুরসহ ৫০টি, আগপুঙ্গলী গ্রামের কালাম, মুন্না, নিমরুল, শিবু, রমজান হোসেন, নুরুল প্রামাণিক, পতিত হলদার, ঈশ্বর হলদার, শিপন ও সুজনসহ ৩০টি, গোপালনগর গ্রামের প্রসেনজিত হলদার, লক্ষণ হলদার, সন্তোষ হলদার, ময়েন, সালাম, রিপন ও আলামিনসহ ২০টি বড় কারখানা রয়েছে। এছাড়া এসব এলাকার সহস্রাধিক বাড়িতেও জাল তৈরির সরন্জাম রয়েছে । তাতে প্রচুর পরিমাণ তৈরি হচ্ছে অবৈধ চায়না দুয়ারি জাল।তৈরিকৃত এসব জাল চলনবিলাঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে তারা।সবাইকে ম্যানেজ করেই তারা চালাচ্ছেন এসব অবৈধ জাল তৈরির কারখানা।
.
মৎস্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষা আইন ১৯৫০ এর মতে কোন ব্যাক্তি চায়না দুয়ারি জাল তৈরি সংরক্ষণ আমদানি রপ্তানি বাজারজাতকরণ বহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়েই চলছে জাল তৈরি, রপ্তানি, বাজারজাতকরণ ও বহন। এ গুলো দেখার কেউ নেই।
.
এ ব্যাপারে কারখানা মালিক জয়দেব হলদার এক প্রতিবেদককে জানান,চায়না জাল তৈরি করার জন্য আমরা সবাই ম্যানেজ করেই চলাচ্চি। আমাদের তৈরিকৃত জাল সারা বাংলাদেশে যায়।আমার কারখানায় ২০ জন লোক আছে তারা চায়না দুয়ারি জাল তৈরি করে। আপনি আমাদের সভাপতিকে বলেন তিনি সব বলতে পারবেন।
.
চায়না দুয়ারি জাল তৈরি সমিতির সভাপতি সুশান্ত হলদার প্রতিবেদককে জানান,প্রশাসন সহ সবাইকে ম্যানেজ করে আমরা এ কারখানা চালাই এতে আমাদের বাজারজাতকরণে কোন সমস্যা হয় না
.
ফরিদপুর উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুজিত কুমার মুন্সি জানান, আমি প্রায় ১ বছর ৬ মাস হলো ফরিদপুরে এসেছি। অবৈধ চায়না জালের কারখানার বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করেছি। বেশকিছু কারখানা আমরা বন্ধ করে দিয়েছি।তারপরও এসব কারখানায় কেন তৈরি করা হচ্ছে অবৈধ জাল? তা আমার জানা নেই। অবৈধ চায়না জালের কারখানার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
.
ফরিদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান জানান আমরা এ বিষয়ে অত্যান্ত আন্তরিক।আপনাদের সহোযোগিতা দরকার। দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে।
প্রিন্ট