ইসমাইল হােসেন বাবুঃ
কুষ্টিয়ায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একজন এমবিবিএস নারী চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। তার নাম শারমিন সুলতানা সরকারি চাকুরিসহ বিভিন্ন ভাতা পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ৫০ জনের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওই চিকিৎসককে ভুক্তভোগীরা মারধর করেছেন।
সোমবার (৫ মে) দুপুর ২ টারদিকে কুষ্টিয়া শহরের লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই হামলা ঘটনাটি ঘটে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে পুলিশ তাকে জনতার বিক্ষুব্ধ রোষানল থেকে উদ্ধার করে করে নিয়ে আসে।
পুলিশ জানায়, নারী চিকিৎসক শারমিন সুলতানার বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে বিক্ষুব্ধ বেশ কিছু নারী-পুরুষ লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেম্বারে কর্তব্যরত ওই ডাক্তারের উপর আক্রমণ করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ জনতার রোষানল থেকে চিকিৎসক শারমিনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। তিনি কুষ্টিয়া শহরের বেসরকারি ক্লিনিকে রোগী দেখেন। এদিকে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন জানান। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।
চিকিৎসক শারমিন সুলতানার স্বামী কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অর্জন দাস আগরওয়ালা সড়কে লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত রোগী দেখেন চিকিৎসক শারমিন সুলতানা। গতকাল দুপুরে চেম্বারে আসার পর আগে থেকে সেখানে অবস্থান করা একদল নারী তার ওপর হামলা করে। ৬-৭ জন নারী এতে অংশ নেয়। এ সময় চেম্বার থেকে টেনে-হিঁচড়ে সড়কের ওপর নিয়ে আসে তারা।
হামলার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ৫ মিনিটের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ৬-৭ জন নারী ভুক্তভোগী চিকিৎসক শারমিন সুলতানাকে টেনে-হিঁচড়ে সড়কের ওপর নিয়ে আসছে। সেখানে তাকে মারধর করা হচ্ছে।
নারীদের কয়েকজন অভিযোগ করে, পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে বিদেশে লোক পাঠানো ও চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাদের মাধ্যমে টাকা নেন ওই চিকিৎসক। পরে চাকরি দিতে পারেননি ওই নারী চিকিৎসক। আবার টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। এ কারণে তাকে ধরতে এসেছেন তারা।
লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কয়েকজন কর্মচারী জানান, তারা ঠেকানোর চেষ্টা করলে ওই নারীরা হামলা চালায়। স্থানীয়রা ইন্ধন দিয়ে নারীদের দিয়ে হামলা চালিয়েছে। চিকিৎসককে বেদম মারধর করা হয়েছে। তাদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে পুলিশকে জানাতে পারত।
এ দিকে হামলার সময় পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে কুষ্টিয়া মডেল থানা থেকে পুলিশের একটি দল এসে চিকিৎসক শারমিন সুলতানাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এরপর সেখানে চিকিৎসকরা ভিড় করেন।
মেহেরপুরের মুজিবনগর এলাকার সুমি খাতুন ও চুয়াডাঙ্গার জেলার দর্শনার সালমা খাতুন জানান, ডাক্তার শারমিন সরকারি চাকরি, জায়গা-জমি, ঘরবাড়ি ও সরকারি বিভিন্ন ভাতা পাইয়ে দেওয়ায় প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের দুজনের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা টাকা নেয়। তার প্রলোভনে পড়ে আমরা তার হাতে টাকা তুলে দিই। এছাড়া একই প্রলোভনে অন্যান্যদের কাছ থেকেও ওই চিকিৎসক বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। পরবর্তীতে টাকা ফেরত চাইলে টাকা ফেরত না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হয়।
চিকিৎসক শারমিন সুলতানার স্বামী কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মাসুদ রানা বলেন, আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। আমার স্ত্রী কোনো দিন মেহেরপুরে যাইনি। ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক আমার স্ত্রীকে রোগী দেখার জন্য কল করে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকেই ওইসব নারীরা বসেছিল। এরপর তারা হামলা করে। আমি খবর শুনে সেখানে গেলে আমার ওপরও হামলার চেষ্টা চালানো হয়। আমি সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, নারী চিকিৎসককে মারধর করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থল থেকে নারী চিকিৎসককে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। যেসব অভিযোগে তার ওপর হামলা হয়েছে তার স্বপক্ষে কোনো কাগজপত্র আছে কি-না সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রাতে চিকিৎসকদের একটি দল থানায় যায়। তারা নারী চিকিৎসকের ওপর হামলার নিন্দা জানান। এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন তারা।
প্রিন্ট