আলিফ হোসেনঃ
রাজশাহীর তানোরে বছরের প্রথম কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।জানা গেছে,গত ১মে বৃহস্পতিবার দুপুরে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া একই সঙ্গে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ঝড়বৃষ্টি কমে গেলেও প্রচুর পরিমাণে শিলা পডে।এতে পাকা বোরোধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
.
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, ঝড়ের সময় যেসব জমিতে পাকা ধান ছিল তা মাটিতে পড়ে যায় এবং জমিতে পানি জমে যায়। অনেক জায়গায় কাটা ধানও জমিতে শুকানোর জন্য রাখা ছিলো যা বৃষ্টিতে ভিজে ও শিলার আঘাতে ঝরে পড়ে।এসব ধান শুকাতে না পারলে নষ্ট হয়ে যাবে। বর্তমান যে সময় চলছে এই সময়ে কৃষকের বোরো ধান কাটার ভরা মৌসুম। আর এই ভরা মৌসুমে হঠাৎ শিলাবৃষ্টির কারণে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
.
উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) পাড়িশো-বাতাসপুর গ্রামের কৃষক দুলাল ও সামাদ বলেন, তাদের অনেক ধান কেটে জমিতে ফেলে রাখা ছিল, জমিতে পানি জমে যাওয়ায় ধান গুলো ডুবে গেছে । সেগুলো শুকাতে না পারলে সব নষ্ট হয়ে যাবে। তাদের এলকায় এখনো অর্ধেকের বেশি ধান মাঠেই রয়েছে। অনেক কৃষক ধান কেটে জমিতেই রেখেছিলেন বৃষ্টির কারণে ওই সকল ধান এখন পানির নিচে। আবার যারা দু’ একদিনের মধ্যে ধান কাটবে বলে মনস্থির করেছে তাদের ক্ষতি সব থেকে বেশি হয়েছে। সামাদ আরো বলেন, এবছর তিনি ১৮ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন এরমধ্যে ৮ বিঘা জমির ধান এখনো মাঠেই রয়েছে। শিলার আঘাতে ওই ৮ বিঘা জমির সিংহভাগ ধান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
.
একই ইউপির দমদমা গ্রামের কৃষক ভুট্টো ও বাবুল আক্তার বলেন, হঠাৎ শিলা বৃষ্টিতে তাদের মাঠে কেটে রাখা বোরো ধানের যে ক্ষতি হয়েছে তা কোন ভাবেই পূরণ হবার নয়। দোস্তারামপুর গ্রামের কৃষক ইন্দোজিত বলেন তার ১২ বিঘা জমির মধ্যে ৪ বিঘা জমির ধান শিলা বৃষ্টিতে ঝরে গেছে।
.
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি এলাকায় হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে ফসলের বিশেষ করে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে নিচু এলাকার বোরো ধান বর্তমানে পানির নিচে। আর যেসব ধান এখনো কাটা সম্ভব হয়নি সেই ধান শিলার আঘাতে ঝড়ে পড়েছে জমিতে। ফলে, শিলা বৃষ্টির কারনে বোরো ধানের অপুরনীয় ক্ষতি হয়েছে।
.
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, তানোরে চলতি মৌসুমে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৪ হাজার ২০০ হেক্টর, কিন্তু চাষাবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ১৩০ হেক্টর, ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়নি। তানোরের বিলকুমারী বিলের চাঁন্দুড়িয়া ইউপি থেকে কামারগাঁ ইউপি পর্যন্ত আগাম বোরো চাষ হয়েছে ৩৯৪ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৪ দশমিক ৮০০ মেট্রিক টন। গত ১৫ মার্চের আগে যে সব জমিতে ধান রোপন করা হয় সেগুলো বোরো আবাদ হিসেবে ধরা হয়। আর ১৫ মার্চের পরে যে সব জমি রোপন হয় সেগুলোকে আউশ চাষাবাদ হিসেবে ধরা হয়। এবারে ৭ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আউশ চাষ হয়েছে।
.
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদ বলেন, বর্তমানে বোরো ধান কাটার ভরা মৌসুম চলছে। হঠাৎ শিলাবৃষ্টির কারণে কৃষকের মাঠে বোরো ধানের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে, কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বৃষ্টি থামার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিজ নিজ এলাকার মাঠে পাঠিয়ে কেটে রাখা ধানের জমি থেকে পানি বের করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন।
.
উপ সহকারী কৃষি অফিসার আকবর হোসেন, রাকিব হোসেন ও মীর সুমন রানা বলেন, বৃষ্টি থামার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা ও সু পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তারা বলেন, আমরা কৃষি অফিস সর্বদা কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।
প্রিন্ট