মাও: খোন্দকার আব্দুল হালিমঃ
মানবসভ্যতার ইতিহাসে মুহাম্মদ (সা.) শুধু একজন ধর্মপ্রচারক নন, বরং একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক, ন্যায়বিচারক ও শ্রমবান্ধব সমাজব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর শ্রমনীতি কেবল শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের দিকনির্দেশনা দেয়নি, বরং শ্রমিকের মর্যাদা, অধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্নে মানবতার সর্বোচ্চ আদর্শ স্থাপন করেছে। বর্তমান বিশ্বে যখন শ্রমিক শ্রেণি শোষণ, বৈষম্য ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে—তখন রাসূল (সা.)-এর শ্রমনীতি বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
রাসূল (সা.) এর শ্রমনীতির মূলনীতি:
১. শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার স্বীকৃতি:
নবী করীম (সা.) বলেন, “নিজের কামাই করা উপার্জনই সর্বোত্তম রিজিক।” (বুখারী)। তিনি শ্রমকে গর্বের বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করেছেন এবং শ্রমিককে অবহেলা না করে সম্মানিত করেছেন।
২. ন্যায্য মজুরি প্রদান:
রাসূল (সা.) বলেন, “কোনো শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।” (ইবনু মাজাহ)। এতে স্পষ্টভাবে সময়মতো ও ন্যায্য মজুরি প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে।
৩. শোষণ ও জবরদস্তি নিষিদ্ধ:
তিনি বলেন, “আমি তিনজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কিয়ামতের দিন বাদী হবো—যে ব্যক্তি একজন শ্রমিককে নিয়োগ করে তার থেকে সম্পূর্ণ কাজ আদায় করে নেয় কিন্তু মজুরি দেয় না।” (বুখারী)। এই হাদীস ইসলামে শ্রমিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের দলিল।
৪. সমান অধিকার ও দায়িত্ব:
রাসূল (সা.) নিজের হাতে খেজুর বাগানে কাজ করেছেন, খাদ খননে শ্রম দিয়েছেন। এতে প্রমাণ হয়, নেতা হোন আর সাধারণ মানুষ—শ্রম সবার জন্য সম্মানজনক।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে শ্রমিকদের নিয়ে যে শোষণমূলক ব্যবস্থা চলছে তা হলো দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, স্বল্প মজুরি, নিরাপত্তার অভাব, চুক্তিভিত্তিক অনিশ্চয়তা। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে রাসূল (সা.) এর শ্রমনীতির দিকে ফিরে তাকানো অপরিহার্য।
বিশ্বজুড়ে ‘ফেয়ার ট্রেড’, ‘ন্যূনতম মজুরি’, ‘কারখানায় নিরাপত্তা’—এসব শব্দমালা মূলত ইসলামের প্রবর্তিত শ্রমনীতিরই আধুনিক সংস্করণ।
রাসূল (সা.)-এর শ্রমনীতি কেবল তাত্ত্বিক নয়, বাস্তবভিত্তিক ও মানবিক। আজকের বৈষম্যপূর্ণ ও শোষণপ্রবণ শ্রমব্যবস্থার উত্তরণের জন্য প্রয়োজন রাসূলের (সা.) আদর্শ বাস্তবায়ন। রাষ্ট্র, সমাজ ও কর্পোরেট কাঠামো—সবখানেই তাঁর শ্রমনীতির আদর্শকে ফিরিয়ে আনলেই গড়ে উঠতে পারে একটি ইনসাফভিত্তিক মানবিক সমাজ।
প্রিন্ট