প্রদীপ্ত চক্রবর্তীঃ
চুলা থেকে নামিয়ে ভান্ডারে রাখতেই হুড়াহুড়ি লেগে গেল । জটলা ঠেলে হাত বাড়িয়ে কার আগে কে কিনবেন , খাবেন তা নিয়ে চলছে কিছুটা বাগ বিতন্ডা । মিষ্টিটা গরম তাই কিনতে , খেতে হবে তাড়াতাড়ি । ঠান্ডা হলে উধাও হবে আসল স্বাদ । চট্টগ্রাম – কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া কমল মুন্সী হাটের ঐতিহ্যবাহী গৌরাঙ্গ মিষ্টি বিতান এর রোজকার চিত্রটা এমনই । জিভে স্বাদ লেগে থাকা মজাদার এ মিষ্টির রয়েছে পুরনো ঐতিহ্য । রয়েছে দারুণ খ্যাতি।
.
প্রতিদিন সকালে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের গোয়ালাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় খাঁটি দুধ । সেই দুধ থেকে দুপুর ১২ টার মধ্যে তৈরি হয় মিষ্টি । প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ কেজি দুধ আসে গৌরাঙ্গ মিষ্টি বিতানের রান্না ঘরে । যেখান থেকে ছানা তৈরি হয় । ছানা তৈরি করার আগে দুধ চুলায় ফুটানো হয় । ফুটানোর পর তাতে সিরকা বা ভিনেগার দেওয়া হয় । তবে পুরনো রীতি অনুযায়ী তারা ব্যবহার করেন ছানার পানি । ঠান্ডা হয়ে গেলে এই দুধের পানি আর ছানা আলাদা হয়ে যায় । একটু পর সেগুলো পরিষ্কার সুতি কাপড় বেঁধে পানি ঝরাতে দেওয়া হয় । পুরো পানি ঝরে গেলে তৈরি হয় ছানা । হাতের তালুতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছানা থেকে গোলাকার অবয়ব তৈরি করে তা চুলার শিরায় ছেড়ে দেওয়া হয় । ব্যস ! তৈরি হয়ে গেল রসগোল্লা , কালোজাম , চমচম এর মত সুস্বাদু মিষ্টি।
.
গৌরাঙ্গ মিষ্টি বিতানের স্বত্বাধিকারী সুমন দাস দোকানের ঐতিহ্য সম্পর্কে বলেন , ১৯৭৩ সালে তার ঠাকুর দাদা সারদা দাস চট্টগ্রাম শহরের কোরবানীগঞ্জের এক মিষ্টির দোকান থেকে কাজ শিখে এসে এখানে দোকান দেন । পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে সারদা দাসের মৃত্যুর পর তার বাবা গৌরাঙ্গ দাস এই দোকানের হাল ধরেন । ২০১২ সালে গৌরাঙ্গ দাসের মৃত্যুর পর থেকে সুমন দাস এই দোকান পরিচালনা করা আসছেন ।
.
তিনি বলেন আমাদের মিষ্টির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আমরা সবসময়ই নির্ভেজাল ছানার মিষ্টি তৈরি করে থাকি । ৬ কেজি দুধ থেকে ১ কেজি ছানা হয় । ১ কেজি ছানা দিয়ে সাড়ে ৩ কেজি মিষ্টি তৈরি হয় । যে কোন উৎসব ,অনুষ্ঠানে প্রয়োজন হয় গৌরাঙ্গের মিষ্টি ‘র । অনুষ্ঠান উৎসবে অতিথি আপ্যায়ন এই গৌরাঙ্গর মিষ্টি ছাড়া কল্পনাই করা যায় না । তাইতো সবাই বলে গৌরাঙ্গর মিষ্টি অপূর্ব সৃষ্টি ।
প্রিন্ট