মোঃ নূর-ই-আলম (কাজী নূর)
যশোরের চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি গ্রামের চান্দু মোল্লা। মাঠে চাষাবাদে নিজের কোন জমি নেই। এক বিঘা জমি এবার লিজ নিয়ে চলতি মৌসুমের বোরো ধান আবাদ করেছিলেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকাতে ধানের ফলনও ভালো হয়েছিলো। ধানের এ ফলনে দেখেছিলেন রঙিন স্বপ্নও। তার এই রঙিন স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়েছে প্রকৃতির কাছে। গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকালে আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে তছনছ হয়ে গেছে। জমিতে কেটে রাখা ধান প্রথমে শিলাবৃষ্টিতে ঝরেছে; এরপর ডুবে যাওয়া ধান হাটু পানিতে ভিজেছে।
.
শুধু চান্দু মোল্লা নয়; যশোরের চার উপজেলায় প্রায় আধাঘণ্টা ধরে বৃষ্টির সাথে শিলা পড়ায় বোরো চাষি মাঠে মারা গেছে। এতে গাছ থেকে ধান পড়ে ‘ন্যাড়া’ হয়ে গেছে। এখন অনেকটা খড়ের খেত মনে হচ্ছে। সাথে কালবৈশাখি ঝড়ে ধান গাছ মাটির সাথে লুটিয়ে পড়েছে। আর খেতে কাটা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। সবমিলিয়ে চাষিদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। দেনা পরিশোধ নিয়ে মহাচিন্তায় পড়েছেন কৃষক। বোরো মৌসুমের ৫ হাজার ১১ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে আম, লিচু ও সবজিরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
.
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে সরকারকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে কৃষক খেতমজুর সংগ্রাম সমিতির যশোর জেলা শাখাসহ বাম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) যশোরের জেলা প্রশাসক মোঃ আজাহারুল ইসলামের সাথে দেখা করে এ আহ্বান জানান তারা। প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কৃষক খেতমজুর সমিতির কেন্দ্রীয় সহ- সধারণ সম্পাদক ও জেলা সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ভিটু, সদর উপজেলার নেতা আব্দুস শুকুর, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির জেলা নেতা অ্যাড আমিনুর রহমান হিরু, ইন্জিঃ আবু হাসান, বাংলাদেশ খেতমজুর কৃষক ফ্রন্টের রফিউদ্দিন, শাহজাহান আলী, হাচিনুর রহমান, আলাউদ্দিন, উজ্জ্বল বিশ্বাস ও হুমায়ুন কবির সেতু প্রমুখ। প্রতিনিধিরা কৃষকের ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
.
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলছেন, যশোরের উপর দিয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ প্রচণ্ড তাপদাহ বয়ে যাচ্ছিলো। এর মধ্যে গত সোমবার দুপুর দুইটার দিকে আকাশ কালো মেঘে ঢাকা পড়ে। এরপর শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। কিছুক্ষণের মধ্যেই কালবৈশাখীর ঝড়ের সঙ্গে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। এক পর্যায়ে বৃষ্টি কম হলে প্রচুর পরিমাণে শিলা পড়তে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে শিলা পড়ার কারণে যশোরে বোরো মৌসুমে উঠতি ধানের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সবেচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চৌগাছা উপজেলায়। শেষ সময়ে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চিন্তিত হাজার হাজার কৃষক।
.
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই সময়ে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টি স্বাভাবিক। তবে এবার যশোরের চৌগাছা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের বলা হয়েছে, কেটে রাখা ধান দ্রুত ক্ষেত থেকে সরিয়ে নিতে এবং জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে।’
.
তিনি জানান, এ বছর যশোর জেলায় মোট ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার পর্যন্ত প্রায় ৫১ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। তার দেওয়া তথ্যমতে, আধা ঘন্টার শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধানের ৫ হাজার ১১ হেক্টর জমির ধান, তিল ১৩ হেক্টর, কলা ৩ হেক্টর, মরিচ ৮ হেক্টর, আম ১৭ হেক্টর, পাট ১ হাজার ৪৩৪ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
প্রিন্ট