ইসমাইল হােসন বাবুঃ
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পহেলা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রায় দেখা মিলেছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলা সাহিত্যের অমর কথা সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন, ফকির লালন শাহ, মুঘল সম্রাট আকবার, গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙ্গাল হরিনাথসহ অন্তত ৩৮ জন বিখ্যাত মনিষ্যি ব্যক্তির।
.
তবে তারা আসল নয়, ড্যামি। ড্যামি হলেও তাদের মাধ্যমে দারুণভাবে ফুটেছে বিখ্যাত এই ব্যক্তিদের অবকল চেয়ারা। তাদের দেখে মুগ্ধ নতুন প্রজন্মের দর্শনার্থীরা। এছাড়াও শোভাযাত্রায় বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, একাত্তোরের মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সচিত্র দেখা গেছে।
.
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে এমন বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন।জানা গেছে, বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষ্যে সোমবার সকাল সাগে ৯ টায় কুমারখালী শিল্পকলা একাডেমি থেকে বার্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে উপজেলা প্রশাসন। আনন্দ শোভাযাত্রাটি হলবাজার, গণমোড়, থানামোড়, গোলচত্বর, উপজেলা সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় আবুল হোসেন তরুণ অডিটোরিয়ামে চত্বরে শেষ হয়। পরে সেখানে দুই চিড়া খাওয়া, সাংস্কৃতিক অনু্ষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সাংস্কৃতিক অনু্ষ্ঠানে কুমারখালী শিল্পকলা একাডেমীর ১২৫ জন সংগীত ও নৃত্যু শিল্পী নেন।
.
শোভাযাত্রায় কয়েক হাজাার নানান শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে কুমারখালী সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রুহিনা ইসলাম প্রজ্ঞা বলেন, বৈশাখী শোভাযাত্রায় কবিগুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পিয়ারী সুন্দরী, কাজী মিয়াজান, মীর মশাররফ হোসেনসহ অসংখ্য মনিষীদের দেখেছি। খুব ভালো লেগেছে।
.
কলেজ ছাত্র শুভ মোল্লা বলেন, ‘প্রত্যাশার চেয়েও বেশি জাঁকজমক হয়েছে আয়োজন। বন্ধু বান্ধবী মিলে খুবই আনন্দ করছি। সুবর্ণা খাতুন নামের এক শিশু বলে, পহেলা বৈশাখ অনু্ষ্ঠানে নৃত্য করেছি। দই চিড়া খেয়েছি। খুবই ভাল লাগছে। ১৮ ধরে বৈশাখের শোভাযাত্রায় মীর মশাররফ হোসেনের ড্যামি চরিত্রে থাকেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান মানু। তিনি বলেন, প্রতি বৈশাখে একই চরিত্রে থাকি। নিজের কাছে খুবই ভাল লাগে। যতদিন বাঁচি, এ চরিত্রেই থাকতে চাই। আধুনিকতার বাইরে এসে যেন বাংলা সাংস্কৃতি ধরে রাখতে পারি। সেজন্য সম্রাট আকবরের ড্যামি সেজেছিলাম। কথা গুলো বলছিলেন চয়ন শেখ।’
.
পরিচয় জানতেই ‘বল বীর। বল উন্নত মম শির! শির নেহারি আমি, নত শির ওই শিখর হিমাদ্রীর!’ কবিতার কয়েকটি লাইন বলতে থাকেন পান্টি এলাকার মিলন হোসেন। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ড্যামি ছিলেন। নতুন প্রজন্মের কাছে বাঙালির ইতিহাস ঐহিত্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরতে এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের পরিচিত করতে রবীন্দ্রনাথ, মশাররফ, কাঙাল, বাঘা যতীনসহ ৩৮ টি ড্যামি চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা, ২৪ এর গণঅভ্যর্থান, প্যালেস্টাইনের চিত্র দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বলে জানান পরিচালক কবি ও নাট্যকর লিটন আব্বাস।
.
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাস বলেন, আনন্দ শোভাযাত্রায় বিখ্যাত ব্যক্তি ও মনিষীদের চরিত্র দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। তা দেখে মুগ্ধ সকল শ্রেণিপেশার মানুষ। ড্যামি ছাড়াও চিড়া দই খাওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে।
প্রিন্ট