ঢাকা , বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo নরসিংদী সিটি হাসপাতালে ১৮ ইঞ্চি ‘মব’ কাপড় পেটে রেখেই সেলাই, সংকটাপন্ন প্রসূতি Logo দৌলতপুরে থানার সামনে স্বর্ণের দোকানে দূর্ধর্ষ চুরি Logo শ্রেণিকক্ষে পানিঃ দৌলতপুরে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা Logo সারাদেশে এনসিপির সাড়া দেখে বলা হচ্ছে নিবন্ধনের কাগজে ঝামেলা আছেঃ -হান্নান মাসউদ Logo মাদারিপুরে দু’টি বাস-পিকআপের ত্রিমুখী সংঘর্ষে আহত ৬ Logo প্রয়াত বিচারক মহম্মদ নুরুল হোদা মোল্লার মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়ার মজলিস Logo ইবি ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ বিক্ষোভ Logo গোমস্তাপুরে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু Logo চরভদ্রাসনে টানা বৃষ্টিতে কর্মহীন ভ্যান-রিকশাচালকদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ Logo বাগাতিপাড়ায় লোকালয়ে দেখা মিললো বিরল কালো মুখ হনুমানের
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কুষ্টিয়ায় মুকুল ভরা গাছে আম নেই, দুশ্চিন্তায় চাষিরা

ইসমাইল হােসেন বাবুঃ

প্রথম প্রথম যখন আম গাছে মুকুল দেখা যায়, তখন কতই না খুশি ছিল কৃষকদের মনে। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনে ফিঁকে হয়ে উঠেছে তাদের সেই হাসি। বসন্তের আগমনে কুষ্টিয়ার প্রতিটি আম বাগান এ বছর মুকুলের স্নিগ্ধ সৌরভে মোড়ানো ছিল। গেল কয়েক বছরের তুলনায় বাগানগুলোতে এ বছর মুকুল এসেছিল সবচেয়ে বেশি। উচ্চ ফলনের স্বপ্ন বুনেছিলেন কৃষকরা।

 

কিন্তু গত ১৫ দিনের ব্যবধানে কুষ্টিয়ায় প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ বাগানের মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ৭০-৮০ শতাংশ বাগানে এখন গত বছরের তুলনায় আম নেই বললেই চলে। উকুন পোকা, তীব্র খরা এবং আবহাওয়াজনিত কিছু সমস্যার কারণেই বাগানগুলোর এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে মনে করছেন কৃষকরা। বাগানের এমন পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন আম চাষিরা। কুষ্টিয়ার অধিকাংশ আম উৎপাদন হয় ভেড়ামারা, দৌলতপুর, কুমার খালী,খোকসা ও মিরপুর উপজেলায়।

 

সম্প্রতি ভেড়ামারা ও দৌলতপুর আম বাগান গুলো ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ বাগানের মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। বাগানের ৮০ শতাংশ গাছেই কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ আমের দেখা মিলছে না। গত মৌসুমের তুলনায় বাগানগুলোতে এবছর ১০-১৫ শতাংশ আম রয়েছে। এই পরিমাণ আমে উৎপাদ খরচ উঠানোই কষ্টকর হয়ে যাবে বলে মনে করছেন এ জেলার কৃষকরা।

 

দৌলতপুর উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়নের হরণিগাছি গ্রামের আম চাষি রিয়াজ উদ্দীন জানান, নিজস্ব ৮ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত কোনো বৃষ্টিপাত নেই। যার কারণে উকুন পোকার আক্রমণ অনেক বেশি। বাগানে কীটনাশক স্প্রে করেও পোকা তাড়ানো যাচ্ছে না।

 

গত বছর বাগান থেকে আম বিক্রি করে সাড়ে ৬ লাখ টাকার মতো পেয়েছিলাম। শ্রমিক, কীটনাশক, পরিবহন এবং সেচ খরচসহ গত বছর প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছিল। এ বছর তীব্র তাপদাহের কারণে অধিকাংশ মুকুলই ঝরে গেছে। গতবারের তুলনায় বাগানে এ বছর আমের পরিমাণ অনেক কম। কিন্তু খরচ গত বছরের মতোই হবে। খরচ উঠাতে পারব কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় আছি।

 

ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের গোলাপনগর গ্রামের আমচাষি আমিরুল বলেন, নিজস্ব ৯ বিঘা জমিতে আম্রপালি আমের বাগান রয়েছে। এবছরের মতো উকুন পোকা আগে কখনো দেখিনি। ৯ বিঘা বাগানে এখন পর্যন্ত কীটনাশক এবং অন্যান্য খরচ মিলায়ে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। বাগানের এই পরিস্থিতি দেখে খুব হতাশার মধ্যে আছি। আম উঠানোর আগ পর্যন্ত এখনো অনেক খরচ হবে। এই পরিমাণ আম দিয়ে খরচের টাকা উঠানোই কষ্টকর হয়ে যাবে।

 

বাহাদুর পুর ইউনিয়নের কুচিয়ামোড়া গ্রামের আমচাষি লবা মিয়া বলেন, বাগানে গত বছরের তুলনায় আম নেই বললেই চলে। এ বছর যে মুকুলগুলো প্রথম দিকে এসেছিল সেগুলোতে শুধু আম হয়েছে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের মুকুলের সকল আম তাপমাত্রার কারণে ঝরে গেছে। গতবার থেকে এ বছর ফলন কম হবে।

 

ভেড়ামারা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাহমুদা সুলতানা বলেন, গতবছর মার্চ মাসে যে তাপমাত্রা ছিল তার থেকে এ বছর মার্চ মাসে তাপমাত্রা কম ছিল। আর বছরের এই সময়টাতে তাপমাত্রা একটু বেশি থাকে। মুকুলের সংখ্যা বেশি হওয়ায় আমের গুটির পরিমাণ বেশি তাই ঝরে পড়ে যাচ্ছে। বাগানে যে আম রয়েছে তাতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

 


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

নরসিংদী সিটি হাসপাতালে ১৮ ইঞ্চি ‘মব’ কাপড় পেটে রেখেই সেলাই, সংকটাপন্ন প্রসূতি

error: Content is protected !!

কুষ্টিয়ায় মুকুল ভরা গাছে আম নেই, দুশ্চিন্তায় চাষিরা

আপডেট টাইম : ০৪:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
ইসমাইল হোসেন বাবু, সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার :

ইসমাইল হােসেন বাবুঃ

প্রথম প্রথম যখন আম গাছে মুকুল দেখা যায়, তখন কতই না খুশি ছিল কৃষকদের মনে। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনে ফিঁকে হয়ে উঠেছে তাদের সেই হাসি। বসন্তের আগমনে কুষ্টিয়ার প্রতিটি আম বাগান এ বছর মুকুলের স্নিগ্ধ সৌরভে মোড়ানো ছিল। গেল কয়েক বছরের তুলনায় বাগানগুলোতে এ বছর মুকুল এসেছিল সবচেয়ে বেশি। উচ্চ ফলনের স্বপ্ন বুনেছিলেন কৃষকরা।

 

কিন্তু গত ১৫ দিনের ব্যবধানে কুষ্টিয়ায় প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ বাগানের মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ৭০-৮০ শতাংশ বাগানে এখন গত বছরের তুলনায় আম নেই বললেই চলে। উকুন পোকা, তীব্র খরা এবং আবহাওয়াজনিত কিছু সমস্যার কারণেই বাগানগুলোর এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে মনে করছেন কৃষকরা। বাগানের এমন পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন আম চাষিরা। কুষ্টিয়ার অধিকাংশ আম উৎপাদন হয় ভেড়ামারা, দৌলতপুর, কুমার খালী,খোকসা ও মিরপুর উপজেলায়।

 

সম্প্রতি ভেড়ামারা ও দৌলতপুর আম বাগান গুলো ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ বাগানের মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। বাগানের ৮০ শতাংশ গাছেই কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ আমের দেখা মিলছে না। গত মৌসুমের তুলনায় বাগানগুলোতে এবছর ১০-১৫ শতাংশ আম রয়েছে। এই পরিমাণ আমে উৎপাদ খরচ উঠানোই কষ্টকর হয়ে যাবে বলে মনে করছেন এ জেলার কৃষকরা।

 

দৌলতপুর উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়নের হরণিগাছি গ্রামের আম চাষি রিয়াজ উদ্দীন জানান, নিজস্ব ৮ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত কোনো বৃষ্টিপাত নেই। যার কারণে উকুন পোকার আক্রমণ অনেক বেশি। বাগানে কীটনাশক স্প্রে করেও পোকা তাড়ানো যাচ্ছে না।

 

গত বছর বাগান থেকে আম বিক্রি করে সাড়ে ৬ লাখ টাকার মতো পেয়েছিলাম। শ্রমিক, কীটনাশক, পরিবহন এবং সেচ খরচসহ গত বছর প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছিল। এ বছর তীব্র তাপদাহের কারণে অধিকাংশ মুকুলই ঝরে গেছে। গতবারের তুলনায় বাগানে এ বছর আমের পরিমাণ অনেক কম। কিন্তু খরচ গত বছরের মতোই হবে। খরচ উঠাতে পারব কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় আছি।

 

ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের গোলাপনগর গ্রামের আমচাষি আমিরুল বলেন, নিজস্ব ৯ বিঘা জমিতে আম্রপালি আমের বাগান রয়েছে। এবছরের মতো উকুন পোকা আগে কখনো দেখিনি। ৯ বিঘা বাগানে এখন পর্যন্ত কীটনাশক এবং অন্যান্য খরচ মিলায়ে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। বাগানের এই পরিস্থিতি দেখে খুব হতাশার মধ্যে আছি। আম উঠানোর আগ পর্যন্ত এখনো অনেক খরচ হবে। এই পরিমাণ আম দিয়ে খরচের টাকা উঠানোই কষ্টকর হয়ে যাবে।

 

বাহাদুর পুর ইউনিয়নের কুচিয়ামোড়া গ্রামের আমচাষি লবা মিয়া বলেন, বাগানে গত বছরের তুলনায় আম নেই বললেই চলে। এ বছর যে মুকুলগুলো প্রথম দিকে এসেছিল সেগুলোতে শুধু আম হয়েছে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের মুকুলের সকল আম তাপমাত্রার কারণে ঝরে গেছে। গতবার থেকে এ বছর ফলন কম হবে।

 

ভেড়ামারা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাহমুদা সুলতানা বলেন, গতবছর মার্চ মাসে যে তাপমাত্রা ছিল তার থেকে এ বছর মার্চ মাসে তাপমাত্রা কম ছিল। আর বছরের এই সময়টাতে তাপমাত্রা একটু বেশি থাকে। মুকুলের সংখ্যা বেশি হওয়ায় আমের গুটির পরিমাণ বেশি তাই ঝরে পড়ে যাচ্ছে। বাগানে যে আম রয়েছে তাতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

 


প্রিন্ট