মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক আবদুর রশীদ যশোরী ভালো নেই। অনেকটা নি:সঙ্গতা আর একাকীত্বেই কাটে তার সময়। বাকরুদ্ধ রশীদ যশোরী চলাচলেও অক্ষম। স্ত্রী সেলিনা বেগমই তার পরম সঙ্গী ও অবলম্বন। এক সময়কার প্রথিতযশা কথা সাহিত্যিক রশীর যশোরীর লেখা ছড়া, কবিতা, কিশোর গল্প, রম্য রচনা, উপন্যাস, ইতিহাস ও বিভিন্ন শ্রেণির ব্যকরণ প্রভৃতি ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছিল। বিশেষ করে ‘রাজা সীতারাম’ ও ‘আরেক নদের চাঁদ’ নামক দুইটি ইতিহাস গ্রন্থ পাঠক সমাদৃত হয়। এছাড়া ‘তুফান’ সিরিজ ব্যাপক আড়োলন সৃস্টি করে। তিনি আজ অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। অর্থাভাবে চিকিৎসাও নিতে পারছেন না। দু:সময়ে কেউ তার খোঁজ খবর না নেওয়ায় এখন তিনি মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
২০১২ সালের ২৭ অক্টোবর স্ট্রোকজনিত কারণে আবদুর রশীদ যশোরীর শরীরের ডান পাশ প্যারালাইসড হয়ে যায়। তখন থেকেই তিনি চলাচলে অক্ষম এবং বাক হারিয়ে ফেলেন। এরপর থেকে তিনি নিজ বাড়িতে অনেকটা নি:সঙ্গ জীবন-যাপন করছেন। তিনি দেখতে, শুনতে ও বুঝতে পারেন। শুধু চলতে ও বলতে পারেন না। লেখার হাত অচল হয়ে যাওয়ায়; লিখতে না পারার কষ্ট তাকে ব্যথিত করে। কিন্তু তার এই দু:সময়ে কেউ পাশে এসে সহযোগিতা না করায় মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি।
আজ সোমবার (১৯ জুলাই)সকালে সরেজমিনে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শারীরিক অক্ষমতার কারণে বেশিরভাগ সময় তাকে ঘরের মধ্যেই থাকতে হয়। অলস সময় কাটে তার টিভি দেখে। মাঝে মধ্যে স্ত্রীর কাঁধে ভর করে বাইরে বের হন তিনি। আবদুর রশীদ যশোরী ১৯৪৯ সালে উপজেলা সদরে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্র জীবন থেকেই লেখালেখিতে ঝুকে পড়েন তিনি। তিনি ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রেসক্লাব মহম্মদপুর-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ঝামা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘকাল।
২০০১ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক নির্বাচিত হয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে স্বর্ণ পদক গ্রহণ করেন আবদুর রশীদ যশোরী। রশীদ যশোরী প্রথম জীবনে সাংবাদিকতা, পরে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। একই সময়ে তিনি সাহিত্য চর্চাও করেন ব্যাপক গতিশীলতার সাথে। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশতাধীক। এছাড়া অপ্রকাশিত পান্ডুলিপিও রয়েছে বেশকিছু। তার লেখা ছড়া, কবিতা, কিশোর গল্প, রম্য রচনা, উপন্যাস, ইতিহাস ও বিভিন্ন শ্রেণির ব্যকরণ প্রভৃতি ব্যাপকভাবে সাড়া জাগায়। বিশেষ করে ‘রাজা সীতারাম’ ও ‘আরেক নদের চাঁদ’ নামক দুইটি ইতিহাস গ্রন্থ পাঠক সমাদৃত হয়। এছাড়া ‘তুফান’ সিরিজ ব্যাপক আড়োলন সৃস্টি করে।
পরিচিত কেউ আবদুর রশীদ যশোরীকে দেখতে গেলে তিনি খুবই খুশি হন। ঘনিষ্টজনকে কাছে পেয়ে নিজের প্রকাশিত গ্রন্থ দেখান, পড়বার চেষ্টা করেন। এতে তিনি পরম তৃপ্তি পান। তবে প্রতিথযশা এই গুণি ব্যক্তির দু:সময়ে তেমন কাউকেই কাছে পাননা। কাছে পাননা দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা-সহকর্মী ও বন্ধু-বান্ধবদেরকেও। আবদুর রশীদ যশোর এবং তার স্ত্রী সেলিনা বেগম; এই যেনো টুনা-টুনির সংসার। কিন্তু সংসার ভালো চলেনা। সরকারিভাবে বছরে এককালীন সাহিত্য ভাতা হিসেবে পাওয়া ১৯ হাজার ৫০০ টাকা শেষ হয়ে যায়, তাদের ৪ মাসের ওষুধ কিনতে। জামাই-মেয়েদের দেখভালে কোনোরকম চলছে বরেণ্য এই ব্যক্তির সংসার।
আবদুর রশীদ যশোরীর স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী বিখ্যাত একজন মানুষ। তিনি যখন সুস্থ্য ছিলেন, তখন অনেক লোকজন বাসায় আসতেন। কিন্তু তিনি অচল হওয়ার পর তেমন কেউ’ই খোঁজখবর নেননা।
আবদুর রশীদ যশোরীর স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী বিখ্যাত একজন মানুষ। তিনি যখন সুস্থ্য ছিলেন, তখন অনেক লোকজন বাসায় আসতেন। কিন্তু তিনি অচল হওয়ার পর তেমন কেউ’ই খোঁজখবর নেননা।
স্থানীয় শহীদ আবির পাঠাগারের লাইব্রেয়িান রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৯৮৪ সালে প্রথম প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার সময় তিনি সভাপতি ছিলেন। আমি তার আশু আরোগ্য কারনা করছি। প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ওলিউর রহমান বলেন, যশোরী শুধু সাংবাদিকতায় করেননি, তিনি শিক্ষকতা করেছেন বহূকাল ধরে এবং জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে স্বর্ণ পদকও গ্রহণ করেছেন।
প্রিন্ট