করোনা মহামারি মধেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাই পরিবার নিয়ে ঈদ উদযাপন করছেন। কিন্তু এর মধ্যেও বহু মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। আক্রান্ত ব্যক্তির নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা এই মানুষগুলোর ঈদ আনন্দ নেই।
কুষ্টিয়া করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের ৪নং পেয়িং ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন চুয়াডাঙ্গার ফাহিমা বেগম। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। যার কারণে তাকে অক্সিজেন নিতে হয়েছে। ফাহিমা বেগমের মেয়ে তানজিলা খাতুন বলেন, মা করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর বেশকিছু দিন তাদের হাসপাতালে কাটছে। ঈদের দিনও হাসপাতালে রয়েছেন। ঈদের আনন্দ বাদ দিয়ে মাকে দেখাশুনা করছেন।
পাশের বেডে ভর্তি ভেড়ামারা উপজেলার করিমন নেছা। তার অবস্থাও একই রকম। করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ঈদ নেই তার পরিবারেও। ঈদের দিন পরিবার থেকে দূরে কাটছে রোগী এবং স্বজনদের। করিমন নেছার মেয়ে জরিনা খাতুন বলেন, মাকে নিয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। হাসপাতালে থাকলে ঈদের আনন্দ হয় কীভাবে?
আরেক করোনা রোগী লক্ষ্মী দত্ত। তিনিও হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। তার মেয়ে সুচিত্রা সুমন বলেন, এবার ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেলো। হাসপাতালের বেশ কিছুদিন কাটছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঈদের দিন উপলক্ষে উন্নত খাবার দিয়েছে। যদিও করোনা রোগীদের জন্য প্রতিদিনই উন্নত খাবার দেওয়া হয় হাসপাতাল থেকে।
মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি চিথলিয়া ইউনিয়নের ৭০ বছর বয়সী সুফিয়া। করোনার আক্রান্তের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তাকে অক্সিজেন নিতে হয়েছে। মেয়ে তাকে সেবা করছেন। সুফিয়ার মেয়ে বলেন, ‘মায়ের মুখে অক্সিজেন চলছে। হাসপাতালেই কাটছে দিন-রাত। আমাদের তো ঈদ নেই। মা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেই আমাদের আনন্দ।
মিরপুর হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি বীজনগর গ্রামের বাবু (৪০), চিথলিয়ার রাশেদ (৪৫), একতারপুরের আকরাম হোসেন (৬০), গোবিন্দ (২৮), আমলা গ্রামের রোকেলা (৫০), আমকাঠালিয়া গ্রামের রহিমা (৫১). ফকিরাবাদ গ্রামের আইরিন (৩২), চিথলিয়ার ময়জান নেছা (৫০)। হাসপাতালের চিকিৎসাধীন এ সকল করোনা আক্রান্ত রোগীদের ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে ঈদ আনন্দ নেই তাদের পরিবারেও। স্বজনরা বলেন, আক্রান্তরা দ্রুত সুস্থ হয়ে পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের কাছে ফিরে গেলে সেটাই হবে তাদের জন্য বড় আনন্দের।
কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ বলেন, ছাত্রলীগের ৭০ জন কর্মী প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০টি লাশ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড থেকে করিডোর পেরিয়ে জরুরি বিভাগের সামনে লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্সে তুলতে তুলতে ক্লান্ত। এটা খুব বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা। ছাত্রলীগের স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা এই নিয়ে চারটি ঈদ পার করলো করোনা ওয়ার্ডে।
করোনা কেডিকেডেট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল মোমেন জানান, ঈদ উপলক্ষে রোগীদের উন্নত খাবারসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। বর্তমানে হাসপাতালে ১৮০ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী ও ৭০ জন উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন।
পিসিআর ল্যাব ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল) জেলায় ৪৭৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২০২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪২ শতাংশের বেশি। এ জেলায় এখন পর্যন্ত ৪৪৬ জন করোনা রোগী মারা গেছে।
প্রিন্ট