ঢাকা , রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo তানোরে আলুর বস্তার ভাড়া ১২ টাকা ! Logo দিনাজপুর জেলা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং রাজ ২৪৫ ফুলবাড়ী থানা উপ কমিটির পরিচিতি ও সংবর্ধনা Logo কুষ্টিয়া ছাগলের ঘাঁস কাঁটতে গিয়ে নরসুন্দরের রহস্যজনক মৃত্যু Logo ইবিতে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা Logo ফুলবাড়ীতে কাজিহাল ইউনিয়নের কয়েকটি হাট পরিদর্শন করলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার Logo কুষ্টিয়ায় শ্রমিক অধিকার, নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক মতবিনিময় Logo কুষ্টিয়ায় হত্যাসহ দেশব্যাপী চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল Logo ডিভোর্সী নারীকে বিয়ে নিয়ে দ্বন্দ্বঃ যশোরে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত Logo পাংশায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে অবৈধ অস্ত্র-গুলিসহ চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাবুল সরদার গ্রেফতার Logo শালিখায় বি.এন.পি’র মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত 
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

বাঘায় ঈদ সামনে রেখে বাড়ছে ভিক্ষুকের সংখ্যা

বাঘা(রাজশাহী) প্রতিনিধি

পাঁচ বছর আগে ভিক্ষাবৃত্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাজশাহীর বাঘা উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করে ভিক্ষুক পুর্নবাসনের কাজ শুরু করা হয়।

প্রথমতঃ ৫০জন ভিক্ষুককে নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২০ সালের ১৭ জুন ভিক্ষুক পুর্নূবাসন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৮ জন ভিক্ষুককে প্রধান মন্ত্রীর ভিক্ষুক পুর্নবাসন কার্যক্রমের আওতায় ছাগল, মুদি দোকান , ভ্যানগাড়ি ও শেলাই মেশিন প্রদান করা হয়। সেই সময়ে উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, কর্মরত উপজেলা নির্বাহি অফিসার সেগুলো তাদের মধ্যে বিতরণ করেন। কিন্তু থমকে গেছে ভিক্ষুক পুর্নূবাসন কার্যক্রম।

 

জানা যায়, ঈদুল ফিতরের ঈদ সামনে রেখে মৌসুমী ভিক্ষুকের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে রাজশাহীর বাঘায়।

 

বছরের এই সময়টাকে টার্গেট করে অনেকে ভিক্ষায় নেমেছেন। উপজেলার বিভিন্ন মার্কেট, অভিজাত এলাকা, বাস টার্মিনাল, বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাট ও মাজার এলাকায় তাদের দেখা যায়। এদের বেশিরভাগই অপেশাদার ও মৌসুমী ভিক্ষুক। অধিকাংশই উপজেলার বাইরে থেকে আসা। বহিরাগত এসব ভিক্ষুকের রাত কাটে, মাজার এলাকাসহ স্কুল কলেজের বারান্দায়।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যেখানে মানুষের ভিড়, সেখানেই ভিক্ষুকদের জটলা। বাসাবাড়ি ছাড়াও মার্কেট, মসজিদের সামনে জড়ো হচ্ছেন তারা। সরকারি সুবিধা পান, এমন কেউ কেউ ভিক্ষায় নেমেছেন, ফিতরাসহ যাকাতের টাকা-পয়সা, শাড়ি কাপড় পাওয়ার আশায়।

শুক্রবার (২৮-০৩-২৫) হযরত শাহ আব্দুল হামিদ দানিশ মন্দ(রহঃ) এর মাজার এলাকায় কথা হয় বিধবা ৩নারি ভিক্ষুকের সাথে। তাদের দু’জনই নাটোরের লালপুর উপজেলার মোল্লাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। রকেনা বেওয়া নামে একজন জানান, প্রতিবন্ধী ১ মেয়েসহ ২ছেলে রেখে তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। জায়গা জমি নাই। ভিক্ষা বৃত্তির টাকায় সংসার চালান। ১০ বছর আগে আম নামানোর কাজে গিয়ে বিদুৎতের তারের উপর পড়ে মারা গেছে রাইমা বেওয়ার স্বামী কামাল হোসেন। অন্যর জায়গায় ঘর তুলে থাকেন । ৭৫ বছর বয়সের মাজেদা বেওয়া ডিভোর্স দেওয়া ১ মেয়েকে নিয়ে এক সাথে থাকেন। মা-মেয়ে সরকারি ভাতা পেলেও ভিক্ষা ছাড়েননি তারা।

বাঘা উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের রাজিয়া জানান,তার স্বামী নেই। পৃথক সংসারে ছেলে বউ নিয়ে থাকে। ভিক্ষার টাকা তার সংসার চলে। সরকারি কোন সুবিধা পান না বলে জানিয়েছেন।

উপজেলার চক সিংগা গ্রামের জবেদা খাতুন, নিশ্চিন্তপুর গ্রামের ছায়রা খাতুন, চক আমোদপুর গ্রাামের সুন্দরী বেওয়া, ব্রাম্মনডাঙ্গা গ্রামের শেফালি খাতুন । এর মধ্যে ছায়রা স্বামী বয়স্ক ভাতা পান। বিধবা ভাতা পান সুন্দরী বেওয়া।

ব্যতিক্রমী এক ভিক্ষুক ৪০ বছর বয়সের শেফালি খাতুন ভিক্ষার টাকা জমিয়ে মসজিদে ৪০ হাজার টাকা দান করেছেন । স্বামীর সংসার থেকে বিছিন্ন হয়ে ভিক্ষায় নেমেছেন। তার সাথে কথা বলে জানা গেল, নিজের খরচ করে যা বাঁচে, সেই টাকা জমিয়ে মসজিদে দান করেছেন। এবারও তার ইচ্ছা ভিক্ষার টাকা জমিয়ে, মাদরাসা ও এতিমখানায় দান করবেন । ১ কাঠা জমির উপর টিন সেটের আধা পাঁকা ঘর রয়েছে তার। সরকারি সুবিধ পান প্রতিবন্ধী ভাতা।

তাদের সাথে কথা বলে জানা গেল, একেকজন ভিক্ষুকের দৈনিক আয় ৩০০ টাকার কম বা বেশি। রমজান মাসে মানুষ দান খয়রাত বেশি করে বলে তাদের আয়ও বেশি হয়।

স্থানীয় আব্দুল হালিম জানান, ঈদকে সামনে রেখে পেশাদার-অপেশাদার বহু মানুষ ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিয়েছে। যার কারণে অন্য সময়ের তুলনায় ভিক্ষুকের সংখ্যা দ্বিগুন বেড়েছে ।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বেঁচে থাকার তাগিদে দারিদ্র, পারিবারিক অবহেলা, মনস্থাত্বিক কারণেই মানুষ ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করে থাকে। তবে ভিক্ষার নামে অত্যাচার অনেকাংশে বিরক্তিকর।’

 

উপজেলা নির্বাহি অফিসার শাম্মী আক্তার বলেন, ভিক্ষুক পুর্নবাসনের গতি ফেরানোর বিষয়টি সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন। তবে নিজেদেরকে না বদলালে কোনকিছুই কাজে আসবে না।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

তানোরে আলুর বস্তার ভাড়া ১২ টাকা !

error: Content is protected !!

বাঘায় ঈদ সামনে রেখে বাড়ছে ভিক্ষুকের সংখ্যা

আপডেট টাইম : ০৭:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫
আব্দুল হামিদ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি :

বাঘা(রাজশাহী) প্রতিনিধি

পাঁচ বছর আগে ভিক্ষাবৃত্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাজশাহীর বাঘা উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করে ভিক্ষুক পুর্নবাসনের কাজ শুরু করা হয়।

প্রথমতঃ ৫০জন ভিক্ষুককে নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২০ সালের ১৭ জুন ভিক্ষুক পুর্নূবাসন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৮ জন ভিক্ষুককে প্রধান মন্ত্রীর ভিক্ষুক পুর্নবাসন কার্যক্রমের আওতায় ছাগল, মুদি দোকান , ভ্যানগাড়ি ও শেলাই মেশিন প্রদান করা হয়। সেই সময়ে উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, কর্মরত উপজেলা নির্বাহি অফিসার সেগুলো তাদের মধ্যে বিতরণ করেন। কিন্তু থমকে গেছে ভিক্ষুক পুর্নূবাসন কার্যক্রম।

 

জানা যায়, ঈদুল ফিতরের ঈদ সামনে রেখে মৌসুমী ভিক্ষুকের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে রাজশাহীর বাঘায়।

 

বছরের এই সময়টাকে টার্গেট করে অনেকে ভিক্ষায় নেমেছেন। উপজেলার বিভিন্ন মার্কেট, অভিজাত এলাকা, বাস টার্মিনাল, বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাট ও মাজার এলাকায় তাদের দেখা যায়। এদের বেশিরভাগই অপেশাদার ও মৌসুমী ভিক্ষুক। অধিকাংশই উপজেলার বাইরে থেকে আসা। বহিরাগত এসব ভিক্ষুকের রাত কাটে, মাজার এলাকাসহ স্কুল কলেজের বারান্দায়।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যেখানে মানুষের ভিড়, সেখানেই ভিক্ষুকদের জটলা। বাসাবাড়ি ছাড়াও মার্কেট, মসজিদের সামনে জড়ো হচ্ছেন তারা। সরকারি সুবিধা পান, এমন কেউ কেউ ভিক্ষায় নেমেছেন, ফিতরাসহ যাকাতের টাকা-পয়সা, শাড়ি কাপড় পাওয়ার আশায়।

শুক্রবার (২৮-০৩-২৫) হযরত শাহ আব্দুল হামিদ দানিশ মন্দ(রহঃ) এর মাজার এলাকায় কথা হয় বিধবা ৩নারি ভিক্ষুকের সাথে। তাদের দু’জনই নাটোরের লালপুর উপজেলার মোল্লাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। রকেনা বেওয়া নামে একজন জানান, প্রতিবন্ধী ১ মেয়েসহ ২ছেলে রেখে তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। জায়গা জমি নাই। ভিক্ষা বৃত্তির টাকায় সংসার চালান। ১০ বছর আগে আম নামানোর কাজে গিয়ে বিদুৎতের তারের উপর পড়ে মারা গেছে রাইমা বেওয়ার স্বামী কামাল হোসেন। অন্যর জায়গায় ঘর তুলে থাকেন । ৭৫ বছর বয়সের মাজেদা বেওয়া ডিভোর্স দেওয়া ১ মেয়েকে নিয়ে এক সাথে থাকেন। মা-মেয়ে সরকারি ভাতা পেলেও ভিক্ষা ছাড়েননি তারা।

বাঘা উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের রাজিয়া জানান,তার স্বামী নেই। পৃথক সংসারে ছেলে বউ নিয়ে থাকে। ভিক্ষার টাকা তার সংসার চলে। সরকারি কোন সুবিধা পান না বলে জানিয়েছেন।

উপজেলার চক সিংগা গ্রামের জবেদা খাতুন, নিশ্চিন্তপুর গ্রামের ছায়রা খাতুন, চক আমোদপুর গ্রাামের সুন্দরী বেওয়া, ব্রাম্মনডাঙ্গা গ্রামের শেফালি খাতুন । এর মধ্যে ছায়রা স্বামী বয়স্ক ভাতা পান। বিধবা ভাতা পান সুন্দরী বেওয়া।

ব্যতিক্রমী এক ভিক্ষুক ৪০ বছর বয়সের শেফালি খাতুন ভিক্ষার টাকা জমিয়ে মসজিদে ৪০ হাজার টাকা দান করেছেন । স্বামীর সংসার থেকে বিছিন্ন হয়ে ভিক্ষায় নেমেছেন। তার সাথে কথা বলে জানা গেল, নিজের খরচ করে যা বাঁচে, সেই টাকা জমিয়ে মসজিদে দান করেছেন। এবারও তার ইচ্ছা ভিক্ষার টাকা জমিয়ে, মাদরাসা ও এতিমখানায় দান করবেন । ১ কাঠা জমির উপর টিন সেটের আধা পাঁকা ঘর রয়েছে তার। সরকারি সুবিধ পান প্রতিবন্ধী ভাতা।

তাদের সাথে কথা বলে জানা গেল, একেকজন ভিক্ষুকের দৈনিক আয় ৩০০ টাকার কম বা বেশি। রমজান মাসে মানুষ দান খয়রাত বেশি করে বলে তাদের আয়ও বেশি হয়।

স্থানীয় আব্দুল হালিম জানান, ঈদকে সামনে রেখে পেশাদার-অপেশাদার বহু মানুষ ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিয়েছে। যার কারণে অন্য সময়ের তুলনায় ভিক্ষুকের সংখ্যা দ্বিগুন বেড়েছে ।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বেঁচে থাকার তাগিদে দারিদ্র, পারিবারিক অবহেলা, মনস্থাত্বিক কারণেই মানুষ ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করে থাকে। তবে ভিক্ষার নামে অত্যাচার অনেকাংশে বিরক্তিকর।’

 

উপজেলা নির্বাহি অফিসার শাম্মী আক্তার বলেন, ভিক্ষুক পুর্নবাসনের গতি ফেরানোর বিষয়টি সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন। তবে নিজেদেরকে না বদলালে কোনকিছুই কাজে আসবে না।


প্রিন্ট