ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই ধ্বসে যাচ্ছে উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন সড়ক

টগরবন্দ ইউনিয়নের পানাইল নিচুপাড়া ইমরুলের বাড়ি থেকে কাশেমের বাড়ির অভিমুখে মাটির রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে বিলের মধ্যে নিচু জায়গায়। পানি বাড়ায় রাস্তার একটি অংশ ইতিমধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য মনজুর হোসেন বুলবুল কর্তৃক বরাদ্দকৃত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে একটি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের সড়কটি নির্মাণের এক মাসের মধ্যেই একটি অংশ বিলীন হয়ে গেছে। আরেকটি ইটের রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণের ১০দিনের মধ্যেই রাস্তাটির বিভিন্ন অংশ ধ্বসে গিয়েছে। রাস্তা নির্মাণের পওের গ্রামবাসী মাজা সমাসন পানি ডিঙ্গিয়ে পারাপার হচ্ছে।

জানা যায়, গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা/কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে এসব উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এর মধ্যে টগরবন্দ ইউনিয়নের পানাইল নিচুপাড়া ইমরুলের বাড়ি থেকে কাশেমের বাড়ির অভিমুখে মাটির রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের ৩য় কিস্তির বরাদ্দের পরিমাণ দশ লাখ টাকা। ওই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি (পিআইসি) ইফতেখার আলম।

পানাইল ছরোয়ার জুমাদ্দার এর বাড়ী থেকে সোনাউল্লাহর বাড়ীর পাশে পাকা রাস্তা পর্যন্ত ইটের সলিংকরণ ও প্যালাসাইডিং নির্মাণ কাজে বরাদ্দ এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। পানাইল কবরস্থানে মাটি ভরাটের জন্য বরাদ্দ পাঁচ লাখ টাকা। ওই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি (পিআইসি) সুলতান মাহামুদ।

এছাড়া চরকাতলাসুর ৭ নং ওয়ার্ড কালভার্ট হয়ে শাহাদত খান এর বাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় দুই লাখ টাকা। এছাড়া পানাইল পশ্চিম পাড়ার আলী মোল্যার বাড়ী থেকে মুরাদ জমাদ্দার এর বাড়ী পর্যন্ত ইটের রাস্তা নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। এছাড়াও চরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ ভরাট প্রকল্পে ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ সহ বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

সরেজমিনে টগরবন্দ ইউনিয়নের পানাইল নিচুপাড়া ইমরুলের বাড়ি থেকে কাশেমের বাড়ির অভিমুখে মাটির রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে বিলের মধ্যে নিচু জায়গায়। ইতিমধ্যেই পানি বাড়ায় একটি অংশ বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া রাস্তাটিতে কোনরকমে মাটি ফেলা হয়েছে। সমানও করা হয়নি রাস্তাটি।

স্থানীয় বাসিন্দা ওবায়দুর রহমান বলেন, রাস্তাটি নিচু জমিতে করায় বর্ষামৌসুমে সম্পূর্ণ তলিয়ে যাবে। পানি বাড়ায় ইতিমধ্যেই রাস্তাটির মাঝের অংশ বিলীন হয়ে গেছে। জনসাধারণের যাতায়াতের সুবিধার জন্য রাস্তাটি নির্মাণ করা হলেও এখন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পানি ভেঙ্গে রাস্তা পারাপার হতে হয়।

এব্যাপারে বক্তব্য জানতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি (পিআইসি) ইফতেখার আলমের সাথে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
১০ লাখ টাকায় আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে চরবাকাইলে খাঁন জাহান মুন্সীর বাড়ি থেকে মাহামুদ খানের বাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তায় মাটির কাজ ও ইটের সলিং নির্মাণ কাজের। ওই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি (পিআইসি) খন্দকার জাহিদুল ইসলাম ওরফে জয় বকুল। টগরবন্দ ইউনিয়নের পানাইল নজির আহম্মেদের বাড়ী থেকে চরডাঙ্গা আলমগীর হোসেনের বাড়ী পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণের আরেকটি কাজে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দশ লাখ টাকা।

সরেজমিনে টগরবন্দ ইউনিয়নের পানাইল নজির আহম্মেদের বাড়ী থেকে চরডাঙ্গা আলমগীর হোসেনের বাড়ী পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটির মাঝখানে একটি অংশ কেটে রাখা হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, ওই খানে একটি কালভার্ট বসানো হবে এজন্য কেটে রাখা হয়েছে। ওই সড়ক দিয়েও চলাচল করতে মাজা সমান পানি পার হয়ে পারাপার হতে হয় জনসাধারণকে।

স্থানীয় বাসিন্দা রমজান শেখ বলেন, রাস্তা নির্মাণের সময় আমাদের বলা হয়েছিল তোমাদের জমি থেকে মাটি দিলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কিন্তু রাস্তা নির্মাণের পর নামমাত্র ১ হাজার, ২হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যাদের জমি থেকে মাটি নেওয়া হয়েছে সেই জায়গায় এখন হাটুপানি হয়ে গেছে। কোনো ফসল উতপাদন করতে পারবো না আমরা। অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি আমরা। তিনি আরো বলেন, এই রাস্তাটি নির্মাণের সময় সংসদ সদস্যর চাচাতো ভাই দেখাশোনা করেছেন। একারনে ভয়ে কেউ কিছু বলেনি।

পানাইল পশ্চিম পাড়ার আলী মোল্যার বাড়ী থেকে মুরাদ জমাদ্দার এর বাড়ী পর্যন্ত ইটের রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটির বিভিন্ন অংশ ধ্বসে গেছে। রাস্তা নির্মাণের মাত্র দশ দিনের মধ্যেই ধ্বসে গেছে একাধিক স্থানে। ওই রাস্তা দিয়ে স্থানীয়দের এখন পায়ে হেটে চলাচল করতেও সমস্যা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা লিমন শেখ বলেন, রাস্তাটি নির্মাণের দশ দিনের মধ্যেই বিভিন্ন অংশ ধ্বসে গেছে। চলাচলে খুব কষ্ট হচ্ছে। ভ্যানে কোনো মালামাল বাড়িতে আনতে পারছিনা। এর চেয়ে মাটির রাস্তাই আমাদের ভালো ছিল।

পানাইল পশ্চিম পাড়ার আলী মোল্যার বাড়ী থেকে মুরাদ জমাদ্দার এর বাড়ী পর্যন্ত ইটের রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে রাস্তাটির বিভিন্ন অংশ এখনি ধ্বসে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো: মনজুর হোসেন বুলবুল কর্তৃক বরাদ্দকৃত প্রকল্পগুলোর বেশিভাগ প্রকল্পের পিআইসি রয়েছেন খন্দকার জাহিদুল ইসলাম ওরফে জয় বকুল। স্থানীয়দের অভিযোগ সংসদ সদস্যের আস্থাভাজন হওয়ায় বেশিরভাগ নির্মাণ কাজই করে থাকেন খন্দকার জাহিদুল ইসলাম ওরফে জয় বকুল। আর স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে চায়না।

এব্যাপারে খন্দকার জাহিদুল ইসলাম ওরফে জয় বকুল বলেন, পানাইল এলাকায় যে ইটের সলিং এর রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে ওই এলাকা নিচু হওয়ায় আশে পাশের বাড়ি থেকে বৃষ্টির ঢলের পানি এসে রাস্তার উপরে বেকু মেশিন দিয়ে কেটে ফেলানো নতুন বালি ধ্বসে যায়। তবে ওই ক্ষতিগ্রস্ত অংশটুকু মেরামত করা হচ্ছে। অন্যান্য প্রকল্পের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ম মেনেই প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে, তবে কিছু প্রকল্প নিচু এলাকায় হওয়ায় সমস্যা হয়েছে, সেগুলো সমাধান করা হচ্ছে। প্রকল্পের কাজে কোনো অনিয়ম করা হয়নি।

পানাইল কবরস্থানে মাটি ভরাটের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় পাঁচ লাখ টাকা। ওই প্রকল্পটিতেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি (পিআইসি) সুলতান মাহামুদ। তিনি বলেন, এখনও প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। বৃষ্টির কারনে মাটি ভরাটের কাজ সাময়িক বন্ধ রয়েছে। অনিয়মের প্রশ্নই আসেনা। সঠিকভাবেই কাজ সম্পন্ন করা হবে।

টগরবন্দ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিক ফকির বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে সংসদ সদস্যর কোনো যোগাযোগ নেই। সংসদ সদস্য তার নিজস্ব কিছু লোকজন দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজগুলো করিয়ে থাকেন। তিনি আরো বলেন, একারনে উন্নয়নমূলক কোনো কাজের ব্যাপারে আমরা খোঁজ খবর রাখিনা। অনিয়ম হলেও আমরা দেখতে যাইনা। প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ নেই।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম আকরাম হোসেন বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে এমপি মহোদয়ের কোন যোগাযোগ নেই। তিনি স্থানীয় বিএনপি, জামায়াত এর লোকজনদের নিয়ে চলাফেরা করে থাকেন। আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর সাথে তাঁর কোন কথাবার্তাও হয়না। তিনি বলেন, এলাকায় তার কিছু নিজস্ব লোকজন রয়েছে তাদের নামেই প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এমনকি একেকজনের নামের একাধিক প্রকল্পও দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে লোকমুখে শুনেছি। যেহেতু তিনি আমাদের সাথে সম্পর্ক রাখেননা, সেকারনে ওই কাজগুলোর ব্যাপারে আমরা কোনো খোঁজ খবর রাখিনা।

প্রকল্পের নির্মাণকাজের বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান বলেন, এমপি মহোদয় একজন সজ্জন ব্যক্তি। এলাকায় অনেক উন্নয়ন কাজ করছেন তিনি। বিভিন্ন প্রকল্পের অনিয়মের ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছে। আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি, এলাকায় গিয়ে সকল প্রকল্প পরিদর্শন করবো। যারা এই প্রকল্পগুলোর কাজ করছেন তারা যদি অনিয়ম করে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অঃ দাঃ) প্রণব পান্ডে বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ লোকমুখে শুনেছি। প্রকল্পগুলোর বিল এখনও দেওয়া হয়নি। সরেজমিনে গিয়ে কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করে বিল প্রদান করা হবে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহী বলেন, এই প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ একটু দেরিতে আসায় বর্ষা মৌসুমেই কাজ করতে হচ্ছে। একারনে কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা হয়েছে বলে শুনেছি। কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি, চলমান রয়েছে। কাজ শেষ হলে সরেজমিনে পরিদর্শন শেষেই বিল প্রদান করা হবে। অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। নিয়ম অনুযায়ী যেভাবে প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করার কথা সেভাবেই পিআইসিদের কাছ থেকে কাজ বুঝে নেওয়া হবে। তারপরেই বিল প্রদান করা হবে।

এ বিষয়ে ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো: মনজুর হোসেন বুলবুল এর মোবাইলে (০১৭৬৬-৬৯৬০৯৯, ০১৭১৫-২৪০০৭৭) একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। তাঁর এপিএস মমিন ইমন বলেন, কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। কিছু প্রকল্পের কাজ এখনও চলমান রয়েছে। কিছু জায়গায় বর্ষার পানির কারণে সমস্যা হয়েছে। সেগুলো দ্রæত সমাধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

সদরপুরে ছাদ থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু

error: Content is protected !!

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই ধ্বসে যাচ্ছে উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন সড়ক

আপডেট টাইম : ০৪:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ জুলাই ২০২১
এ.এস.এম. মুরসিদঃ :

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য মনজুর হোসেন বুলবুল কর্তৃক বরাদ্দকৃত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে একটি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের সড়কটি নির্মাণের এক মাসের মধ্যেই একটি অংশ বিলীন হয়ে গেছে। আরেকটি ইটের রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণের ১০দিনের মধ্যেই রাস্তাটির বিভিন্ন অংশ ধ্বসে গিয়েছে। রাস্তা নির্মাণের পওের গ্রামবাসী মাজা সমাসন পানি ডিঙ্গিয়ে পারাপার হচ্ছে।

জানা যায়, গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা/কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে এসব উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এর মধ্যে টগরবন্দ ইউনিয়নের পানাইল নিচুপাড়া ইমরুলের বাড়ি থেকে কাশেমের বাড়ির অভিমুখে মাটির রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের ৩য় কিস্তির বরাদ্দের পরিমাণ দশ লাখ টাকা। ওই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি (পিআইসি) ইফতেখার আলম।

পানাইল ছরোয়ার জুমাদ্দার এর বাড়ী থেকে সোনাউল্লাহর বাড়ীর পাশে পাকা রাস্তা পর্যন্ত ইটের সলিংকরণ ও প্যালাসাইডিং নির্মাণ কাজে বরাদ্দ এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। পানাইল কবরস্থানে মাটি ভরাটের জন্য বরাদ্দ পাঁচ লাখ টাকা। ওই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি (পিআইসি) সুলতান মাহামুদ।

এছাড়া চরকাতলাসুর ৭ নং ওয়ার্ড কালভার্ট হয়ে শাহাদত খান এর বাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় দুই লাখ টাকা। এছাড়া পানাইল পশ্চিম পাড়ার আলী মোল্যার বাড়ী থেকে মুরাদ জমাদ্দার এর বাড়ী পর্যন্ত ইটের রাস্তা নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। এছাড়াও চরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ ভরাট প্রকল্পে ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ সহ বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

সরেজমিনে টগরবন্দ ইউনিয়নের পানাইল নিচুপাড়া ইমরুলের বাড়ি থেকে কাশেমের বাড়ির অভিমুখে মাটির রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে বিলের মধ্যে নিচু জায়গায়। ইতিমধ্যেই পানি বাড়ায় একটি অংশ বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া রাস্তাটিতে কোনরকমে মাটি ফেলা হয়েছে। সমানও করা হয়নি রাস্তাটি।

স্থানীয় বাসিন্দা ওবায়দুর রহমান বলেন, রাস্তাটি নিচু জমিতে করায় বর্ষামৌসুমে সম্পূর্ণ তলিয়ে যাবে। পানি বাড়ায় ইতিমধ্যেই রাস্তাটির মাঝের অংশ বিলীন হয়ে গেছে। জনসাধারণের যাতায়াতের সুবিধার জন্য রাস্তাটি নির্মাণ করা হলেও এখন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পানি ভেঙ্গে রাস্তা পারাপার হতে হয়।

এব্যাপারে বক্তব্য জানতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি (পিআইসি) ইফতেখার আলমের সাথে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
১০ লাখ টাকায় আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে চরবাকাইলে খাঁন জাহান মুন্সীর বাড়ি থেকে মাহামুদ খানের বাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তায় মাটির কাজ ও ইটের সলিং নির্মাণ কাজের। ওই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি (পিআইসি) খন্দকার জাহিদুল ইসলাম ওরফে জয় বকুল। টগরবন্দ ইউনিয়নের পানাইল নজির আহম্মেদের বাড়ী থেকে চরডাঙ্গা আলমগীর হোসেনের বাড়ী পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণের আরেকটি কাজে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দশ লাখ টাকা।

সরেজমিনে টগরবন্দ ইউনিয়নের পানাইল নজির আহম্মেদের বাড়ী থেকে চরডাঙ্গা আলমগীর হোসেনের বাড়ী পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটির মাঝখানে একটি অংশ কেটে রাখা হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, ওই খানে একটি কালভার্ট বসানো হবে এজন্য কেটে রাখা হয়েছে। ওই সড়ক দিয়েও চলাচল করতে মাজা সমান পানি পার হয়ে পারাপার হতে হয় জনসাধারণকে।

স্থানীয় বাসিন্দা রমজান শেখ বলেন, রাস্তা নির্মাণের সময় আমাদের বলা হয়েছিল তোমাদের জমি থেকে মাটি দিলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কিন্তু রাস্তা নির্মাণের পর নামমাত্র ১ হাজার, ২হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যাদের জমি থেকে মাটি নেওয়া হয়েছে সেই জায়গায় এখন হাটুপানি হয়ে গেছে। কোনো ফসল উতপাদন করতে পারবো না আমরা। অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি আমরা। তিনি আরো বলেন, এই রাস্তাটি নির্মাণের সময় সংসদ সদস্যর চাচাতো ভাই দেখাশোনা করেছেন। একারনে ভয়ে কেউ কিছু বলেনি।

পানাইল পশ্চিম পাড়ার আলী মোল্যার বাড়ী থেকে মুরাদ জমাদ্দার এর বাড়ী পর্যন্ত ইটের রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটির বিভিন্ন অংশ ধ্বসে গেছে। রাস্তা নির্মাণের মাত্র দশ দিনের মধ্যেই ধ্বসে গেছে একাধিক স্থানে। ওই রাস্তা দিয়ে স্থানীয়দের এখন পায়ে হেটে চলাচল করতেও সমস্যা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা লিমন শেখ বলেন, রাস্তাটি নির্মাণের দশ দিনের মধ্যেই বিভিন্ন অংশ ধ্বসে গেছে। চলাচলে খুব কষ্ট হচ্ছে। ভ্যানে কোনো মালামাল বাড়িতে আনতে পারছিনা। এর চেয়ে মাটির রাস্তাই আমাদের ভালো ছিল।

পানাইল পশ্চিম পাড়ার আলী মোল্যার বাড়ী থেকে মুরাদ জমাদ্দার এর বাড়ী পর্যন্ত ইটের রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে রাস্তাটির বিভিন্ন অংশ এখনি ধ্বসে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো: মনজুর হোসেন বুলবুল কর্তৃক বরাদ্দকৃত প্রকল্পগুলোর বেশিভাগ প্রকল্পের পিআইসি রয়েছেন খন্দকার জাহিদুল ইসলাম ওরফে জয় বকুল। স্থানীয়দের অভিযোগ সংসদ সদস্যের আস্থাভাজন হওয়ায় বেশিরভাগ নির্মাণ কাজই করে থাকেন খন্দকার জাহিদুল ইসলাম ওরফে জয় বকুল। আর স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে চায়না।

এব্যাপারে খন্দকার জাহিদুল ইসলাম ওরফে জয় বকুল বলেন, পানাইল এলাকায় যে ইটের সলিং এর রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে ওই এলাকা নিচু হওয়ায় আশে পাশের বাড়ি থেকে বৃষ্টির ঢলের পানি এসে রাস্তার উপরে বেকু মেশিন দিয়ে কেটে ফেলানো নতুন বালি ধ্বসে যায়। তবে ওই ক্ষতিগ্রস্ত অংশটুকু মেরামত করা হচ্ছে। অন্যান্য প্রকল্পের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ম মেনেই প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে, তবে কিছু প্রকল্প নিচু এলাকায় হওয়ায় সমস্যা হয়েছে, সেগুলো সমাধান করা হচ্ছে। প্রকল্পের কাজে কোনো অনিয়ম করা হয়নি।

পানাইল কবরস্থানে মাটি ভরাটের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় পাঁচ লাখ টাকা। ওই প্রকল্পটিতেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি (পিআইসি) সুলতান মাহামুদ। তিনি বলেন, এখনও প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। বৃষ্টির কারনে মাটি ভরাটের কাজ সাময়িক বন্ধ রয়েছে। অনিয়মের প্রশ্নই আসেনা। সঠিকভাবেই কাজ সম্পন্ন করা হবে।

টগরবন্দ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিক ফকির বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে সংসদ সদস্যর কোনো যোগাযোগ নেই। সংসদ সদস্য তার নিজস্ব কিছু লোকজন দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজগুলো করিয়ে থাকেন। তিনি আরো বলেন, একারনে উন্নয়নমূলক কোনো কাজের ব্যাপারে আমরা খোঁজ খবর রাখিনা। অনিয়ম হলেও আমরা দেখতে যাইনা। প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ নেই।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম আকরাম হোসেন বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে এমপি মহোদয়ের কোন যোগাযোগ নেই। তিনি স্থানীয় বিএনপি, জামায়াত এর লোকজনদের নিয়ে চলাফেরা করে থাকেন। আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর সাথে তাঁর কোন কথাবার্তাও হয়না। তিনি বলেন, এলাকায় তার কিছু নিজস্ব লোকজন রয়েছে তাদের নামেই প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এমনকি একেকজনের নামের একাধিক প্রকল্পও দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে লোকমুখে শুনেছি। যেহেতু তিনি আমাদের সাথে সম্পর্ক রাখেননা, সেকারনে ওই কাজগুলোর ব্যাপারে আমরা কোনো খোঁজ খবর রাখিনা।

প্রকল্পের নির্মাণকাজের বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান বলেন, এমপি মহোদয় একজন সজ্জন ব্যক্তি। এলাকায় অনেক উন্নয়ন কাজ করছেন তিনি। বিভিন্ন প্রকল্পের অনিয়মের ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছে। আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি, এলাকায় গিয়ে সকল প্রকল্প পরিদর্শন করবো। যারা এই প্রকল্পগুলোর কাজ করছেন তারা যদি অনিয়ম করে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অঃ দাঃ) প্রণব পান্ডে বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ লোকমুখে শুনেছি। প্রকল্পগুলোর বিল এখনও দেওয়া হয়নি। সরেজমিনে গিয়ে কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করে বিল প্রদান করা হবে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহী বলেন, এই প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ একটু দেরিতে আসায় বর্ষা মৌসুমেই কাজ করতে হচ্ছে। একারনে কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা হয়েছে বলে শুনেছি। কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি, চলমান রয়েছে। কাজ শেষ হলে সরেজমিনে পরিদর্শন শেষেই বিল প্রদান করা হবে। অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। নিয়ম অনুযায়ী যেভাবে প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করার কথা সেভাবেই পিআইসিদের কাছ থেকে কাজ বুঝে নেওয়া হবে। তারপরেই বিল প্রদান করা হবে।

এ বিষয়ে ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো: মনজুর হোসেন বুলবুল এর মোবাইলে (০১৭৬৬-৬৯৬০৯৯, ০১৭১৫-২৪০০৭৭) একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। তাঁর এপিএস মমিন ইমন বলেন, কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। কিছু প্রকল্পের কাজ এখনও চলমান রয়েছে। কিছু জায়গায় বর্ষার পানির কারণে সমস্যা হয়েছে। সেগুলো দ্রæত সমাধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


প্রিন্ট