রাজবাড়ী জেলার পাংশা পৌরসভার কাঁচাবাজারের অর্ধশতাধিক দোকান গত শুক্রবার ৪ ডিসেম্বর রাতে আকস্মিকভাবে উচ্ছেদ প্রচেষ্টা নিয়ে তুঘলকি কান্ড ঘটে। বিষয়টি নিয়ে পাংশা পৌরসভার মেয়র আব্দুল আল মাসুদের সাথে পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদের উচ্চবাচ্য- বাক-বিতন্ডার সৃষ্টি হয় ।
খবর পেয়ে রাজবাড়ী-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম কাঁচাবাজারে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। রাতেই স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
জানা যায়, ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কাঁচাবাজার যা পাংশা পৌরসভার কাঁচাবাজারক্ষ্যাত রাজবাড়ী জেলা পরিষদের এবং পাংশা উপজেলা পরিষদের জায়গা রয়েছে। কাঁচাবাজারের একটি জমি ক্রয়সূত্রে মালিক পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ।
বছরখানেক হলো- ক্রয়সূত্রে মালিক হলেও কাঁচাবাজার হওয়ায় ওই জমির মিউটিশন হচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে জমি অধিগ্রহণ করে কাঁচাবাজার সম্প্রসারণ করে সরকারী রাজস্ব আদায়ের মতামত ওঠে।
এদিকে, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে অনুসারী লোকজন নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ কাঁচাবাজারের দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশী সময় প্রতিষ্ঠিত কাঁচাবাজারের দোকান নিয়মনীতি বহির্ভূতভাবে উচ্ছেদ করার প্রচেষ্টা চালান।
এ সময় দোকানদারদের মাঝে আতংকের সৃষ্টি হয় এবং তারা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। দোকানদাররা বাজারের শৃঙ্খলা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে রাজবাড়ী-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুল হাকিমের স্মরণাপন্ন হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুল হাকিম এমপি স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।
রাতেই খবর পেয়ে পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাস, পাংশা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, পাংশা পৌরসভার মেয়র আব্দুল আল মাসুদ ও পাংশার এসিল্যান্ড নুজহাত তাসনীম আওন ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ফরিদ হাসান ওদুদ এবং কাঁচাবাজারের দোকানদারদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।
এরই মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ ও পৌরসভার মেয়র আব্দুল আল মাসুদ পরস্পরের মধ্যে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। মেয়র আব্দুল আল মাসুদ রাতের বেলায় আকস্মিকভাবে কাঁচাবাজার উচ্ছেদ প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাস ও পাংশা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কাঁচাবাজারে ব্যবসা পরিচালনা এবং জমি মেপে সীমানা নির্ধারণ করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেন। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সার্বিক দিক-নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত প্রদানের ফলে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
শনিবার কাঁচাবাজারের দোকানদাররা পূর্বাবস্থায় ব্যবসা পরিচালনা করে। তবে তাদের মধ্যে দ্বিধাদ্ব›দ্ব কাজ করছে বলে জানান কয়েকজন দোকানী। শনিবার সকালে পাংশা পৌরসভার কাঁচাবাজারের সভাপতি লাল্টু বিশ্বাস, দোকানদার সিদ্দিকুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন, আকমল ফকীর ও সুবোল চন্দ্র দাস সহ কয়েকজন দোকানদারের সাথে কথা হয় এ প্রতিনিধির।
আলাপচারিতায় তারা জানায়, আকস্মিকভাবে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ কাঁচাবাজারে বাদশা কমিশনারের দোকানে কাঁচাবাজারের দোকানীদের ডেকে নিয়ে রাতের মধ্যে কাঁচাবাজার সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দেন।
এ সময় অপ্রস্তুত প্রায় অর্ধশত দোকানী দিশাহারা হয়ে পড়েন এবং আতংক ছড়িয়ে পড়ে। কাঁচাবাজারের দোকানীরা জানায়, ১৯৯৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সাংস্কৃতিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম পাংশা পৌরসভার কাঁচাবাজারের ভিত্তিপ্রস্তর নামফলক উদ্বোধন করেন।
তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ সরদার ওইস্থানে পাংশা পৌরসভার কাঁচাবাজার বসায়। সে সময় থেকে ওই জায়গায় দোকানীরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দোকানের উপর টিনের ছাউনী দিয়ে ব্যবসা করছে। বছরখানেক হলো জমির ক্রয়কৃত মালিক হিসেবে মন্ডল প্লাজার নামে ফরিদ হাসান ওদুদ মাসিক তিনশত টাকা করে রশিদের মাধ্যমে ভাড়া আদায় করেন।
প্রিন্ট