ইসমাইল হোসেন বাবুঃ
উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকারের নির্দেশনা আছে। কিন্তু ভেড়ামারা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্যারাসিটামল, এ্যান্টিবায়িটক ট্যাবলেট ,গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ও হিসটাসিন ট্যাবলেট নেই। ডায়রিয়া রোগীদের জন্য কলেরা স্যালাইন নেই। নেই এক্সরে করা ফিল্ম। আলট্রাসনোগ্রাম করা হয় না এখানে। রয়েছে শুধু আয়রন ট্যাবলেট আর ক্রিমির ঔষধ। অসহায় দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা থেকে প্রায় ২ মাস যাবত ঔষধ পাওয়া থেকে চরম ভাবে বঞ্চিত হচ্ছে ভোক্তাভগি রুগি। সরেজমিনে আজ ১৭ মার্চ সােমবার সকাল ১১টার সময় পরিদর্শনে গিয়ে এই তথ্য জানা যায়।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শুধু নেই আর নেই। মাত্র ৪জন চিকিৎসক রয়েছে। পর্যাপ্ত জনবলের অভাব। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ছয়টি সাব সেন্টারে গত দুই মাস যাবত কোন ওষুধপত্র নেই। উপজেলার সাতটি কমিউনিটি সেন্টারে ও ঔষধ রয়েছে অপ্রতুল। অনেক ওষুধ না থাকলেও রয়েছে শুধু আয়রন ট্যাবলেট আর ক্রিমির ঔষধ।
এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলছে হ জ ব র ল’ র মধ্য দিয়ে।এসব কারণে উপজেলার প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা থেকে।
বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। টয়লেট-পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। রোগীদের খাবারসহ সেবারও কোন মান নেই। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নেই, প্যাথলজি থাকলেও সেখানে হাতেগোনা কয়েকটি পরীক্ষা ছাড়া আর কিছুই হয় না। ফলে রোগীদের ছুটতে হয় অন্যত্র।
সরেজমিনে আজ সােমবার সকাল ১১টার সময় পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, ৫০ শষ্যা বিশিষ্ট ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিদিন শত শত রোগী ডাক্তার না পেয়ে সরকারী চিকিৎসা সেবা থেকে বন্চিত হচ্ছেন। আগে হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ৫’শ থেকে ৭’শ জন রোগী আসতেন। এখন আসেন মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ জন। জরুরী বিভাগে আসেন প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন।
হাসপাতাল চলছে নানা অনিয়ম ও ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে। হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট শরিফুল ইসলাম জানান, আজ কাউন্টারে প্যারাসিটামল ও কোন এন্টিভাইটিক নেই। রয়েছে শুধু আয়রন ট্যাবলেট বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট কৃমির ওষুধ ও হিস্টাসিন।
তিনি জানান সোমবার থেকে সোমবার মোট ৭ দিনের জন্য এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্যারাসেটামল ট্যাবলেট প্রয়োজন হয় ১০ হাজার ,এন্টাসিড ট্যাবলেট প্রয়োজন হয় ১০ হাজার, হিস্টাসিন ট্যাবলেট প্রয়োজন হয় দশ হাজার, গ্যাসের ট্যাবলেট প্রয়োজন হয় ১০ হাজার। সেখানে দেওয়া হয় পাঁচ হাজার। গত একমাস যাবত কাউন্টারে ঔষধ খুবই কম।
হাসপাতালের টিকিট কাউন্টার ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান , প্রতিদিন প্রায় ২০০ জন নারী-পুরুষ ও শিশুর টিকেট দেওয়া হয়। হাসপাতালের স্টোর কিপার ভারপ্রাপ্ত আব্দুল মোমেন জানান, চলতি বছরে এখনো ঔষধ আমরা এখন ও পাইনি। তবে দু একদিনের মধ্যেই চলে আসবে। হাসপাতালে ঔষধ গুলো বগুড়া থেকে নিয়ে আসতে হয়।
এক্সরে রেডিওলজিস্ট জানান দুই মাস যাবত এক্সপ্রেস ফিল্ম সরবরাহ নেই। তাই রোগীদের কোন এক্সরে করা হয় না। প্রয়োজনে তারা বাহির থেকে করে নিয়ে আসে।
এন সি ডি কর্নার চালু থাকা সত্ত্বেও শুরু থেকে ডায়াবেটিক পরীক্ষায় টেকনোলজিস্ট ৬০ টাকা করে নেয়। ইসিজি টেকনোলজিস্ট ১২০ টাকার স্থলে ২০০ টাকা নেয়। এই হাসপাতালে প্রায় ৪৪ হাজার রেজিস্ট্রেশন ভুক্ত নারী-পুরুষ ডায়াবেটিস রোগীর বই রয়েছে। ডায়াবেটিক পরীক্ষার জন্য টাকা পয়সা নেওয়ার বিধান নেই। দীর্ঘদিন যাবত তারা অবৈধভাবে ৬০ টাকা করে গ্রহণ করে আসছে। প্রতিমাসে একবার করে তাদেরকে ঔষধ দেওয়ার কথা থাকলেও গত দুই মাস যাব তারা ঠিকমতো ওষুধ পাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর কর্তব্যরত চিকিৎসক নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক ডাক্তার বলেন, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ছয়টি সাব সেন্টারে গত দুই মাস যাবত কোন ওষুধপত্র নেই। উপজেলার সাতটি কমিউনিটি সেন্টারে ও ঔষধ অপ্রতুল। কিন্তু কমিউনিটি সেন্টারে বিনা মূল্যে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা বা ৩০ ধরনের ওষুধ পাওয়া কথা আছে।
রায়টা নতুন পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক, মাধবপুর কমিউনিটি ক্লিনিক, মসলেমপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্লিনিক থেকে শুধুমাত্র পরামর্শ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রের্ফাড এবং নামকাওয়াস্ত্রে ওষুধ দেওয়া ছাড়া কোন কাজ নেই। জরুরী ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য গজ, ব্যান্ডেজের ব্যবস্থাও নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মিজানুর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
প্রিন্ট