ঢাকা , শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo বালিয়াকান্দিতে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবক নিহত Logo শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা: হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড, খালাস ৩ Logo সংযুক্ত আরব আমিরাতে আ.লীগ নেতাদের সম্পদের পাহাড়, টাকা ফেরত দিতে ইতিবাচক সাড়া Logo ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় পাঠাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র Logo ছাড়া পেয়ে সাংবাদিকদের যা বললেন উপদেষ্টার মাথায় বোতল ছুড়ে মারা সেই শিক্ষার্থী Logo গোমস্তাপুরে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু Logo সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক ‌ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ Logo কিশোর গ্যাংদের কোপে দুই কিশোর নিহতের ঘটনার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল Logo ৪০ রোহিঙ্গাকে সমুদ্রে ফেলে দিয়েছে ভারত! Logo মঙ্গলকোট থানার লাখুড়িয়ায় শান্তির খোঁজে বসছে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

তানোরে ফসলী জমি হ্রাস খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা

আলিফ হোসেনঃ

 

রাজশাহীর তানোরের অর্থনীতি প্রায় সম্পুর্ণ কৃষি নির্ভর। তবে নির্বিচারে ফসলি জমি নষ্টের কারণে খাদ্য উদ্বৃত্ত উপজেলায় খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রভাবশালী ভুমিগ্রাসী চক্রের কৌশলের কাছে পরাস্থ হয়ে কৃষি জমির মালিকেরা অনেকটা বাধ্য হয়ে তাদের আবাদি জমিতে পুকুর খনন করতে দিচ্ছে।এছাড়াও কল-কারখানা ও বাড়িঘর নির্মানে নস্ট হচ্ছে একেরর পর একর তিন ফসলী জমি। প্রভাবশালীরা প্রথমে বিস্তীর্ণ ফসলি জমির মধ্যে অল্প জমি বাছাই করে সেখানে কৌশলে পুকুর করা শুরু করে। এর পর ওই পুকুরের কারণে আশপাশের জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন ওই সব জরি মালিকেরা ফসল উৎপাদনে লোকশানে পড়ে।এতে তারা তাদের আবাদি জমি প্রভাবশালী ওই পুকুর খননকারীকে লীজ দিয়ে দিতে বাধ্য হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুকুর খননকারী বলেন, প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিকসহ সকলকে ম্যানেজ করতে বিঘাপ্রতি ৩০ হাজার টাকা খরচ করলেই অনায়াসে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা যায়।

.

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্যে জানা গেছে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে রাজশাহীতে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল এক লাখ ৯১ হাজার ৭৮০ হেক্টর। ২০২৪ সালে আবাদযোগ্য জমি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৭৫৮ হেক্টর। অর্থাৎ ১৭ বছরে রাজশাহী জেলায় আবাদযোগ্য জমি কমেছে ৩৬ হাজার ২২ হেক্টর। ২০২৫ সালে এসে সেটি ৪০ হাজার হেক্টর হয়েছে। তবে এটি খাতা কলমে বাস্তবে এর দ্বিগুন পরিমাণ কৃষি জমি কমেছে।

.

স্থানীয়রা জানান,তানোরে বিগত ১০ বছরে কমেছে প্রায় ৬ হাজার বিঘা কৃষি জমিতে পুকুর খনন হয়েছে এবং কলকারখানা, হিমাগার ও আবাসিক ভবনের কারণে আরো বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি নষ্ট হয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের ভাষ্য, শিল্পায়ন হোক সেটা তারাও চাই, তবে ভাতের থালায় লাথি মেরে নয়। অর্থাৎ ফসলি জমি নস্ট করে নয়, পতিত বা এক ফসলি জমিতে করা হোক। সরকার প্রধানের নির্দেশ ফসলী জমি নষ্ট করে কোনো কিছুই করা যাবে না। কিন্ত্ত তানোরে প্রশাসনের রহস্যজনক ভুমিকায় ফসলি জমি নষ্টের হিড়িক পড়েছে।

.

স্থানীয় ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, উপজেলায় বিগত ১০-১৫ বছরে কমপক্ষে এক হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু জমির শ্রেণী পরিবর্তন না হওয়ায় কৃষি জমির খাজনা নিতে হচ্ছে। এতে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ কৃষি জমি প্রতি শতকে খাজনা মাত্র ২ টাকা এবং পুকুরের প্রতি শতকে খাজনা ৬০ টাকা। তিনি বলেন, প্রশাসন ও মিডিয়া ম্যানেজ করেই কৃষি জমিতে এসব অবৈধ পুকুর খনন করা হচ্ছে।

.

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, কৃষি জমিতে পুকুর প্রতিরোধ করা উপজেলা প্রশাসনের কাজ। এবিষয়ে তানোর ভূমি অফিসের কর্মকর্তা (তহসিলদার) জানান, জমির শ্রেণী পরিবর্তন না হলে কিছুই করনীয় নাই। কৃষি জমিতে পুকুর হলেও শ্রেণী পরিবর্তন না হওয়ায় কৃষি জমির খাজনা নিতে হয়। এক শতকে ৫৮ টাকা গচ্ছা। তবে কর্তৃপক্ষ কে এসব বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে, নতুন ভাবে রেকর্ড না হওয়া পর্যন্ত এনিয়মেই খাজনা আদায় হবে বলে মনে হচ্ছে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

বালিয়াকান্দিতে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবক নিহত

error: Content is protected !!

তানোরে ফসলী জমি হ্রাস খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা

আপডেট টাইম : ১১:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
আলিফ হোসেন, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি :

আলিফ হোসেনঃ

 

রাজশাহীর তানোরের অর্থনীতি প্রায় সম্পুর্ণ কৃষি নির্ভর। তবে নির্বিচারে ফসলি জমি নষ্টের কারণে খাদ্য উদ্বৃত্ত উপজেলায় খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রভাবশালী ভুমিগ্রাসী চক্রের কৌশলের কাছে পরাস্থ হয়ে কৃষি জমির মালিকেরা অনেকটা বাধ্য হয়ে তাদের আবাদি জমিতে পুকুর খনন করতে দিচ্ছে।এছাড়াও কল-কারখানা ও বাড়িঘর নির্মানে নস্ট হচ্ছে একেরর পর একর তিন ফসলী জমি। প্রভাবশালীরা প্রথমে বিস্তীর্ণ ফসলি জমির মধ্যে অল্প জমি বাছাই করে সেখানে কৌশলে পুকুর করা শুরু করে। এর পর ওই পুকুরের কারণে আশপাশের জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন ওই সব জরি মালিকেরা ফসল উৎপাদনে লোকশানে পড়ে।এতে তারা তাদের আবাদি জমি প্রভাবশালী ওই পুকুর খননকারীকে লীজ দিয়ে দিতে বাধ্য হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুকুর খননকারী বলেন, প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিকসহ সকলকে ম্যানেজ করতে বিঘাপ্রতি ৩০ হাজার টাকা খরচ করলেই অনায়াসে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা যায়।

.

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্যে জানা গেছে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে রাজশাহীতে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল এক লাখ ৯১ হাজার ৭৮০ হেক্টর। ২০২৪ সালে আবাদযোগ্য জমি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৭৫৮ হেক্টর। অর্থাৎ ১৭ বছরে রাজশাহী জেলায় আবাদযোগ্য জমি কমেছে ৩৬ হাজার ২২ হেক্টর। ২০২৫ সালে এসে সেটি ৪০ হাজার হেক্টর হয়েছে। তবে এটি খাতা কলমে বাস্তবে এর দ্বিগুন পরিমাণ কৃষি জমি কমেছে।

.

স্থানীয়রা জানান,তানোরে বিগত ১০ বছরে কমেছে প্রায় ৬ হাজার বিঘা কৃষি জমিতে পুকুর খনন হয়েছে এবং কলকারখানা, হিমাগার ও আবাসিক ভবনের কারণে আরো বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি নষ্ট হয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের ভাষ্য, শিল্পায়ন হোক সেটা তারাও চাই, তবে ভাতের থালায় লাথি মেরে নয়। অর্থাৎ ফসলি জমি নস্ট করে নয়, পতিত বা এক ফসলি জমিতে করা হোক। সরকার প্রধানের নির্দেশ ফসলী জমি নষ্ট করে কোনো কিছুই করা যাবে না। কিন্ত্ত তানোরে প্রশাসনের রহস্যজনক ভুমিকায় ফসলি জমি নষ্টের হিড়িক পড়েছে।

.

স্থানীয় ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, উপজেলায় বিগত ১০-১৫ বছরে কমপক্ষে এক হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু জমির শ্রেণী পরিবর্তন না হওয়ায় কৃষি জমির খাজনা নিতে হচ্ছে। এতে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ কৃষি জমি প্রতি শতকে খাজনা মাত্র ২ টাকা এবং পুকুরের প্রতি শতকে খাজনা ৬০ টাকা। তিনি বলেন, প্রশাসন ও মিডিয়া ম্যানেজ করেই কৃষি জমিতে এসব অবৈধ পুকুর খনন করা হচ্ছে।

.

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, কৃষি জমিতে পুকুর প্রতিরোধ করা উপজেলা প্রশাসনের কাজ। এবিষয়ে তানোর ভূমি অফিসের কর্মকর্তা (তহসিলদার) জানান, জমির শ্রেণী পরিবর্তন না হলে কিছুই করনীয় নাই। কৃষি জমিতে পুকুর হলেও শ্রেণী পরিবর্তন না হওয়ায় কৃষি জমির খাজনা নিতে হয়। এক শতকে ৫৮ টাকা গচ্ছা। তবে কর্তৃপক্ষ কে এসব বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে, নতুন ভাবে রেকর্ড না হওয়া পর্যন্ত এনিয়মেই খাজনা আদায় হবে বলে মনে হচ্ছে।


প্রিন্ট